শনিবার, মে ২৪, ২০২৫
Led04অর্থনীতি

পোশাক রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ: কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান বিকেএমইএ’র

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ভারত সরকার কর্তৃক সম্প্রতি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে আরোপিত বিধিনিষেধকে কেন্দ্র করে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। এই বিধিনিষেধ তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। একইসঙ্গে, চলমান রপ্তানি ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রেও এই বিধিনিষেধ স্থগিতের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো এই চিঠিতে মোহাম্মদ হাতেম রপ্তানি খাতের উপর এই নিষেধাজ্ঞার মারাত্মক প্রভাব তুলে ধরেন। বিকেএমইএ-এর একাধিক নেতা এই চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ১৭ মে ভারত সরকার স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে একটি আকস্মিক আদেশ জারি করে। এই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে শুধু ভারতের নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করা যাবে। শুধু পোশাক নয়, বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

বিকেএমইএ’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর উদ্যোগে ১৮ মে এবং বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে ২০ মে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সব অংশীদার এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশ সরকারকে সচিব পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই মোহাম্মদ হাতেম এই চিঠি পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে স্থলবন্দরগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রপ্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ করে, যার মধ্যে একটি বড় অংশই তৈরি পোশাক। গত ১০ মাসে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে প্রায় ১২ হাজার ৮১১ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে গত ৮ মাসে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

মোহাম্মদ হাতেম চিঠিতে উল্লেখ করেন, এই বিধিনিষেধের কারণে ইতিমধ্যে বহু রপ্তানি পণ্য সীমান্তে আটকে গেছে, অনেক পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং এলসির মাধ্যমে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ক্রেতাদের আস্থা হারানোর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সুনাম দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

মোহাম্মদ হাতেম সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, “এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রপ্তানিকারকেরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ভারত সরকারকে অনুরোধ করতে হবে, যেন তারা অন্তত তিন মাসের সময় দেয় এবং বর্তমানে প্রক্রিয়ারত রপ্তানি আদেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখে।”

উল্লেখ্য, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে ৩.৭৫ শতাংশ পণ্য ভারতে যায়। পার্শ্ববর্তী এই দেশ বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে, যা মোট আমদানির ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ভারত থেকে মূলত শিল্পের কাঁচামাল বেশি আসে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ।

বিকেএমইএ’র এই চিঠির অনুলিপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

RSS
Follow by Email