বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০, ২০২৫
Led03ধর্ম

পূণ্যস্নানের প্রস্তুতিমূলক সভায় উত্তেজনা-হাতাহাতি, বিরক্তি প্রকাশ ডিসি ও এসপি’র

# যদি স্বার্থগত দ্বন্দ্বের জেরে এগুলো করতে থাকি, এতে ভালো ম্যাসেজ যায় না: ডিসি
# একজন এসপি হিসেবে আপনাদের আচরণ দেখে খুবই মর্মাহত: এসপি

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বন্দর উপজেলার মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নানের প্রস্তুতিমূলক সভার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় সভায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্যর জেরে উত্তেজনা ও হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে। এতে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও বিশৃঙ্খলায় বিরক্তি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার।

এর আগে, সভায় লাঙ্গবন্দ স্নানোৎসব নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখার দাবি জানান। এছাড়া, নারীদের পোশাক পরিবর্তনের কক্ষ সুরক্ষিত রাখা, নদীপথে চাঁদাবাজি বন্ধ, রাস্তার দুইপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, কচুরিপানা পরিস্কার, নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক ব্যবস্থা, পয়নিঃস্কাশনের সুব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।

এছাড়া, স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন থাকবে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। একইসাথে আনসার ও স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করবেন। নদীপথে নিয়মিত টহল থাকবে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দল। যেকোনো দুর্ঘটনায় দ্রুত সাড়া দিতে ডুবুরি দলও প্রস্তুত রাখার কথা জানান বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে, আলোচনার এক পর্যায়ে স্নানোৎসব উদযাপন কমিটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। দু’টি পক্ষ পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দেন। এ নিয়ে সম্মেলন কক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে সভা শেষ করেন জেলা প্রশাসক। সম্মেলন কক্ষের এই উত্তেজনা বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। সভা শেষ হলেও একই বিতর্কে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বারান্দা, ভবনের নিচে এবং প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায়ও কয়েক দফায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমরা প্রোগ্রাম করতে গিয়ে যদি স্বার্থগত দ্বন্দ্বের জেরে এগুলো করতে থাকি, এতে মানুষের ভালো ম্যাসেজ যায় না। ধর্মের সুবাতাস ও সৌরভ ছড়াতে হবে। বিভিন্ন প্রস্তাব ও সমস্যার কথা এসেছে, এগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করবো। সবগুলো ডিপার্টমেন্ট, আনসার বাহিনী, সেনাবাহিনীও এটার সমাধানে থাকবে। পাশাপাশি আপনাদের উদার মন নিয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে।

বিরক্তি প্রকাশ করে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, কারো যদি পেশি শক্তি বেশি থাকে, তাহলে বাইরে মাঠ আছে, বাইরে গিয়ে মারামারি করেন। পরে আমার পুলিশ আসবে, মামলা নিবে, কোনো সমস্যা নেই। আপনারা একটি স্নানই যদি মিলেমিশে না করতে পারেন, এখানেই রক্ত-গঙ্গা বহান, তাহলে স্নানের কি দরকার আছে? পাপ-মোচনের কি দরকার? আমি একজন এসপি হিসেবে আপনাদের আচরণ দেখে খুবই মর্মাহত।

এসপি বলেন, কে ফ্যাসিস্ট, কে কী করছে তার বিষয়ে মামলা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা দেখবো। কে কী করেছে সে বিষয়ে সরকার দেখবে। এখানে জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোক বসে আছে, এখানে পেশি শক্তি দেখানোর জায়গা না। পুন্যস্নানে কারো জন্য কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এ সময় সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, সিভিল সার্জন ডা. এএফএম মুশিউর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা বিনা, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সচিব নূর এ কুতুবুল আলম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায়, সদস্য সচিব জয় কে রায় চৌধুরী, মহাতীর্থ লাঙ্গবন্দ স্নাস উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের মহানগর কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী পপি রানী সরকার, ভবানী শংকর রায়, পরিতোষ সাহা প্রমুখ। সভায় সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হুসাইন।

RSS
Follow by Email