বন্দরে মৃত্যু যন্ত্রণা ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ প্রকল্পের আওতায় আয়াত এডুকেশনের আয়োজনে মৃত্যু, মৃত্যু যন্ত্রণা ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৪ মার্চ) সকাল ১১টায় বন্দর উপজেলার উত্তর নোয়াদ্দা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রাঙ্গণে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিউনিটি ক্লিনিকের কোষাধ্যক্ষ হাজী মো. তমিজ উদ্দিন’র সভাপতিত্বে ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মঞ্জুর মুর্শেদ’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. ফয়সাল কবীর।
সভায় মৃত্যু, মৃত্যু যন্ত্রণা বিষয়ক গুরুত্ব ও মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আয়াত এডুকেশন প্রকল্প সমন্বয়কারী সুমিত বণিক। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের সমাজে সাধারণত মৃত্যু এবং মৃত্যু যন্ত্রণা সম্পর্কে কথা বলা অস্বস্তিকর একটি বিষয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে পরিবার, কমিউনিটির মানুষ, এবং আমাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে মৃত্যু, মৃত্যু যন্ত্রণা, এবং মৃত্যু পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা আমাদের মৃত্যু বা প্রিয়জনের মৃত্যুতে নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে থাকে। তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে সকলের অংশগ্রহণ দরকার। মৃত্যু সম্পর্কে ভাবা বা কথা বলা অনেকক্ষেত্রে ভীতিকর মনে হতে পারে, তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, এটি মানব জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। অবশ্য ভালো বা খারাপ মৃত্যু নিয়ে ধারণা ব্যক্তিভেদে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে আমরা কমিউনিটির মানুষ হিসেবে একজন প্যালিয়েটিভ কেয়ারের রোগী বা মৃত্যু পথযাত্রী যেকোন মানুষের জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারি। তাই আমাদের সকলের উচিত, তাদের পাশে থাকা এবং তাদের এই কঠিন সময়ে একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।’
সভার সভাপতি হাজী মো. তমিজ উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজকের আগে আমি মৃত্যু নিয়ে এমন ধরণের সভার আয়োজন দেখিনি। এটি আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। আমার কাছে প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে কাজ করাকে সমাজসেবামূলক কাজ মনে করি। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এসব বিষয় নিয়ে অবগত না থাকলেও, উন্নত দেশে শিশু ও বয়স্করা প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে অনেক সচেতন।’
সভার সঞ্চালক মঞ্জুর মুর্শেদ বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে একাধিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি। আমার কাছে মনে হয়ে এ বিষয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে আরো বেশি সচেতন করা প্রয়োজন। আজকের সভায় সাধারণ মানুষ হিসেবে মৃত্যু বিষয়ে আপনারা যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে কথা বলেছেন, নিজেদের ভাবনাগুলো ব্যক্ত করেছেন, সেটা দেখে আমিও অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি মনে করি, আমরা যদি সমাজে মৃত্যু নিয়ে এভাবে খোলামেলা নিজেদের ভাবনাগুলো শেয়ার করতে পারি, তাহলে এ নিয়ে আমাদের ভয়-ভীতিগুলো দূর হয়ে যাবে, সেই সাথে অন্য অসহায় মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণাকে প্রশমিত করতে সহায়তা করতে পারবো।
প্রধান অতিথি মো. ফয়সাল কবীর তার বক্তব্যে বলেন, ‘সমাজ সেবা বিভাগ নিরাময় অযোগ্য রোগীদের কল্যাণে কাজ করছে। আপনারা মমতাময় প্রকল্পের অধীনে যারা সেচ্ছাসেবক আছেন, তারা দুঃস্থ মানুষদেরকে সমাজ সেবা বিভাগের সেবা পেতে সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে।’
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মাঝে আরও বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক পান্না আক্তার, সংবাদকর্মী ইউসুফ আলী প্রধান, কমিউনিটি মবিলাইজার অনন্যা রহমান প্রমুখ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও যুব স্বেচ্ছাসেবকসহবৃন্দ। সভায় আয়াত এডুকেশনে পক্ষ থেকে এ্যাসিস্ট্যান্ট ফিল্ড অফিসার সারোয়ার আলম, কমিউনিটি মবিলাইজার ফাহিম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।