বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেতে চায় না.গঞ্জের মুড়ি মামা
# ‘অস্বাস্থকর মুড়ির প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতে চাই’
# না.গঞ্জে ৩৫ রকমের মুড়ি নিয়ে গ্রিনেড ওয়াল্ড রেকর্ডে আবেদন
# বিশ্ব দরবারে যেতে চায় মুড়ি মামা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: মাত্র একজন বসতে পারে এমন একটি দোকান আর ৩০ এর বেশি রকমের মুড়ির আইটেম। চোখে স্বপ্ন একদিন এই দেশের অস্বাস্থকর তেলে তৈরি মুড়ির প্রেক্ষপট বদলে দেবেন। স্বপ্ন পূরনের এই পথ চলায়ে এসেছে নানা বাধা-বিপত্তি ও অপবাদ। তবুও একমাত্র সাথী হিসেবে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে পেরিয়ে এসেছেন ৪টি বছর। আর এই চার বছরের ‘মুড়ি মামা’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন সর্বত্র। আজ প্রায় ৩৫ ধরনের মুড়ির আইটেম নিয়ে গড়তে চাইছেন ওর্য়াল্ড রেকর্ড। কথা হচ্ছিলো জাহাঙ্গির আলমের হরফে ‘মুড়ি মামার’।
মুড়ি মামা হওয়ার আগে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বার্গার, চিকেন ও টিক্কা ফ্রাইসহ নানা রান্নার কাজ শিখেছেন তিনি। রান্নায় বাড়তি দক্ষতা লাভ করতে বেশ কিছু সময় পার করেছেন ঢাকার অভিযাত রেস্তরাগুলোতে। পরিশেষে সেই চাকরিকে বিদায় জানিয়ে হয়ে গেলেন মুড়ি মামা। রেজালা মুড়ি, চিকেন মুড়ি, শাহী মুড়ি, চিকেন কিমা মুড়িসহ ৩৫ ধরনের মুড়ির আইটেমের রেসিপির আবিষ্কারক তিনি নিজেই। এই মুড়ির দাম ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। ভিন্ন ধরনের এই মুড়িতে ক্রেতাদের সাড়া ও পাচ্ছেন ব্যাপক। ক্রেতাদের ভিড়ে সকাল ১০ টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন মুড়ি মামা। আশেপাশের স্কুল- কলেজ ও কোচিং সেন্টার ছুটি হলেই আড্ডা বাড়ে মুড়ি মামার দোকানে। শুধু শিক্ষার্থী নয় এই আড্ডায় হাতে মাটির পাত্রে বাহারি রকমের মুড়ি নিয়ে মেতে থাকেন অভিভাবকরাও।
মেয়েকে কোচিং সেন্টারে দিয়ে এসেছেন শাহানারা বেগম। অন্য অভিভাবক নিয়ে অবসর সময়টা পাড় করেন মুড়ি মামার দোকানে তিনি বলেন, অন্যান মুড়ি তারা যেভাবে বানায় সেটা কেউ দেখলে খেতে চাবে না। তবে এখানে মুড়িটা স্বাস্থকর পরিবেশে প্রস্তুত করা হয়। বাহিরের মুড়িট একটা বইয়ের কাগজে পরিবেশন করা হয়। কাগজের কালিটা আমাদের স্বাস্থের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু এখানে সেই জামেলা নেই। কারণ মুড়িটা মাটির পাত্রে পরিবেশন করা হয়। বাচ্চারা খুব পছন্দ করে আর যেহেতু স্বাস্থকর তাই আমিও না করি না।
১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আনজুম জানান, প্রতিদিন স্কুল ছুটি হওয়ার পর এখানে আসি। আমাদের ৮ জন ফ্রেন্ডের আড্ডা সবসময় এখানেই হয়। মুড়ি সবসময় ভালো লাগতো, আমাদের স্কুলের সামনে ও আশেপাশে ৩-৪ জন আসতো। ওনার থেকেই খেতাম কিন্তু পরে মুড়ি মামার দোকানে এ ফ্রেন্ডের সাথে আসি। এখানের মুড়িটা অনেক মজার। বিশেষ করে ভাইরাল মুড়িটার ভিতরে যে মুরগির মাংশ দেওয়া হয় সেটা খুব ভালো লাগে আমার। এই মুড়িতে বোনলেস চিকেনটা ব্যবহার করা যেটা খেতে অনেক মজা। তাই প্রায়ই এখানে আসা হয়।
আরেক শিক্ষার্থী সামিয়া জানান, আম্মুকে সাথে নিয়ে আসি এখানে, আমার ক্লাসের অনেকেই এখানে আসে। সাথে আম্মুর কিছু ফ্রেন্ডরাও এখানে মুড়ি থেকে আসেন। অন্যান্য মুড়িতে একটা তেনানো থাকে বা এক ধরনের গন্ধ গন্ধ লাগে। কিন্তু এখানের সবকিছু ফ্রেস পাই। অন্যান্য জায়গায় আমরা যে মুড়িটা খেয়ে থাকি সেখানে মুড়ির হাইজিনটা রাখা হয়না। কিন্তু এখানে মুড়ি মামা হাতের প্লাস্টিকের গ্লাভ ব্যবহার করেন, তার দোকানের রান্নার পরিবেশ ও খুব সুন্দর। তাছাড়া আমার তেল ছাড়া খাবার খেতে বলা হয়েছে। এখানে তেল ছাড়া মুড়িও পাওয়া যায় আর সেটাই আমার খুব পছন্দের।
মুড়ি মামা খ্যাত জাহাঙ্গির আলম লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ২০২০ সালের চাকরি ছেড়ে এই ব্যবসায় আসা। যখন চাকরি করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম যে চাকরিতে কিছু করা যাবে না আমার ব্যবসায় করতে হবে। যেহেতু আগে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাবার বানানোর কাজ করেছি সেহেতু আমার খাবার রান্না নিয়ে ধারনা ছিল। কিন্তু একটা ব্যবসা করতে হলে আমার আরো দক্ষতা প্রয়োজন ছিল, তাই ঢাকার বিভিন্ন অভিযাত রেস্তরাগুলোতে কাজ শিখেছে এবং চাকরি করেছি। আশপাশে দেখলাম যে মুড়ি খাবারটা আমাদের সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে। কিন্তু বাহিরে অস্বাস্থ্যকর তেল দিয়ে এটাকে যেভাবে বানানো হয়, সেটা দেখলে অনেকেই মুড়ি খেতে চাইবে না। তাই চিন্তা করলাম মুড়ি দিয়ে একটি নতুন কিছু করা যায় কিনা। অস্বাস্থ্যকর তেলের তৈরি মুড়ির প্রেক্ষাপট আমি পাল্টে দিতে চাই। এরপর মুড়ি মামার দোকানে খুললাম।
তিনি আরও বলেন, আমার বানানো মুড়ির মোট ৩৫টা আইটেম আছে প্রতিটা আইটেমে আমার নিজের আবিষ্কার করা। বিভিন্ন দামের বিভিন্ন ধরনের এই মুরগিগুলো মানুষ খুব বেশি পছন্দ। তবে এই ব্যবসায় আসার আগে পরিবার খুব বেশি একটি সাপোর্ট করেনি আমাকে। কারণ আমার পরিবার-পরিজন সবাই বলতো যে ‘এই দিন শেষে এখন তুমি মুড়িয়ালা হবা’ এমন একটা অপবাদ দিতো। বিগত চার বছর আমি আমার স্ত্রীকে সাথে পেয়েছি। উনি বাসায় বসে আমার বিভিন্ন উপকরণ রান্না করতে হলে সাহায্য করেন আর আমি এখানে এসেছি সেগুলোকে বিভিন্ন আইটেম বানিয়ে বিক্রি করি। প্রথমে কেউ সাপোর্ট করতো না কিন্তু ধীরে ধীরে যখন আমার ব্যবসাটা একটু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল তখন আশপাশের মানুষ মুড়িওয়ালা নয় মুড়ি মামা বলে ডাকা শুরু করেছে। এর আগে এমনও হয়েছিল যে বাসা ভাড়া নিতে গেলেও মুড়িয়ালার কাছে বাসা ভাড়া দিতে চাইনি অনেক বাড়িওয়ালা। এখন একটা ছোট দোকান আছে কিন্তু এটাকেই বড় করার স্বপ্ন আমার। সারা দেশের প্রতিটি জেলায় আমার শাখা থাকবে।