রবিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৫
Led01রাজনীতি

না.গঞ্জ-৫ আসনে মাসুদুজ্জামানের প্রার্থীতা বিরোধীতা করে মনোনয়ন বঞ্চিত ৫জনের সংবাদ সম্মেলন

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: গত ৩ নভেম্বর বিএনপি তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন, যেখানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদ এর নাম আসে। এই আসনে মনোনয়ণ প্রত্যাশি ছিল আর ৫জন। মাসুদুজ্জামনের নাম ঘোষণার পর থেকে তার বিরোধীতা করে নানা কানাঘুষা থাকলেও প্রাকশ্যে মনোনয়ন নিয়ে কেউ কোন মুখ খুলেনি। অবশেষে মনোনয়নবঞ্চিত ওই পাঁচ প্রত্যাশী এক সাথে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা বলছেন, ‘এমন একজনকে প্রার্থী হিসেবে দেখা তাদের জন্য অস্বস্তিকর এবং দলীয় ত্যাগ-সংগ্রামের প্রতি অসম্মানজনক। দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়ায়, তাকে সম্ভাব্য মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দেখে আমাদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’ তারা মনোনয়ন পুনঃমূল্যায়নের দাবি করেছেন। একই সময় তারা ঘোষণা দেন, মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিল করে তাদের মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনে কাজ করবেন।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় ওই সংবাদ সম্মেলন। এ সময় মনোনয়নবঞ্চিত ৫জন বক্তব্য রাখেন, তারা হলেন- বিএনপির তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর বাবুল ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাউসার আশা।

সভায় অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর রাজপথে মামলার চাপ, হামলা, গ্রেপ্তারসহ নানা ঝুঁকি নিয়ে দলের পক্ষে লড়াই করেছেন। কিন্তু যে ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তিনি অতীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন না। বরং বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্যদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সুবিধাও নিয়েছেন, এমনকি তাদের নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিয়েছেন। তার ভাষায়, এমন একজনকে হঠাৎ করে দলের প্রার্থী হিসেবে পাওয়া তাদের জন্য হতাশাজনক।

সাখাওয়াত আরো বলেন, ‘দল চাইলে মাসুদ ছাড়া মহানগর বিএনপির সক্রিয় নেতাদের মধ্য থেকেই কাউকে প্রার্থী করতে পারে। তিনি নিজের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করেন এবং যোগ করেন—অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বা আবু জাফর আহমেদ বাবুল—এদের মধ্যে যাকেই দল মনোনয়ন দিক, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন এবং ধানের শীষকে বিজয়ী করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।’

মনোনীত র্প্রাথী পরিবর্তন করে এ আসনে বিএনপির পরীক্ষিত নেতাকর্মীরে মধ্য থেকে মনোনয়ন দেয়ার আবেদন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব এবং দলের স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাবেক এমপি আবুল কালাম বলেন, “আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী হতে চাই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনটি অত্যন্ত কঠিন হবে। আমাদের ১৭-১৮ বছরের নির্যাতন সহ্য করার অধ্যায় রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে আমরা যেভাবে মামলার শিকার হয়েছি তৃণমূল পর্যায় থেকে আমরা সকলেই এর অংশীদার। বুঝতে হবে, গত ১৭ বছর যে দলের অস্তিত্ব রক্ষা করেছি অংশগ্রহণের মাধ্যমে, আজকে আমাদের অস্তিত্বটা মূল্যায়ন কি পেতে পারি কিনা। যদি আমাদের ত্যাগী নেতৃবৃন্দদেরকে সঠিকভাবে সম্মানিত, মূল্যায়ন করা না হয় তাহলে রাজনীতি কিন্তু অত্যন্ত কঠিন দিকে চলে যাবে। কারণ পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা যদি যথাযথ স্থানে যথাযথভাবে সম্মানিত না হয়। তাদের যে অনাগ্রহ থেকে আগামী দিনে রাজনীতিতে শূণ্যতা সৃষ্টির পায়তারা দেখা দিবে।

আবু জাফর বাবুল বলেন, “অপ্রত্যাশীতভাবে একজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যিনি এ দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। দুই মাস আগে থেকে আবেদন করে তিনি সদস্য হয়েছে এবং মনোনয়ন পেয়েছেন। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। দেখতে পাচ্ছি, প্রত্যেকটা নেতাকর্মী ভোটারের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এইভাবে যদি চলে, আমি জানি না আগামীতে আমাদের প্রত্যাশা কি। নারায়ণগঞ্জে প্রার্থী এবং জয়লাভ, দুটাই আমাদের প্রত্যাশা। একটা অপরিচিত মানুষ, যে বিএনপি করে না, মানুষ তাকে ভোট দিবে না। আমরা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন হারাতে চাই না।”

মহানগর বিএনপি নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল বলেন, ‘দলের দীর্ঘদিনের কর্মীদের বাইরে গিয়ে কাউকে প্রার্থী করা হলে তা সংগঠনের ভেতরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে।’ তিনি স্পষ্ট করে জানান, দলের প্রকৃত কর্মীদের মধ্য থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে আমরা সবাই মিলেই তাকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নেব।

আবুল কাউসার আশা বলেন, “ছাত্রদলের একজন সর্বকনিষ্ঠ সদস্যও বিভিন্ন মেয়াদে কারা বরণ করেছেন, মামলার আসামি হয়েছে। আমাদের পরিবারগুলোও সাফারার হয়েছে। বিভিন্নভাবে একসাথে কাঁধে কাধ মিলিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে একত্রিতভাবে ছিলেন। আমাদের মধ্যে থেকে কাউকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে কিন্তু তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করা থাকবে।

নেতারা শেষ পর্যন্ত দলীয় উচ্চ পর্যায়ের প্রতি আহ্বান জানান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক, যিনি দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে ছিলেন এবং স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খান, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ও সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান, বন্দর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নামুল হক রানা, মহানগর বিএনপির সদস্য ডা. মজিবুর রহমান, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

RSS
Follow by Email