বীরমুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমানের নামে না.গঞ্জে প্রথম স্থাপনা নম পার্ক
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ হলো শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে গ্রাম অঞ্চল থাকা সত্বেও আধুনিকায়নে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য সংস্কৃতি। লোক-সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিনোদন মাধ্যম হলো সার্কাস। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিলো এটি। সুস্থ ধারার বিনোদন হিসেবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপভোগ্য এ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম এক সুসম্পর্ক। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ জীবিকার তাগিদে বাণিজ্যিক হয়ে উঠতে গিয়ে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাম বাংলার লোক-সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিনোদন থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় এক ব্যাতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক)।
২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক) উদ্বোধন করা হয়। দীর্ঘদিন পার্কটি চলায় নারায়ণগঞ্জে বিনোদন প্রেমিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ছোট-বড় ও শিশুদের জন্য পার্কে ছিলো বেশ সুসজ্জিত খালি সুন্দর সময় কাটানোর মতো জায়গা। নাইন ডি মিনি থিয়েটার হল, সাথে কিছু দোকান যেখানে ছিলো ফাস্ট-ফুড, বিভিন্ন খেলনার দোকান ও শারমিন সিলেক্টস বুটিক হাউজ, ‘স্প্ল্যাশ প্যাড’ যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও হয় নি। বাচ্চাদের আকর্ষিত রেল,‘স্প্ল্যাশ প্যাড’ এর পাশে ৬০ফুট উচ্চতা জায়েন্ট হুইল, শিশু কিশোরদের জন্য বিশাল ভাবে সেড নির্মান করা হয়। যার মধ্যে বিভিন্ন খেলার ব্যবস্থা ছিলো। এরমধ্যে আছে মেরি-গোরাউন্ড, ওয়াটার বোট, জেট কোস্টার, মিনি গেইন্ট হুইল, মিনি শান্তা মারিয়া, ফ্লাওয়ার কাপ, স্লিপার এবং বাম্বার কার। সব মিলেয়ে শৈল্পিক ছোয়া লক্ষ্য করা যায় এই নম পার্কে।
কিন্তু এসব কিছুই বন্ধ হয়ে যায় বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে। এতে করে পার্কে থাকা বিভিন্ন রাইডের মেশিন গুলো অকার্য হয়ে যায়। প্রকৃতির পরিবেশ কিছুটা ঠিক থাকলেও পার্কের সমস্ত কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যায়। এতে মানুষ নম পার্ক থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। তাই পার্কটি নতুনভাবে রূপ নিয়ে র্পূবের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে ও আকর্ষণীয় করে তুলতে, লোক-সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিনোদন মাধ্যম সার্কাস চালু করা হয়েছে। সুস্থ ধারার বিনোদন হিসেবে নারায়ণগঞ্জে শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বাঙালি সংস্কৃতির তুলে ধরতে এই সার্কসের যাত্রা শুরু করা হয়। পার্ক মুখি করতে র্যাফেল ড্রো’র আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পুরুস্কার দিয়ে উৎসাহিত করা হয়।
এদিকে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সার্কাসসহ শিশুদের রাইড শেয়ার চুক্তিভিত্তিক আয়োজন করে থাকেন কাজী শাহ-আলম কনক। মেলা ও নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে এসব আয়োজনের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করেন। কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন যাবত এই পেশায় আছেন তাঁরা। অস্তিত্ব হারাতে বসা নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক) কর্তৃপক্ষ তাদের এক মাসের চুক্তিতে নিয়ে আসে। প্রধান আকর্ষন ঐতিহ্যবাহী ‘সার্কাস’ থাকলেও এখানে শিশুদের জন্য নানান আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজককারী (ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট) কাজী শাহ-আলম কনক জানান, আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া অন্যতম বিনোদন, ‘সার্কাস’ এর আয়োজন করে থাকি। পাশাপাশি নৌকা রাইড, নাগরদোলাসহ নানান আয়োজন আছে আমাদের। এখানে পরিবার নিয়ে আসার মতো পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে প্রচারের জন্য র্যাফেল ড্রো এর আয়োজন করেছি আমরা। প্রতিদিন বিভিন্ন পুরুষ্কারের মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহিত করা হয়। শুধু পার্কে আসা মানুষই নয়, অন্যান্যরাও এই র্যাফেল ড্রোতে অংশগ্রহন করতে পারবে।
নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্কের কর্তৃপক্ষের বলেন, বিগত ৯বছর যাবত এই নম পার্ক প্রতিষ্ঠিত। ২০১৫ সালে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্দেশে প্রয়াত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাছিম ওসমানের স্বরণে একটি পার্ক করার পরিকল্পনা করা হয়। যখন নাছিম ওসমানের নামে কোন কিছুই ছিলো না, তখন একেএম শামীম ওসমান এমপি মহোদয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছিম ওসমানের নামে এই উদ্যোগ গ্রহন করেন। তখন এই উদ্যোগ দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘ ১৬ মাস সশরীরে খেটে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্কটি নির্মান করা হয়। বিগত ৯ বছরে এমন কোন কাজ এখানে করা হয়নি যেখানে এই পার্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছিম ওসমানের সম্মানহানী হবে কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
কর্তৃপক্ষ আরও জানান, ইদানিং কিছু পত্রিকা তাদের নিজেদের সার্থ হাসিলের জন্য, আমার সুনাম ক্ষুন্ন ও বিতর্ক করার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার করছে। যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। বর্তমানে পার্কটি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তাদের চুক্তিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে জুয়া, অশ্লিল নৃত্য, অসামাজিক কাজ, ধর্মের প্রতি আঘাত আসে এমন কাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজ পার্কের মধ্যে করা যাবে না। সেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট মাধ্যমে একটি চুক্তি করে ‘সার্কাস’, যেটা বাংলাদেশের ঐতিহ্য, আর এই ঐতিহ্য মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য ও পার্কটি মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে এই উদ্যোগ গ্রহন কর হয়। যেটাকে পুঁজি করে বিভিন্ন পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।
নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্কের কর্তৃপক্ষ জানান, নাসিম ওসমানের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান আছে। তাকে শ্রদ্ধার থেকে স্বরণ করেই মূলত পার্কটি আমরা করেছি। এখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছিম ওসমান কোনভাবে অসম্মানিত হবে কিংবা তার সম্মান ক্ষুন্ন হবে এমন কোন কাজ আমাদের পক্ষে করা সম্ভব না। বিগত ৯বছরে অনেক ক্ষতির মধ্যে থেকেও আমরা পার্কটি পরিচালনা করছি। কোনভাবে কোন অসামাজিক কাজের সাথে পার্কটি যুক্ত না। আমরা বলবো যারা মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন, যারা অসৎ উদ্দেশ্যে আমাকে বিতর্কি করা চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের অনুরোধ করবো মিথ্যা তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন। নয়তো আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।