রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫
Led01ফতুল্লা

ফতুল্লায় হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে শিশুকে নির্যাতন, উদ্ধার করলো পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: চার বছর বয়স শিশুর। সবে পৃথিবীটাকে চেনা শুরু করেছে। কিন্তু এই ছোট্ট জীবনের পুরোটাই যেন এক অন্ধকার, বন্দী দুঃস্বপ্ন! না আছে মায়ের আদর, না আছে বাবার স্নেহ। আছে শুধু রুগ্ন শরীর, অভুক্ত পেটে যন্ত্রণা আর পিঠের ওপর পাষণ্ড পিতার অমানুষিক আঘাতের চিহ্ন। কাশিপুরের শান্তিনগর আজ স্তব্ধ হয়ে গেছে এই অমানবিক নির্যাতনের গল্প শুনে। দীর্ঘদিনের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার হোসেন নামের এই শিশুটিকে শনিবার রাতে তার বাবা সোহেলের তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু ততক্ষণে নির্যাতনের দাগ ছোট্ট শরীরটিকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে। এই ঘটনায় পলাতক রয়েছে মাদকাসক্ত ও বখাটে বাবা সোহেল।

স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, এই লোমহর্ষক নির্যাতনের দৃশ্য ছিল রীতিমতো গা শিউরে ওঠার মতো। শিশুটির বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছিল প্রায় দুই-তিন বছর আগে। মায়ের কাছে থাকলেও কয়েক মাস পর জোরপূর্বক বাবা নিয়ে আসেন শিশুটিকে। সেই দিন থেকেই শুরু হয় ছোট্ট হোসেনের ওপর বিভীষিকা।

পিতার নাম ছিল সোহেল, কিন্তু কর্ম ছিল হিংস্রের মতো! স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন, সোহেল একজন মাদকাসক্ত বখাটে। যখনই সে বাসা থেকে বের হতো, তখনই শিশুটিকে ঘরে তালাবদ্ধ করে চলে যেত। দিনের পর দিন শিশুটিকে কাটাতে হতো অনাহারে। পেটের ক্ষুধায় কান্না করলে তার জন্য অপেক্ষা করত আরও ভয়াবহ শাস্তি।

স্থানীয়দের ভাষ্য, “পেটানো হতো হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে। সেই নির্যাতনের চিহ্ন শরীরের একাধিক স্থানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”

একজন স্থানীয় যুবক ও ব্যবসায়ী শাওন জানান, দুই-তিন মাস আগে তিনি প্রথম জানতে পারেন যে বাবা সারাদিন শিশুটিকে তালাবদ্ধ করে বাইরে থাকেন। শুধু মাঝে মাঝে জুস বা চিপস কিনে দিতেন, কিন্তু অধিকাংশ সময় চলত মারধর। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বাবা প্রায়শই তার হাত-পা বেঁধে তালা মেরে যেতেন!

গত দুদিন আগে স্থানীয় এক নারী শিশুটির রুগ্নাবস্থা দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করলে সেই নারীটিকেও মারধর করে পাষণ্ড পিতা। এই ঘটনার পরই শাওন স্থানীয় একটি সামাজিক সংস্থার পরামর্শে ফতুল্লা মডেল থানাকে বিষয়টি জানান।

শনিবার বিকেলে অভিযোগ পাওয়ার পর, ফতুল্লা মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) শরিফুল ইসলাম দ্রুত ঘটনার সত্যতা যাচাই করেন। রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কাশিপুর শান্তিনগর কদম আলী স্কুলের পার্শ্ববর্তী সোহেলের বাসার তালা ভেঙে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, “কতটা পাষণ্ড হলে একজন পিতা শিশু সন্তানের সাথে এমন করতে পারেন, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। শিশুটির শরীরের একাধিক স্থানে ক্ষতের চিহ্ন। প্রথমে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।” তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই অভিযুক্ত পাষণ্ড পিতা সোহেল পালিয়ে যায়।

উদ্ধারের পরপরই শিশু হোসেনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা এসে শিশুটিকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান।

জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী মোসাম্মৎ তাছলিমা আক্তার জানান, শিশুটি বর্তমানে অত্যন্ত অসুস্থ, পুষ্টিহীনতা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। তার চিকিৎসা এখন সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসা শেষে তার বয়স অনুযায়ী সরকারি ছোট মনি নিবাসে রাখা হবে।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলিমা নাসরিন জানান, তিনি ঘটনাটি জানার পরপরই ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। তিনি নিশ্চিত করেন, জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর শিশুটির সুচিকিৎসাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।

পাষণ্ড পিতার অমানবিকতার শিকার এই ছোট্ট শিশুটির সুস্থতা কামনা করছে পুরো নারায়ণগঞ্জবাসী। তারা দাবি জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া পাষণ্ড সোহেলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

RSS
Follow by Email