নির্বাচনে ফিল্ড ওয়ার্কে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা হবে: এমপি শামীম ওসমান
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘আমি এবার যখন ফিল্ড ওয়ার্কে নামবো, আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা হবে৷ তাদের উদ্দেশ্যে বলি, কাপুরুষের মতো বোমা হামলা কইরেন না৷ ২০০১ সালে আমার জন্য বিশটা মানুষ মারা গিয়েছেন৷ ওই পরিবারগুলো দেখে আসেন৷ বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলো বিধবা হয়েছে৷ মারতে চাইলে আমাকে ডাইরেক্ট গুলি করেন, কিন্তু বোমা হামলা করবেন না।’
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনে সিনামন রেস্টুরেন্ট এর এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
তিনি বলেন, আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে৷ আমার পরিবারের সদস্যরা এই বয়সেই চলে গেছেন৷ আমার বয়স ৬২ বছর নয় মাস৷ যেকোনো সময় আল্লাহর ডাক আসতে পারে৷ তাই আল্লাহকে খুশি করে যাওয়া উচিত৷ প্লিজ আমাকে কাজ করার সুযোগ দিন৷ মানুষমাত্রই ভুল হয়। আমি কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন৷ মৃত্যুর পরে যেন সূরা ফাতিহা পড়ে আমার জন্য দোয়া করে মানুষ, এটিই আমার চাওয়া।
ত্বকী হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমাদের তো একটা মহল সবসময় গালাগালি করেই যাচ্ছে। অসুবিধা নাই, দেন গালি। আমরা জানি সবকিছু। ওই সময়ে আমি দুবাই ছিলাম। তবুও কোথাও পাল্টা জবাব দিইনি।
বিএনপির উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান বলেন, আমরা চাইলে অনেকের ক্ষতি করতে পারতাম। নেত্রী বলেছেন, কোনো প্রতিহিংসা নয়। শয়তানের কাজ শয়তান করেছে। আমি যদি আজ বলি ধর, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা হবে। এটা আমার দলের নেতাকর্মীরাই করবে। গত ১৪ বছরে নারায়ণগঞ্জে কোনো সহিংসতা হয়নি। কারণ আমরা সহাবস্থানে ছিলাম। যারা বিএনপির হাতে মারা গেছেন, তাদের দুই- চারজনের বাসায় আমি গিয়েছি। তারা জিজ্ঞেস করেছে ভাই আপনি কি বিচার করবেন না। একথা শুনে আমার কষ্ট লেগেছে। তারা বিচার চাইবে, এটিই স্বাভাবিক। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে তো এই হত্যা বা নোংরামি ছিল না।
তিনি বলেন, কাবা শরিফ ছুঁয়ে পতিতাপল্লী ভেঙ্গে দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলাম। আপা (শেখ হাসিনা) আমাকে মন্ত্রী হতে বলেছিলেন। আমি বলেছি না, আমি এইটা করতে চাই। আপা আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন। ওখানে অনেকগুলো মেয়ে ছিল যাদের শারীরিক গঠনও ঠিকমতো হয়নি৷ কোরআনে লেখা আছে, যে এলাকায় জেনা হয় সেখানে আল্লাহর গজব পড়ে। এবার নির্বাচিত হলে বা না হলে নারায়ণগঞ্জকে মাদকমুক্ত করতে চাই। এত টাফ হয়ে গেছে ব্যবসায়ীদের ধরা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এরা মাদক রেখে দেয়। সাংবাদিকদের মধ্যেও অনেকে মাদকে জড়িত।
তারেক রহমানের বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, তার (তারেকের) মায়ের প্রতিই টান নেই। তারেক খলনায়ক হিসেবে পারফেক্ট। ২১ আগস্ট বোমা হালমা করে ২৪জনকে মেরেছেন, তালেবান- উলফাদের আশ্রয় দিয়েছেন। সিনিয়র নেতাদের সাথে তারেকের কোনো মতামতই মেলে না। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির যেসব ছেলেপেলে আছেন তারা প্লিজ কারো কথা শুনে নাচবেন না। আগামী ১৫-২০ দিন কিছু নির্মম ধবংসাত্মক কাজ করার চেষ্টা হবে। হয়তো একথা বলার জন্য আমি থাকবো না।
অবসরের সময় এসেছে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, এখন চলে যাওয়ার সময়। আগামীবার হয়তো ইলেকশন করবো না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যে ব্রেইন দরকার তা আমার নেই। এটা গড়বেন সজিব ওয়াজেদ জয়। যারা স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য কাজ করবেন, সেই তরুণ প্রজন্মের হাতে আগামীতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিবো, দুনিয়াটা ঘুরে দেখব।
তিনি বলেন, বিএনপির ৩০টি পরিবার থেকে আমার কাছে ফোন এসেছে। তারা কান্নাকাটি করছেন বাবা আমার ছেলেটার কী হবে। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে চাই, আমি কী করতে পারি! তবুও আমি চাই কোনো নিরাপরাধ লোক যেন মামলায় না জড়াক। যে দলই করুক না কেন। পুলিশ প্রশাসনকে সেই অনুরোধ করতে চাই।
নিজ আসনে উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, একেএম শামসুজ্জোহা সড়ক ও নাগিনা জোহা সড়ক সম্পন্ন হওয়ার পরে মানুষ ঘুরতে যাবে সেখানে। ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ, আইটি ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল কলেজ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। মুন্সিগঞ্জ অভিমুখী ২৬০০ কোটি টাকার রাস্তা হচ্ছে। ৫৮টি স্কুলের নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক আরসিসি হবে। ডাবল লাইন রেললাইন করেছি। মেট্রোরেলকে মতিঝিল থেকে নারায়ণগঞ্জ অবধি নিয়ে আসবো। নারায়ণগঞ্জে প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাদা একটা টান, অনুভূতি আছে, এটি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নমিনেশন দেখলেই বুঝবেন। অনেকেই ডিএনডির কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অসংখ্য মামলা ছিল এটা নিয়ে। সেনাবাহিনী কাজটি করছে বিধায়ই কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আরো ২০০-৩০০ কোটি টাকা আনতে পারলে আরো দারুণ কিছু হবে।
নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, আব্বা- আম্মা ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কবর জিয়ারত করে প্রচার শুরু করবো। রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে, এর নামই গণতন্ত্র। আমরাও রাজনীতি করে এ পর্যন্ত এসেছি। ২০০১ সালের নির্বাচনে সব টেলিভিশনে রাত তিনটার সময় আমাকে জয়ী ঘোষণা করা হলো। উপজেলা পরিষদে আমার লোকেরা যাওয়ার পরে তাদেরকে চলে যেতে বলা হলো। সেই রাতে নারায়ণগঞ্জে কর্ণেল কামরুল ইসলাম দায়িত্বে ছিলেন। আমার সব চেয়ারম্যানকে এরেস্ট করা হলো, মারতে মারতে একজনকে মেরে ফেলা হলো। ওই অফিসার কামরুল আমাকে জানালেন, ভাই, আপনি চলে যান। আপনাকে মেরে ফেলা হবে। ওই সময়ে আমি সাহস বলেছিলাম এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ করেছে। ২০০১ এর পরে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপরে অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। ঐতিহাসিক বায়তুল আমান বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হলো। হীরা মহলে হামলা হলো। আমার ভাই সেলিম ওসমানের ফ্যাক্টরিতে হামলা করে তিনশো গরুর দুধের বান কেটে দেওয়া হলো। সেলিম ভাইকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হলো। ১৬ জুন ২০০১ সালে আমাদের ২০জন মানুষ মারা গেলেন।
শামীম ওসমান বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত একজন এমপি ছিলেন এই আসনে (মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন)৷ একসময় জাপা, পরে আওয়ামী লীগ, এরপর আবার বিএনপি করেছেন। এখন দল পাল্টাতে বিভিন্ন দরজায় নক করছেন। উনার আমলে সুন্দর আলি ভাই, মোজাফফর ভাই, হাজী কফিল উদ্দিন ভাই, খোকনকে হত্যা করা হলো। এমনকি মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় তৈমুর আলমের বড় ভাইয়ের ভাই সাব্বির আলম খন্দকারকে মেরে ফেলা হলো। আমাদের মাসুম, সোলায়মান, আব্দুল কাদির, নূর মোহাম্মদ, গিয়াস মেম্বারকে মেরে ফেলা হলো। আমাদের নজরুল ইসলাম সুইটকে রিমান্ডের নাম করে নিয়ে গিয়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় গুলি করে মারলো। মাসদাইরের সেলিম, আদমজীর জাফরকে মেরে ফেলা হলো। তবুও আমরা ধৈর্য্য ধরেছি৷
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল (ভিপি বাদল), নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ লাভলুসহ নেতৃবৃন্দ।