বৃষ্টিতে স্বস্তি মিললেও, দুর্ভোগে নগর জীবন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দুপুর থেকে শুরু হওয়া হালকা বৃষ্টিতে মৃদু স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। গত দুই দিন ধরে নগরীতে চলছিল মাঝারি মাত্রার তাপদাহ। প্রচণ্ড গরম আর হাঁসফাঁস করা আবহাওয়ার মধ্যে আজকের এই বৃষ্টি যেন নগরবাসীর জন্য প্রকৃতির এক শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। একদিকে এই বৃষ্টি যেমন গরম থেকে নগরবাসীকে স্বস্তি এনে দিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, টানা রোদের পর হঠাৎ করে নামা মেঘলা আকাশ আর এক পশলা বৃষ্টি অনেকের মন ভালো করে দিয়েছে। আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হওয়ায় রাস্তাঘাটে বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। বিশেষ করে পথচারী ও ছোট দোকানিদের মুখে হাসি ফুটেছে। চায়ের দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে চাষাঢ়া, দেওভোগ, খানপুর, মন্ডলপাড়া এবং বঙ্গবন্ধু সড়ক এলাকায় — পানি জমে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের চলমান উন্নয়নকাজের জন্য খোলা ড্রেন ও অসমাপ্ত রাস্তা এই বৃষ্টিতে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির পানি ও ড্রেনের পানি মিশে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পথচারীরা জামাকাপড় নোংরা করে, কাদা-পানিতে ভিজে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাস্তা-ঘাটে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। পিক আওয়ারে অফিসগামী মানুষ ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তিতে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীও তাদের পরীক্ষা ও ক্লাসে দেরিতে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, “বৃষ্টি আসাতে গরম কমেছে এটা ভালো লাগছে, কিন্তু রাস্তা যা অবস্থা, বাইরে বের হলেই কাদা আর পানি। একটা সমস্যার বদলে আরেক সমস্যা।”
জলাবদ্ধতার কারণে নারায়ণগঞ্জের রাস্তায় ভয়াবহ যানজট দেখা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকছে। এর ফলে কর্মজীবী মানুষ তাদের কর্মস্থলে দেরিতে পৌঁছাচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে সমস্যা হচ্ছে এবং সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। অ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটকে থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সামান্য বৃষ্টিতেই নারায়ণগঞ্জের এই অবস্থা হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ন, পুরনো ও অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং যত্রতত্র নির্মাণ কাজের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন মাঝে মাঝে লোক দেখানো ড্রেন পরিষ্কার করলেও তা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়।
অনেকের মতে, এই বৃষ্টি একদিকে যেমন প্রকৃতিকে সজীব করে তুলেছে এবং মানুষের মধ্যে স্বস্তি এনেছে, তেমনি অন্যদিকে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সেই স্বস্তি মুহূর্তেই দুঃখে পরিণত হচ্ছে।
স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারায়ণগঞ্জের জলাবদ্ধতা একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা এবং এর সমাধানে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন। অবিলম্বে আধুনিক ও কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমেই এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বৃষ্টির কারণে সাময়িক স্বস্তি পেলেও, জলাবদ্ধতা ও যানজটের কারণে নারায়ণগঞ্জের মানুষ চরম ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। তারা আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং নগরবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করবে।