প্রতিরোধের মঞ্চে ফিরে দেখা না.গঞ্জের ১ আগস্ট
# এক বছর পরও আন্দোলনের স্মৃতি নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে জীবন্ত: জুয়েল
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: এক বছর আগে এই দিনে নারায়ণগঞ্জ শহর পরিণত হয়েছিল এক প্রতিরোধের মঞ্চে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাল সময়ে, যখন সরকারের দমন-পীড়নে সারাদেশের আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত, তখন ১ আগস্টের ‘মোমবাতি প্রজ্বালন’ কর্মসূচি নারায়ণগঞ্জকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। পুলিশের লাঠিচার্জ, হুমকি ও গ্রেপ্তারের মুখেও শিক্ষার্থীরা সেদিন মাথা নত করেনি।
জুলাই মাসের শেষ দিকে যখন মহাসড়কের আন্দোলনের ভয়াবগ রূপ নেয়, তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলা এবং প্রধান নেতাদের গ্রেপ্তারের কারণে শহরে আন্দোলন কিছুটা থমকে পড়ে। কিন্তু ১ আগস্টের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারীরা আবার ঘুরে দাঁড়ায়।
সেদিনের সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি দেয়াল যেন কথা বলতে শুরু করেছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ ফুটিয়ে তোলে। গ্রাফিতিতে উঠে আসে আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের চিত্র। জালকুড়ি ও আদালত পাড়ার কাছে দেয়াল লিখনের সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশ ও তৎকালীন সরকার-সমর্থিতদের বাধার মুখে পড়ে।
১ আগস্ট সন্ধ্যায় চাষাঢ়া শহীদ মিনারে ‘মোমশিখা প্রজ্বালন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। উদ্দেশ্য ছিল আহত ও নিহতদের স্মরণ করা। সেদিন বিকেল থেকেই মোমশিখা প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করতে শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। ৭টার কিছুক্ষন আগে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে চাইলে তোপের মুখে পরে পুলিশ। এক পযার্পয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এমন সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। পরে, তারা একত্রিত হয়ে আবারো শহীদ মিনারে আসতে চাইলে, পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে।
এদিকে, তবে শিক্ষার্থীরা দমে না গিয়ে পুলিশের ধাওয়ার পর ভাষা সৈনিক সড়ক (বালুরমাঠ) এলাকায় গিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে কয়েকজন ছাত্রী। ওই মুহূর্তে কিছু শিক্ষার্থী হাতে হাত রেখে সড়কে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারা ‘বুকের ভেতর ভীষণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’—স্লোগানে পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদ জানায়। পরে, বালুর মাঠ এলাকাতেই স্বল্প পরিসরে মোমশিখা প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি শুর করে তারা। এতে যোগ দেয় কিছু ছাত্র। এসময় সেখানেও পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও যোগ দেন। এরপর পুলিশ তিনজন শিক্ষার্থীকে আটক করে। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে।
শিক্ষার্থীরা জানানয়, আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম, তবে পুলিশ আমাদের লাঠি চার্জ করে শহীদ মিনার থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা কেন শহীদ মিনারে আমাদের ভাইদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবো না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, “গত ১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ। শিক্ষার্থীরা শুধু নিহত ভাইদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তাদের ওপর বর্বর হামলা চালায়। আমি একজন অভিভাবক হিসেবে এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।” এক বছর পরও আন্দোলনের স্মৃতি নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে জীবন্ত।”