শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Led02জেলাজুড়েরাজনীতিসিদ্ধিরগঞ্জ

নৌকায় নির্বাচন করে দলে ফিরতে চায়, বেঈমানদের বিএনপিতে ঠাই নেই: গিয়াসউদ্দিন

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সাবেক সংসদ সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারী শাসক জগদ্দল পাহারের মতো এমনভাবে বসে ছিল, তাদের অত্যাচার নিপীড়নের কারণে বিএনপির আমরা এলাকায়-নিজের বাড়িতে থাকতে পারি নাই। মামলা, হামলা, গুম নিপীড়নের শিকার হয়ে আমরা আমাদের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানের কাছে থাকতে পারি নাই, আমার মানবতর জীবনযাপন করেছি। অনেকেই দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করেছেন। মিথ্যা মামলার কারণে অনেক পরিবার আজকে নিঃস্ব হয়েছেন। কিন্তু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের এ নির্যাতন নিপীড়ন উপেক্ষা আমারা নারায়ণগঞ্জবাসী আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছি।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি কড়ইতলায় এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মাহামুদ মোল্লা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল বারি ভূইয়া, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান, এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাড. মাহমুদুল হক আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন সহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, এই বিএনপির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এবং বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে সারা বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের বিশেষ মর্যাদায় উপনীত করেছিলেন। তার অবর্তানে তার সুযোগ্য সহধর্মীণি দেশ নেত্রী খালেদা জিয়া প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে স্বৈরাচারী সরকার পতন ঘটানোর নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কি নিষ্ঠুরতা, কি নির্মমভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের নেতৃত্বে দিয়েছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফরমায়েসি রায় দিয়ে দীর্ঘ দিন দেশে আসতে দেয়া হয়নি। আমাদের নেতা তারেক রহমান দূরদেশে থেকেও বাংলাদেশের মানুষদের দুঃখ কষ্টের কথা ভুলে যান নাই।

তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনে ফতুল্লা বাসীর ভূমিকা অভাবনীয়। আজকে আমার পাশে যারা আছে তারা সকলেই পরীক্ষিত নেতা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করতে মাঠে ছিলেন। এই আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হানিরা ৫ই আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সাথে শেক হাসিনার বোন পালিয়ে গেছে। যারা তাদের সঙ্গি ছিল, তাদের সেবা করেছে তাদের ভুলে গিয়ে পালিয়ে গেছে। এই নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসীদের গড়ফাদার ছিল যে, শেখ হাসিনার সাথের দোসর ছিল। সেও যখন পালিয়ে গেল তার সঙ্গি সাথীদের কাউকে নিয়ে যায় নাই। ২০০১ সালে আপনাদের ব্যাপক ভোটে আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন, সেদিনে সে বোরখা পড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। তার কর্মীদের কোন খোঁজ খবর নেয় নাই। বার বার বলেছি, সে যেভাবে হুংকার দেয়; সে একটা কাপুরুষ। তার হুংকারে কেউ ভয় পাবেন না। সে আবার বোরকা পড়ে পালিয়ে যাবে। তার সহকর্মীদের বার বার এটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, আপনাদের ছেড়ে সে পালিয়ে যাবে আর আপনাদের কথা মনেই রাখবে না। আজকে সে পালিয়ে গেছে, তার দোসররা পলাতক জীবনযাপন করছে। তারা দুশ্চিন্তায় আছে, কেন। কারণ শামীম ওসমানের সঙ্গীরা সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালিয়েছে। সে দাম্ভিকতার সাথে বলেছিল যদি বিএনপির নেতাকর্মীরা সত্তুর গজ মাটির নিচে থাকে, তাদেরকে বের করে এনে শায়েস্তা করবে। সে দাম্ভিকতা আজ কোথায় গেল। সেই কাপুরুষ পালিয়ে গেছে।

চাঁদাবাজদের সাথে দলের কোন সম্পর্ক নেই বলে গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমরা যখন গত ষোল বছর আন্দোলন সংগ্রাম করছিলাম তখন যারা শামীম ওসমানের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তার ছেলে ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ইন্টারনেট, ভূমিদস্যুতা, তেল চুরি করে অর্থ সম্পদে বলিয়ান হয়েছে। এখন সেই তারাই ৫ আগস্ট থেকে এই ফতুল্লায় লুটপাট, সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করছে। তাদের কবল থেকে ছোট দোকানও রেহায় পাচ্ছে না। এদের সঙ্গে আমাদের দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ। আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিতে দলের চরম দুঃসময়ে দল থেকে সরে গিয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছে, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী করেছে। সে নাকি এখন আবার বিএনপিতে ফিরতে চায়। ভুলেও না। সে এখন পচা মাল। এই মাল এখন আর বিএনপি খায় না।

ষড়যন্ত্র করে যারা সভা বানচালের চেষ্টা করেছেন তাদেরকে বিড়াল হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এতদিন সিংহের সঙ্গে লড়াই করেছি। ভয় পাইনি। বরং সে নিয়মিত আমার ভয়ে ভীত ছিল। এখন বিড়াল আমাকে ভেংচি দেয়। তাদের তওবা করতে হবে। তাদের বলবো এখন সময় আছে তওবা করে মূলধারায় ফিরুন। সন্ত্রাসী লুটপাট ছাড়ুন। মানুষের কল্যাণে কাজ করুন। গত তিন দিন ধরে একটা পক্ষ নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছিল সভা বানচাল করার জন্য। আমি প্রশাসনকে বলেছি, আমি সভায় যাবো যদি কারো বাবার ক্ষমতা থাকে আমাকে বাধা দিতে বলবেন। আমার পুলিশ লাগবে না। আমার নিরাপত্তা লাগবে না। আমার জন্য আমার নেতাকর্মীই যথেষ্ট সেসব সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে। আর আমার জন্য আমার আল্লাহ আছে।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, প্রশাসনকে সবমময় সহযোগিতা করতে হবে। ৫ তারিখ থেকে ফতুল্লায় যারা লুটপাট, ভাঙচুর চালিয়েছে তারা কারা আপনারা জানেন। তাদের তালিকা প্রশাসনকে দিবেন। না পারলে আমাদের দিবেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। আমি গিয়াসউদ্দিন অন্তত তাদেরকে ক্ষমা করবো না। তারা মীরজাফার। তারা দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছে, নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেছে। নৌকা মার্কার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক হতে পারে না। আমি তাদের মুখে থু দিই। চুপে চুপে যে যতই লুকিয়ে থাকেন না কেন, ছবি আছে আমাদের কাছে। এই বেঈমানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, এখানে শ্রমিক দলের সভাপতি আছেন। তিনি বলেছেন কিছু মানুষ এখানে শ্রমিক দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে। সেই তারাই আজকের সভা বানচাল করতে চেয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সন্ত্রাসী। চাঁদাবাজ।

তিনি আরও বলেন, সেদিন ফতুল্লায় বিএনপি একটি শান্তির মিছিল বের করলে একদল চাঁদাবাজ সেই মিছিলে হামলা চালায়িছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করেছে। এরা গত ৫ আগস্ট থেকে ব্যাপকভাবে লুটপাট ভাঙচুর চাঁদাবাজি করছে। তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের পরিচয় তারা সন্ত্রাসী।

RSS
Follow by Email