মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
জেলাজুড়েরাজনীতিসদর

নিত্যপণ্যের দাম কমানোসহ নানা দাবিতে বাসদের মিছিল

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দুনীর্তিবাজ, কালোটাকার মালিক, ঋণখেলাপি, অর্থপাচারকারীদের গ্রেফতার ও চাল, পেঁয়াজ, ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানোসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ সভা ও মিছিল করেছে জেলা সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকাল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশ ও শহরে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে জেলা বাসদের আহ্বায়ক নিখিল দাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদ জেলা কমিটির সদস্য এস এম কাদির।

এসময় নিখিল দাস বলেন, বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের ছত্রছায়ায় দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ঋণখেলাপির মাত্রা অবিশ্বাস্য মাত্রায় বেড়েছে। সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর সরকারের উচ্চ পদে থাকা অবস্থায় রিসোর্ট, জমি, ফ্লাট বাড়ী, নগদ অর্থসহ বিপুল অর্থ বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে। একদিকে শুদ্ধাচার পুরষ্কার ও বিপিএমসহ একটার পর একটা খেতাব পাচ্ছেন, আরেকদিকে অবৈধ সম্পদ বাড়িয়েন। সাবেক সেনা প্রধান আজিজ, অবৈধভাবে হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী নিজের ভাইদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা আদায়ে প্রভাব খাটিয়েছে। বেনজীর, আসাদুজ্জামান মিয়া, এডিসি কামরুল হাসান ও ডিআইজি
সামছুদ্দোহাসহ সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি অবৈধ সম্পদের খবর পত্রিকায় বের হওয়ায় পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে বিবৃতি প্রদান ব্যক্তির দায়কে বাহিনীর কাঁধে টেনে নেয়ার সামিল। যা দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে। এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর
রহমান, সচিব মাহমুদ ফয়সলের অবৈধ সম্পদের খবর বের হওয়ার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি দুর্নীতিবাজ লুটপাটকারী ব্যবসায়ী—শিল্পপতিদের সাথে সাথে সামরিক—বেসামরিক আমলাদের অবৈধ সম্পদের খবর। সর্বশেষ কর্মকমিশনের চেয়ারম্যানের ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলীর ৫০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন এর খবরসহ কর্মকমিশনের অনেকের দুনীর্তির খবর বেরিয়েছে। এর আগে করোনার সময়ে রিজেন্ট সাহেদদের ‘কারবার’, স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় মিঠু চক্রের বিপুল দুর্নীতি, ক্যাসিনো স¤্রাট—খালেদদের ক্ষমতা আর সম্পদ, যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকাণ্ড, ফরিদপুরের দুই ভাইয়ের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের খবর, রূপপুরের বালিশকাণ্ডসহ নানা ধরনের সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতি, নির্মাণকাজে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ কাণ্ডসহ নানা ঘটনা শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে ঘটে চলেছে। সরকার দুর্নীতির প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্স’ এ কথা বললেও বাস্তবে সরকারের প্রশ্রয়েই এরা দুর্নীতি করছে। এর কারণ বর্তমান সরকার গত ৩টি নির্বাচনে আমলা প্রশাসন, আইন—শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় বসেছে। ফলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এরা একে অপরের সহযোগী। দুর্নীতির কথা উঠলেই মন্ত্রীরা পাল্টা প্রশ্ন করেন ‘পৃথিবীর কোন দেশে দুর্নীতি নেই।’ দেশের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকার উপরে খেলাপি ঋণ রয়েছে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কোন যৌক্তিক পদক্ষেপ না নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে সুবিধা দিয়ে আসছে। দেশে কালোটাকা অর্থাৎ চুরি, ঘুষ, দুর্নীতির টাকা

তিনি আরও বলেন, মোট অর্থনীতির ৮২%। কালোটাকা উদ্ধার না করে এবারের বাজেটেও ১৫% কর দেয়ার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে জায়েজ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হচ্ছে। একের পর এক দুর্নীতির খবর বের হওয়ায় দুদক লোক দেখানো তদন্ত ও মামলা করছে। কিন্তু দুদক নিজেই খঁুজে দুর্নীতির হোতাদের বের করতে পারছে না। দুদকের উপরও জনগণের আস্থা নাই। দুনীর্তিবাজদের বিরুদ্ধে দুদকের পদক্ষেপের দুর্বলতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে ১০টি সমঝোতা স্মারক চুক্তি করেছে, এর বিস্তারিত জনগণকে জানানো হয় না। ভারতকে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে রেল—ট্রানজিট করিডোর দেয়ার চুক্তি হয়েছে, অথচ ভারত মাত্র ১৮ কিলোমিটার ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ—নেপাল ও ভূটানের সাথে বাণিজ্য ও যোগাযোগ করতে পারে। সেটি তারা দিচ্ছে না। রেলে পণ্যের ও যাত্রীর নিরাপত্তার কথা বলে কিংবা উত্তর—পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দমন বা চীনের সাথে বিরোধে ভারত সামরিক বাহিনী চলাচল ও নিয়োগ করলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। এছাড়া তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারত গত ২০১০ সালে থেকে আশ্বাস দিয়ে একের পর এক তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। অথচ আমাদের সাথে তিস্তা চুক্তি করছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ঘাটতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত বৈরী আচরণ করছে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি। চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা হয়েছে। গত কয়েকমাস যাবৎ খাদ্য মূল্য স্ফীতি ১০% এর বেশি, জুন মাসে মূল্য স্ফীতি ১০.৪২%। সমস্ত খাদ্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে। তারপরও দাম বেড়েই চলছে। দাম বাড়ানোর জন্য সিন্ডিকেটের কথা ও নাম পত্রপত্রিকায় এসেছে। সরকার এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। এরা মন্ত্রীদের কথা শোনেও না। বিনাভোটের সরকার এদের অসীম ক্ষমতা প্রদান করেছে। জনগণের প্রয়োজন সরকারের কাছে মূল্যহীন।

RSS
Follow by Email