মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
Led02অর্থনীতিজেলাজুড়েফতুল্লারাজনীতি

ফতুল্লায় বিসিকে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

# দোকানের ক্যাশ থেকে টাকা নিয়ে যায়: দোকানদার
# দুপুরের খাবার খেতে আসে, তখনই রাস্তায় কোপায়: স্থানীয়রা
# তাদের সাথে কথা বলতে চাই, কিন্তু তারা অতর্কিত হামলা চালায়: রাসেল
# আমরা তিন গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে ওদের ধাওয়া দেই: জাহাঙ্গীর

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ফতুল্লায় শিল্পনগরী বিসিক এলাকায় গার্মেন্টসের ওয়েস্টেজ (ঝুট) ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিসিক ২ নম্বর গেইটে ডান পাশের ৩ নম্বার গলিতে ‘মার্টিন নিট ওয়্যার, বিশাল নিট ওয়্যার’ এর সামনে ওই ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের প্রায় ১০-১২জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়।

আহতরা হলেন, শ্রমিক রিয়াজ (১৮), দোকানদার শাহাদাত (৩০), শ্রমিক রাকিব (১৮), সিয়াম (২৭) , শাওন। আহত চিকিৎসাধীন থাকায় তাদের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিসিক ২ নম্বর গেইটে ডান পাশের ৩ নম্বার গলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাসেল মাহমুদের লোকজন গার্মেন্টস থেকে ঝুট নিতে আসে। তখন ফতুল্লা থানা বিএনপি সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন তাদের বাধা দেয়। তারপর তাদের উভয়ের মধ্যে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দু’গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জরিয়ে পড়ে। এরপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় দুই গ্রুপের মধ্যে। এতে উভয়পক্ষের দুইজন গুরুত্বসহ আহত হয়েছে প্রায় ১২ জন। এসময় কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে বিকাল ৪টায় খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলে যায়। তবে এলাকা জুড়ে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

ভাংচুর ও লুটের শিকার হওয়া দোকানদার রবিউল ও আব্দুল জানায়, হঠাৎ কিছু পোলাপান লাঠি, রামদা,চাইনিজ কুড়াল নিয়ে আমার দোকানের সামনে আসে। এসেই ভাংচুর শুরু করে, পরে আমার দোকানের ক্যাশ থেকে টাকা নিয়ে যায়। এছাড়া আমার দোকানের ফ্রিজ খুলে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। দোকানের সাটার গুলো কুপিয়ে রেখে যায়। আমাদের মারধর করতে আসছিলো, আমরা আগেই দোকান রেখে পালিয়ে যাই।

স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী লিজা আক্তার জানায়, বরিশাইল্লা জাহাঙ্গীর, ঢালাই সিরাজ, ইকবাল ও বোরহান লোকজন নিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। ভেতরে ঢুকে লুটপাট করার চেষ্টা করেছে, আমি সাথে সাথে গেইট তালা দিয়ে ফেলেছি। ভেতরে ঢুকতে না পেরে আমাদের বাড়ির গেইট ও আসে পাশের দোকানপাট কুপিয়েছে। তিনজনকে মারধর করেছে, এরমধ্যে একজনকে কুপিয়েছে। কোপানোর পরে আমরা ওই ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। কিছু সময় পরে আবারও হামলাকারীরা আসে, এ সময় আরও লোকজনকে পিটিয়েছে। যারে কুপিয়েছে সে বিসিক এলাকার একজন শ্রমিক, সে মূলত দুপুরের খাবার খেতে বাসায় আসে, তখনই তাকে রাস্তায় কোপায় হামলাকারীরা। আমরা চাই এই ঘটনার তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং যে লুটপাট হয়েছে সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পূরণ করা হোক।

স্বেচ্ছাসেবক দল ফতুল্লা থানা কমিটির সদস্য সচিব নেতা রাসেল মাহমুদ জানায়, আমরা দীর্ঘদিন যাবত বিসিকে বিভিন্ন গার্মেন্টস মালিকদের কাছ থেকে গার্মেন্টসের ওয়েস্টেজ (ঝুট) নিয়ে ব্যবসা করি। এছাড়া বিসিকে মালিকদের ব্যবসায়ের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্ট করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছি। কিন্তু আজকে সকালে জাহাঙ্গীর, ঢালাই সিরাজ, ইকবাল ও বোরহান তার লোকজন নিয়ে আমাদের জুট নিতে বাধা দেয়। আমরা তাদের সাথে কথা বলতে চাই, কিন্তু তারা আগ্নেঅস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের বেশ কিছু লোকজনকে কুপিয়ে জখম করে। আশে পাশে কিছু দোকানপাট ছিলো, সেগুতে হামলা ও লুটপাট করে। আমাদের মধ্যে আহতদের নিয়ে হাসপাতালে প্রেরণ করি। আমরা এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এত বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ফতুল্লা থানা বিএনপি সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকালে আমাদের দুইটা ছেলে একটা নিটিং এর মাল নামাতে যায়। তখন রাসেলের লোকজন বাধা দিয়ে জিজ্ঞাসা করে কারা পাঠাইছে তোদের। তারা বলে যে, সিরাজ মামা ও জাহাঙ্গীর মামা আমাদের পাঠাইছে। তখন ওরা (রাসেলের লোকজন) সিরাজ ও আমাকে গালাগালি করতে থাকে। আমাদের ছেলেরা বলে যে গালাগালি করবেন না। তখন ওদের প্রচুর মারে। এরপর আমরা মুরুব্বীরা যাই সেখানে। আমরা জিজ্ঞাসা করতে না করতেই আমাদের উপর হামলা করে। পরে আমরা ওদের ধাওয়া দেই। এতোদিন আওয়ামী লীগের লোকজন খাইছে, এখন তো আমরা এটার দাবীদার। কিন্তু রাসেল এটা মানতে রাজি না। ওর কথা হলো ২নং গলিতে কাউকে ঢুকতে দিবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আসলে বিভিন্ন ঝুট সন্ত্রসী দেখেছি, আপনারাও তাই করছেন কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোন সংঘর্ষ চাইনা, আমরা কাউকে জোর করে ঝুট নিতে চাইনা। আমরা মালিকদের বুঝিয়েছি, দলীয় পরিচয় পরে, আমরা এই এলাকার যেহেতু, আপনারা আমাদের কিছু দেন।

RSS
Follow by Email