পবিত্র আশুরায় ‘ইয়া হোসেন, হায় হোসেন’-এ মুখরিত নগরী
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কারবালার সেই শোকাবহ ও হৃদয় বিদারক ইতিহাসকে বুকে ধারন করে নগরীতে পালন করা হচ্ছে পবিত্র আশুরা বা ১০ই মহররম। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এ দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, যা শ্রদ্ধায় স্বরণ করছে নগরবাসী। মুখে ‘হায় হোসেন, হায় হোসাইন’ ‘ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন’ স্লোগান, মাথায় সাদা কাপর বাধা, হাতে নিশান ও তাজিয়া মিছিলের সামনে একদল কিশোর-যুবকদের হাতে ছিলো ঢোল। এভাবেই বিভিন্ন পাড়ার ও কমিটির আয়োজিত তাজিয়া মিছিল প্রদক্ষিন করে নগরজুড়ে। তাজিয়া মূলত আরবি শব্দ। এর অর্থ শোক বা সমবেদনা। নারায়ণগঞ্জের প্রায় ১৫০ বছরের থেকেও বেশি পুরনো এই ঐতিহ্যের ধরে রেখেছে মুসলিমদের শিয়া সম্প্রদায় ও সুন্নিদের এক অংশ।
নগরীর কিছু কিছু জায়গায় শনিবার ৯ মহররম রাত থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু হলেও, রবিবার (৬ জুলাই) সকাল থেকে শহরজুরে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে খালি পায়ে, পালকির ন্যায় বহন করা হয় তাজিয়া, কিছু অংশ গিয়ে থেমে শিশু-কিশোররা শুরু করে লাঠি খেলা। মিছিলে মিছিলে চলছে তাকবিরসহ বিভিন্ন স্লোগান। মুসলিমদের এ তাজিয়া মিছিল দেখতে ভিড় করছেন সনাতনসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। এদিকে তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে নগরীর প্রধান সড়কগুলোর পাশে বসেছে খেলনা, খাবার ও বিভিন্ন তৈজসপত্রের মেলা। সেই সাথে নগরীতে টহলরত অবস্থায় দেখা গেছে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীদেরকেও ।
তাজিয়া বিষয়ে নিতাইগঞ্জ খয়ের পট্টি এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষ, দাদা, নানা তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে আসছে। সেই ধারা আমরাও বহর করছি। তাজিয়া কোন উৎসব না, এটা শোকের দিবস। এ দিনে কারবালার সেই মর্মান্তিক ঘটনা মনে করে আমরা শোক পালন করি। সে দিন ইমাম হোসেনকে এয়াজিদের সৈন্যবাহিনী হত্যা করেছিল। পৃথিবীতে আজ সমস্বরে হোসেনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে কারণ তিনি মানবতার পক্ষে ছিল। সেই মর্মান্তির ঘটনার শোককে আমরা মুসলিমরা যেন শক্তিতে পরিণত করতে পারি সেই জন্য এই তাজিয়া বা শোকের মিছিল।
আরেকজন আয়োজনকারী আরমান বলেন, আমাদের তাজিয়া মিছিল শিয়াদের থেকে ভিন্ন। আমাদের অনেকেই শিয়া বলে কিন্তু শিয়া আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। ওরা তাজিয়া মিছিলে নিজেদের আঘাত করে আর হায় হোসেন বলে শোক পালন করে। কিন্তু আমরা এখনো আমাদের ইমাম হোসেন কে জীবিত মনে করি, তাই ইয়া হোসেন বলি। আমাদের বিশ্বাস ইমাম হোসেন, মা ফাতেমা, মহানবী এখনো জীবিত আছেন। আমরা শুধু তাজিয়া মিছিল করি আর কিছু সিন্নির আয়োজন করা হয়। তবে আমাদের এই আয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই করা হয়।
র্যালি বাগানের বাসিন্দা রাজন বলেন, সাধারণত ৯ মহররম বাদ মাগরিব প্রথম মিছিল হয়। আমরা হেঁটে হেঁটে সারা নগরীতে এই মিছিল করি। তা ছাড়াও আমাদের মহররম উপলক্ষে সরবতের আয়োজন থাকে, প্রথম মহররম থেকে রোজা এবং খিচুরীর আয়োজন করি। তবে আমাদের নারায়ণগঞ্জে ঘোড়া নিয়ে মিছিল বা পিঠে আঘাত করে মাতম করা হয় না। এটা শিয়ারা করে। আমাদের নারায়ণগঞ্জে শিয়ারা তেমন মিছিল করে না। আমাদের তাজিয়া মিছিলের প্রতীক থাকে একটি ঘর। আর সেই ঘরের ভেতর ইমাম হাসান ও হোসেনের প্রতীকী কবর, আর সবার হাতে থাকবে নিশান। শুধু বাংলাদেশ না প্রথিবীর বিভিন্ন দেশে শত শত বছর ধরে ইমাম হোসেন (রা.) শহীদ হওয়ার দিনটিকে ঘিরে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। তার মৃত্যুতে শোক জানাতেই প্রতিবছর তাজিয়া মিছিল বের হয়।
ইসলাম ন্যায় ও শান্তির ধর্ম। এই সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত ইমাম হোসেন ও তার পরিবারের সদস্য বিশ্বাসঘাতক এয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন। কারবালার প্রান্তরে ফোরাত নদীর তীরে সেই হৃদয়বিদারক সেই ঘটনা বুক চেপে শোক পালন করে মুসলমানরা।