শনিবার, আগস্ট ৯, ২০২৫
Led05মতামত

‘পেশাদার সাংবাদিকদের’ নিরাপত্তায় ‘হলুদ সাংবাদিকদের’ গোড়া উপড়ে ফেলতে হবে

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি: সব সাংবাদিক কি সাহসী কলম সৈনিক? সবাই কি তাদের লেখনীর মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ে কলম ধরে? না, দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে এমন অনেক সাংবাদিক আছেন যারা সমাজের অন্যায়কারীদের পক্ষ নিয়ে তোষামোদি ও তেলবাজি করে সংবাদ প্রকাশ করেন। শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে এই চিহ্নিত অপরাধীদের আরও শক্তিশালী করতে তারা সামান্য টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অখ্যাত পত্রিকার কার্ড দিয়ে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নেন। আর মূল সমস্যাটা শুরু হয় এখান থেকেই।

যেসব অযোগ্য ও অপরাধী লোক ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সাংবাদিকতা পেশায় আসে এবং সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কার্ডধারী সাংবাদিক হিসেবে সংবাদ জগতে প্রবেশ করে, তখন পেশাদার সাংবাদিকরা পড়েন বিপাকে। যে দেশে একটি বেনসন সিগারেট, রাস্তার ধারের টং দোকানের এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম চা আর মোবাইলে ৫০ টাকা রিচার্জ করে দিলে একজন কার্ডধারী বা হলুদ সাংবাদিক আরেকজন পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাকে অপরাধী বানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, সেই দেশে পেশাদার সাংবাদিকদের অবস্থা গাজীপুরের আসাদুজ্জামান তুহিনের মতো হওয়া আশ্চর্য নয়।

একদিকে পেশাদার সাংবাদিকরা সমাজের অন্যায়, দুর্নীতি এবং ভুল কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে, তারা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, সমাজের চিহ্নিত অপরাধী বা অপরাধীদের বন্ধু তথা হলুদ সাংবাদিকরা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন এবং ব্যক্তিগত বিদ্বেষ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সংবাদ পরিবেশন করে। ধরুন, যে অপরাধের তথ্য তুলে ধরে একজন পেশাদার সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করছেন, সেই একই অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে আরেকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করছেন অপেশাদার বা হলুদ সাংবাদিকরা। এর ফলে এখান থেকেই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়।

কিছু হলুদ সাংবাদিক ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ভিত্তিহীন ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তারা বস্তুনিষ্ঠতা ও পেশাদারিত্বের অভাবে সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না, বরং সমাজের ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।

এই ধরনের ব্যক্তিরা সাংবাদিকতার আড়ালে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ব্ল্যাকমেইলিং, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত থাকে। তাদের এই ধরনের কার্যকলাপ সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদের নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের ওপর জোর দেওয়া উচিত।

এই কাজে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে স্থানীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনগুলো। সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের দায়বদ্ধতা থেকে এই দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করলেই সারা দেশে সাংবাদিকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের এই মহান পেশা থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব এবং ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ নামক কলঙ্ক থেকে সাংবাদিকতাকে মুক্ত করা সম্ভব।


লেখক- সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।

RSS
Follow by Email