বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
Led01Led02ফতুল্লাবিশেষ প্রতিবেদন

পঞ্চবটী-চাষাঢ়া সড়কে অটোরিক্সা-মিশুক উল্টে যাওয়া, এখন নিত্যদিনের চিত্র

# কন্টেইনার-ট্রাকসহ প্রতিদিন সহস্রাধিক মালবাহী যানবাহন চলে
# প্রতিদিন ৩-৪টা গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়
# ২০ মিনিটের রাস্তা ২ ঘন্টা বসে থাকতে হয়
# রাস্তা মেরামত হলে ৬০-৭০ ভাগ যানজট এমনি কমে যাবে: ট্রাফিক পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: প্রতিদিনই অটোরিক্সা অথবা মিশুক উল্টে যাওয়া যেন নিত্য দিনের চিত্র ঢাকা নারায়ণগঞ্জ’র পুরাতন সড়ক পঞ্চবটী থেকে চাষাঢ়া সড়কে। কখনো কখনো মাল বোঝাই পিকআপ ও ট্রাকও উল্টে যাচ্ছে, ফলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষের যেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সময় মতো পৌছানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত-পা ভেঙ্গে পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকে। বিগত সরকারকে দোষারোপ করে নতুন সরকারের প্রতি অধির প্রত্যাশা ব্যাক্ত করছে সাধারণ মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটী পযর্ন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কটিতে প্রায় শতাধিক খানাখন্দভরা। পুলিশ লাইন্স লোহার মার্কেট থেকে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ভেঙ্গে খাদ হয়ে গেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ, পাথর ও খোয়া উঠে গেছে। এর ফলে গর্ত হয়ে যানবাহন আটকে দীর্ঘ জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে। ইমারজেন্সী রোগী নিয়ে গেলেও পথই দুর্ঘটনা ঘটবে। এছাড়া চার পাশে বৃষ্টির পানি জমে কাদামাটি গর্তের তৈরি হয়ে গেছে। সেই গর্তে প্রায়ই যানবাহনের চাকা আটকা পড়ে। বোঝাই যাচ্ছে না কোথায় গর্ত আর কোথায় ভালো সড়ক। এসব গর্তের কারণে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

রাস্তা দিয়ে হেটে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন রাবেয়া খাতুন, পায়ে ও জামায় কাদার ছিটেতে একাকার। জানতে চাইলে তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এহানে প্রতিদিন ৩-৪টা গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়। এইযে গর্ত গুলা দেখতাছে, এগুলার মধ্যে গাড়ি উল্টে পড়ে যায়। গতকাল আমার স্বামী একটা গাড়ি উঠাতে গিয়া পায়ের মইধ্যে বেথা পাইছে। অনেকে রাস্তা রাইখা দোকানের পাশে কিনারে আইসা পড়ে। আমাগো বাচ্চাকাচ্চা স্কুলে যাইতে পারে না। আমরা চাই এই রাস্তাঘাট যাতে মেরামত হয়।

বাচ্চাদের পাশে নিয়ে স্কুল থেকে মিশুকে বাসায় ফিরছিলেন মৌসুমী, তিনি এ প্রতিবেদককে দেখে ক্ষোভে ঝেড়ে বললেন ‘রাস্তায় আমরা স্কুলে বাচ্চাদের দিয়ে যেতে পারি না। সারা রাস্তায় ভাঙ্গাচুরা। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি। ডিজিটাল বাংলাদেশের কি কইরা গেছে হাসিনায়। এখন সমাধান একটাই রাস্তা ঠিক করতে হবে। বর্তমান সরকারের কাছে রাস্তা ঠিক করা দাবি জানায় এই অভিভাবক।

দুপুর ১টা বেজে ৭ মিনিট। মধ্যঞ্চভোজে বাসায় যাচ্ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক খোকন। দীর্ঘক্ষন সিএনজিতে বসে ছিলেন। কিন্তু একপর্যায়ে আর সহ্য না হয়ে হেটেই বাসায় যাচ্ছিলেন। আমাদের প্রতিনিধিকে দেখে ছুটে আসেন তিনি। জানাচ্ছেন কিছু বলতে চায় তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই এটা কোন কথা এতোক্ষণ জ্যামে বইসা থাকা যায়। আমাদের এই পঞ্চবটী থেকে পুলিশ লাইনের রাস্তাটা ভয়ঙ্কর অবস্থা। এমন কোন দিন নাই যে একটা অটোরিক্সা না পড়ে। আজকেও একটা অটো পরছে, এক মহিলা হাত ভাইঙ্গা (ভেঙ্গে) গেছে। আজকে আবহাওয়া কিছুটা ভালো হইলেও বৃষ্টি হইলে আরও বেশী জ্যাম লাইগ্গা (লেগে) থাকে। রাস্তার মইধ্যে পানি জইম্মা যায়। আমাগো পাই হেটে বাড়িতে যেতে হয়। সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া তারা যাতে এই রাস্তাডা সংস্কার করে, আমাদের যাতে ভোগান্তি না হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কের আশপাশে ইমারত নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখানে ইট, বালু, পাথর, রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া এই সড়কের পাশে রি–রোলিং মিলসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। রাজধানীতে ইমরত নির্মাণসামগ্রীও এই সড়ক দিয়ে সরবরাহ করা হয়। মুক্তারপুর সিমেন্ট কারখানা, হিমাগারসহ ভারি ভারি শিল্প কারখানায় ২৪ থেকে ৫০ মেট্রিক টন ওজনের যান চলাচল করে। শিল্প নগরী বিসিকের বিভিন্ন গার্মেন্টস এর মালামালের কন্টেইনার গাড়ি, ট্রাকসহ প্রতিদিন হাজার হাজার মালবাহী যানবাহন চলাচল করে।

সূত্র মতে, সড়কের চেহারা বদলে দিতে নেয়া হয়েছে আধুনিকায়ন প্রকল্প। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পটির সময়কাল ১ জানুয়ারি ২০২১ হতে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের বেঁধে দেয়া সময়ের প্রায় ৪ বছর অতিক্রম হলেও কাজের অগ্রগতি অনেকটা কম। এতে করে প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে সড়কটি বছরের পর বছর পার হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেই।

মালবাহী কন্টেইনার গাড়িতে ইঞ্জিন বন্ধ করে বসে ছিলেন চালক রুহুল আমিন। কতক্ষণ যাবত বসে আছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০ মিনিটের রাস্তা ২ ঘন্টা যাবত বসে আছি। আর রাস্তায় যে পরিমান ভাঙাচোরা আমরা যে গাড়ি চালিয়ে যাবো সে পরিবেশ নেই। একটা গাড়ি লাইন মতো যেতে পারে না। সড়কে গাড়ি আটকে যায়, আর সব এলোমেলো হয়ে যায়। আমরা চাই সুন্দর একটা রাস্তা ও গাড়ি চালানোর পরিবেশ হোক।

পঞ্চবটী মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ (টিআই) হারুন অর রশীদ লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, রাস্তায় জানযট হওয়ার অন্যতম কারণ হলো রাস্তায় ভাঙাচোরা ও বেহাল দশা। এছাড়া চায়না প্রজেক্টে কাজের কারণে মাল সামান রেখে দেয়ায় এক লেনের রাস্তা হয়ে গেছে। পঞ্চবটী থেকে পুলিশ লাইন পর্যন্ত অগনিত গর্ত আছে। আমরা ইতোমধ্যে কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি, তারা আমাদের বলেছে খুব শীঘ্রই রাস্তা ঠিক করে দিবে। আর চায়না প্রজেক্টটা কাজ অনেক দ্রুত কাজ করছে, এগুলো শেষ হয়ে গেছে আশা করি যানজট নিরসন হয়ে যাবে।

তিনি আরও জানান, মাঝে মাঝে সড়কে বড় বড় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আমরা এই গাড়িগুলো সরাতে পারি না, এগুলার জন্য যানজট লেগেই যাচ্ছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশের কাজ দ্রুত সহজ করতে এই মুহুর্তে রাস্তাটা মেরামত করা খুব প্রয়োজন। রাস্তা মেরামত হলে ৬০-৭০ ভাগ যানজট এমনি কমে যাবে। বাকিগুলো আমাদের কমইউনিটি পুলিশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।

RSS
Follow by Email