প্রতিষ্ঠানে সুন্দর পরিবেশ গড়তে শ্রমিক-স্থানীয়দের সাথে সুসর্ম্পক গড়তে হবে: হাতেম
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিকেএমইএ‘র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, ব্যাংক ইন্টারেস্টের কারণে আমাদের ক্যাপাসিটির বাইরে অনেক কিছু চলে যাচ্ছে। আগে ছিল, পর পর ছয়টা কিস্তিতে কেউ ব্যর্থ হলে সে ঋণখেলাপি হবে। বাংলাদেশ থেকে একটি সার্কুলার দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে ৩টা কিস্তিতে ব্যর্থ হলে ঋণখেলাপি হবে। আগামী মার্চ থেকে একটা কিস্তি ব্যর্থ হলেই ঋণখেলাপি হবে। বর্তমান যে অবস্থা, আমাদের অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যবসা-বাণিজ্যের যে পরিস্থিতি তাতে নিঃসন্দেহে বলতে পারি, যেসকল ব্যবসায়ী ঋণ নিয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশ ঋণখেলাপি হবেন আগামী মার্চ আসার আগে। আমার একটা প্রশ্ন, বাংলাদেশ ব্যাংক কার স্বার্থে এমন একটি পলিসি দিলেন। এ পলিসি দিয়ে ব্যবসায়ীদের গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি পোশাক-শিল্প মালিক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথ বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নারায়ণগঞ্জে যারা ব্যবসা করছে তারা অধিকাংশ হচ্ছেন স্থানীয়। স্থানীয়দের সাথে এ ব্যবসায়ীদের একটা সুসম্পর্ক আছে। বিসিক শিল্পাঞ্চলে পাঁচশত প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। আশেপাশের এরিয়ার মানুষদের প্রতিদিনের যে সমস্যা, তা আমি নিজেই সমাধানের চেষ্টা করি। এতে সেখানকার বাসিন্দাদের সাথে আমার সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ যারা নারায়ণগঞ্জে রয়েছেন, তাদের সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক। শ্রমিকনেতাদের সাথে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক গড়তে জেলা প্রশাসকের ভূমিকাও রয়েছে। ৫ তারিখের সরকার পতনের পর যখন, অরাজকতা চলছে তখনও ১০টার পর ডিসি সাহেব শ্রমিক নেতাদের ডেকে, আমাদের ডাক দিয়েছেন। ডিসি সাহেব ফোন করে বললেন, আমি শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বসেছি। আমিও সাথে সাথে ছুটে গেছি। আসলে শ্রমিকদের সাথে কারখানার মালিকদের সুসম্পর্ক তৈরী করতে হবে। স্থানীয়দের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে হবে। এতে করে কারখানায় সুন্দর পরিবেশে কাজ করা যায়। সেই সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ইনভল্ভ করতে হবে। কারণ এলাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের স্বার্থ রয়েছে। সবার স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করাটা জরুরি। এটা যেখানে করা সম্ভব হয় না, সেখানে সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, জন্ম থেকেই আমি একটি পত্রিকার পাঠক। ইদানিং এর প্রথম পাতায় দেখলাম, পোশাক শিল্পের মালিকরা বদলাবেন কবে। যারা এমনটি লিখেছেন, আপনারা পোশাক শিল্প সেক্টরের ভূমিকায় আসেন। আমাদের কিছু শিভার ব্যবস্থা করে দেন। প্রায় ৩৭ বছর ধরে পোশাক শিল্পের সেক্টরে কাজ করে যদি কিছু শিখতে পারি নি, আমার শিক্ষকের অভাব আছে। অথবা আপনারা আদর্শ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তৈরী করে পরিচালনা করেন। এরপর আঙ্গুল দিয়ে দেখান, এই সেক্টর ঠিক এভাবে চালাতে হয়। আপনারা এ কথা বলার আগে এই কাজটা একটু করেন। তাহলে আমরা শিখতে পারবো।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমাদের মাঝে কোন খারাপ মালিক বা অসৎ মালিক নেই তা আমরা বলবো না। কিছু আছে, সেটা খুবই কম। ফিল্ড লেভেলে থাকি বলে আমি মালিকদের আর্তনাদ দেখি। পত্রিকায় বলা হয়েছে, শ্রমিকরা যখন গার্মেন্ট মালিকদের বিত্ত বৈভব দেখেন তখন ঠিক থাকতে পারেন না। হ্যা, কিছু মানুষ অবশ্যই আছেন যাদের বিত্ত বৈভব আছে। কারা, বড়জোড় ১০ শতাংশ ব্যবসায়ী এমন। বাকি ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ী যে, দিন আনে দিন খায় সেটা কেউ দেখেন। সেটা দেখার চোখ উনাদের নাই। তারা শুধু ঐ বিত্ত বৈভব যাদের আছে, তাদেরকেই দেখেন। ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন এমন অনেকেই আছেন। অনেকেই আছেন, যাদের বড় বড় কারখানা ছিল। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে হারিয়েছেন সব কিছু। তাদেরকে আমার কেউ দেখি না। দাবি শুধু শ্রমিকদের দেখা হয়। ইন্ডাস্টিতে মালিকদের কত সমস্যা, কি দাবি সেটা কেউ শুনেন ন। একটি দাবি যখন প্রয়োজন মিট করা, তা ছয় মাস পর যেয়ে হচ্ছে। ততক্ষণে ঐ ফ্যাক্টরি শেষ।
তিনি বলেন, আশুলিয়াতে এমন ঘটনা ঘটেছে যে, এক শ্রমিকের ফোনে কল আসলো, কথা শেষ হবার পর কারখানায় সবার কাজ বন্ধ। শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে নেমে আসছেন। কারা কল করেছিল, গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য আছে। আমাদের এসকল বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। আশুলিয়াতে যারা কারখানায় নিয়োজিত আছেন, তারা সাধারণত আশেপাশেই থাকেন। সেখানে এরিয়ার তুলনায়, প্রতিষ্ঠান সংখ্যা বেশি। শ্রমিকদের সংখ্যাও বেশি, যার কারণে লিভিং কস্ট বেশি। আমরা সেখানে হাজিরা বোনাস বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি, টিফিন বিল বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। যদি এখন বেতনের কথা বলেন, শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবির মধ্যে ২য় দাবি ছিল গত বছর যে সাড়ে ১২ হাজারের বেতন স্কেল কার হয় তার ইমপ্লিমেন্ট হয় নাই। এটা প্রমাণিত, এখনও অনেক ফ্যাক্টরির এ সামর্থই হয় নাই সাড়ে ১২ হাজার টাকা সেটেল করার। বাংলাদেশের শুধু পোশাক শিল্প মালিকরাই সাড়ে ১২ হাজার টাকা মেনটেইন করতে পারছেন না। ইনফ্লেশনের জন্য শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্থ না। আমাদের পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিক আছেন। দেশে প্রায় ৭ কোটি শ্রমিক আছে, যা সরকারের ৪৪টা ব্যবসায়িক সেক্টরের অংশ। শুধু আমাদের সেক্টরের মানুষদের রাজপথে দেখছি। অন্য কোন সেক্টরের কাউকে রাজপথে দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকটে আছি, সেটা হলো গ্যাস সংকট। গ্যাসের অভাবে আমি সঠিক সময়ে পণ্য এক্সপোর্ট করতে পারছি না। সময়মত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সময়মত উৎপাদন না হওয়ায়, পণ্য যাচ্ছে না। আমার শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না। আবার এ বেতনের টাকা দেয়ার জন্য, সরকারের কাছে ইনসেন্টিমেন্ট ৬ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে। আমি অর্থ সচীবে সাথে কথা বলেছি, ১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন, আমাদের আরও টাকা প্রয়োজন। অনেক মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবেন না। আরও ২ হাজার কোটি টাকা দেয়া হলে কিছু কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতনের ব্যবস্থা করতে পারবেন।