শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Led02জেলাজুড়েবিনোদনসোশ্যাল মিডিয়া

না.গঞ্জ মাতিয়েছে ‘পটু’, নায়ক-নায়িকা- দর্শকে উল্লাসিত হল

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: পদ্মাচরের বাস্তবকেন্দ্রীক গল্পে সাজানো এক রোমাঞ্চকর সিনেমা ‘পটু‘ মাতিয়ে গেল নারায়ণগঞ্জবাসীকে। সিনেমা হলের কানায় কানায় পরিপূর্ন ছিলো দর্শক। তবে শুধু দর্শক নয়, সিনেমা হলের সিট দখল করে রেখেছিলো ‘পটু’র প্রধান চরিত্রের নায়ক, নায়িকা, খলনায়ক, পরিচালকসহ আরও অনেকে। তাছাড়া সিনেমার প্রধান চরিত্রে সারিতে নারায়ণগঞ্জের ছেলে শোয়েব মনির থাকায় পটুকে আপন মনে বরণ করে নিয়েছে জনগণ।

শুক্রবার (১৭ মে) নগরীর ডিআইটি এলাকায় গুলসান সিনেমা হলের প্রদর্শিত হয়েছে ‘পটু’। এক ভিন্ন আঙ্গিকের সিনেমায় এ জেলার পরিচিত মুখ দেখে উল্লাসিত দর্শকেরা। সিনেমা দেখে গল্প ও অভিনয়ের প্রশংসাসহ নানা মতামত প্রকাশ করেছেন তারা। আনন্দ, আবেগ ও গল্পে টুইস্ট মিলিয়ে সিনেমার একটি মুহুর্তেও হতাশ হতে হয়নি বলে জানিয়েছে দর্শকেরা। দর্শকদের এই আনন্দ-উল্লাস দেখে আশার মুখ দেখছে সিনেমার নায়ক, নায়িকা, খলনায়ক ও পরিচালক।

পটুকে নিয়ে লাইভ নারায়ণগঞ্জের সাথে নানা মতামত ব্যক্ত করেছে সিনেমা হলে থেকে বহিরাগত দর্শকেরা। সিনেমা দেখতে আসা কবি ও সাহিত্যিক আহমেদ বাবলু বলেন, একটা ছবি বা সিনেমার ভালো যে সব দিকগুলো থাকা দরকার সেই প্রতিটি দিকে ’পটু‘তে ছিল। গল্পের শেষের যে টুইস্ট দেখার জন্য আমরা বেশি আগ্রহী, সে টুইস্টটাও ছিল এই সিনেমায়। আর যেহেতু শোয়েব মনির আমাদের নারায়ণগঞ্জের ছেলে, তার অভিনয় দেখার একটা আগ্রহ ছিল। এমন বড় ধরনের সিনেমায় আমাদের নারায়ণগঞ্জের ছেলে প্রধান চরিত্রে আছে এটা আমাদের জন্য একটা বড় বিষয়। শোয়েব মনির দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। এখানে গালিব সরকার সহ অন্যান্য যারা ছিলেন,তাদের অভিনয়ের অত্যন্ত ভালো লেগেছে। নায়ক নায়িকারা অভিনয়ের ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েছে, আর সেটাই ছবিতে ফুটো উঠেছে। গল্পের সংলাপের জায়গায় হয়তো আরো কিছু কাজ করা যেত তবে অভিনয় ক্ষেত্রে যার অভিনয় করেছেন তাদের প্রচেষ্টা সর্বোচ্চ ছিল বলে আমার মনে হয়। লোকেশন এবং গল্পের টুইস্ট আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আমাদের ছেলেবেলার ঘ্রাণ এই সিনেমা হলে আছে। বহু বছর পর এই একটি ছবি দেখার জন্যই সিনেমা হলে আসা। এই ছবিটি আসলে আামদের সমাজের সকল শ্রেণীর পেশার মানুষেরই গল্প বলে। এই ছবিতে গল্প বলার ধরনটা আধুনিক ছিল তবে সকলের পিছনের গল্পটাও ফুটে উঠেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি শোয়েব মনির যে ধরনের অভিনেতা, সেই মানের ডিরেক্টর, স্ক্রিপ্ট বা গল্প তিনি এখনো পায়নি। যদি সেটা পায় তাহলে তাকে দিয়ে কি পরিমান কাজ করানো যাবে, পটু আসলে সেই বিষয়ের একটি ছোটখাটো দৃষ্টান্ত। আমার মতে শোয়েব মনিরকে নিয়ে অনেক বড় কোন কাজ করা সম্ভব। বাংলাদেশের সিনেমা জগতের টিপিকাল সংজ্ঞা বদলে গেছে। বর্তমানে মালায়ামের সিনেমা গুলো প্রভাব বিস্তার করছে তবে সে দিক থেকে লক্ষ্য রেখো আমাদের নারায়ণগঞ্জের ছেলেকে বড় কোন কাজ করানো সম্ভব।

সিনেমা দেখতে আসা সবে মাত্র এসএসসি পরিক্ষার্থী আরফিন সাবরিনা জানায়, বিভিন্ন জায়গায় পোষ্টার দেখেছি। আর ইউটিউবে এই ছবির ট্রিলার দেখেছি, তাই পরিবার নিয়ে পটু দেখতে এসেছি। সিনেমা দেখে অনেক ভালো লাগলো। সিনেমার নায়ক নায়িকাকে ও দেখতে পেরেছি, তাদের সাথে ছবি তুলেছি। খুব ভালো লেগেছে। এই সিনেমার ট্রেলার দেখে যতোটুকু ভালো মনে করেছিলাম তার থেকেও বেশি ভালো রেগেছে আমার কাছে।

সিনেমার নায়ক ইভান সাইর নারায়ণগঞ্জের মানুষ শিল্প এবং সাহিত্যের প্রতি অনেক আন্তরিক যেটা আমাকে দেখে আমার মত শিল্পীদের অনেক অনুপ্রাণিত করে। প্রচুর সিনেমাটি মূলত আমার অভিষেক এই সিনেমা জগতে কিন্তু এর আগেও যেখানে কাজ করেছি প্রতি ক্ষেত্রেই নারায়ণগঞ্জের মানুষ এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষের আন্তরিকতা সম্বন্ধে জেনেছি। যেহেতু এই সিনেমাটা আমার অভিশাপ আমার স্মৃতিতে নারায়ণগঞ্জ আজীবন অমর হয়ে থাকবে। এখানে এসে দর্শকদের সাথে সিনেমা দেখে খুব আনন্দিত লাগছে। দর্শকদের সাথে সিনেমা দেখে তাদের ছাড়া পেয়ে খুব আনন্দিত লাগছে। সিনেমা হলের বিগত তিন দুই তিন বছরের ইতিহাস দেখে আমরা বলি তাহলে মানুষ এখন আসলে সিনেমা হল মুখে হচ্ছে পরিবেশের গল্প এবং মানসম্মত সিনেমার গল্প থেকে দেওয়া আছে তাহলে অবশ্যই আরো মানুষ সিনেমা মুখী এবং সিনেমা হল মুখে হবে। এর সাথে অটোব্রত ভাবে আরো কিছু বিষয় কাজ করে। সবার প্রতি আমন্ত্রণ রইল ফটো দেখার ভালো খারাপ যায় হোক আপনারা আপনাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন সিনেমাটি দেখে।

সিনেমার নায়িকা আফরা সাইয়ারা বলেন, এখানে আমার প্রথম সিনেমা দর্শকদের সাথে এসে দেখতে খুব ভালো লাগছে। তাদের আনন্দ আমাদের আরও উৎসাহিত করেছে। এখানে আমাদের গুরু শোয়েব মনির ভাইয়ের সাড়া দেখে আমরা মন্ত্রমুগ্ধ। মনির ভাই আসলে একজন খুব ভালো মানুষ, আমি তার মতো একজন মানুষের সাথে একই সিনেমায় কাজ করতে পেরে নিজেকে খুব ধন্য মনে করছি। বাস্তবিক জীবনেও মনির ভাই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের একজন লোক। কাজ করার সময় তিনি বয়স আমার থেকে বড় হলেও কখনো আসলে ওইভাবেই এড়িয়ে চলেন নি। যে কোন ভুল আমাদেরকে বুঝিয়ে বলেছেন। যদিও এই সিনেমাটি আমার সিনেমা জগতের প্রথম কাজ তবু এখানে শোয়েব মনের ভাই সহ অন্যান্য আরো যারা আছেন তারা এমন ভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন যাতে আমার মনেই হয়নি এটা আমার প্রথম সিনেমা। সব ক্ষেত্রেই তারা খুব আন্তরিক ছিলেন। পটু সিনেমার গল্প একটি বাস্তবজীবনের গল্প। সবাইকে আমন্ত্রন রইলো সিনেমাটি এসে দেখে যাওয়ার। সিনেমা হলে সিনেমা দেখার মধ্যে একটি অন্যরকম বিষয় আছে। সবাইকে বলবো আমাদের পটু দেখতে সিনেমা হলে আসুন।

সিনেমার প্রধান চরিত্রের অন্যতম অভিনেতা শোয়েব মনির বলেন, ছোট থেকে এখানে থিয়েটারের কাজ করেছি। সব সময় একটা স্বপ্ন ছিল আমার বড় পর্দায় ছবি কখন আসবে। সেই স্বপ্নটাই এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই সিনেমার শুটিংয়ে কাজ করার সময় খুব আনন্দ এবং উদ্দীপনা কাজ করছিল। তাছাড়া যখন প্রচার-প্রচারণা শুরু হয় তখনও খুব আনন্দ কাজ করেছে। আমার শহরে আমার ছবি চলছে এটা আসলে আমার কাছে বড় বিষয়। আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষের থেকে ভালোবাসাই পেয়েছি, এই ভালবাসায় আমার কাছ থেকে সবথেকে বড় পাওয়া। সবাইকে আমন্ত্রণ রইল পটু দেখার। এর ভিতরে অনেকগুলো মেসেজ আছে যেগুলো আমরা চাই সমাজ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হোক। বাংলাদেশের যে শিশু পাচার চক্র আছে তারা যেভাবে একটি শিশুর চোখ, কিডনি বের করে নিয়ে বিক্রি করে বা একটি শিশুকে দিয়ে ভিক্ষা করায় সে বিষয়টা আসলে এখানে আছে। পদ্মার পাড়ে শিশু হারিয়ে যায় কেন / একটি কুসংস্কারের মাঝেও যে কি অপরাধ চলছে সেটাই এই সিনেমাতে এখানে আছে। এই সিনেমা সবার জন্য।

পটুর পরিচালক আহমেদ হুমায়ন বলেন, সিনেমার জন্য নারায়ণগঞ্জ আসলে একটি আশীর্বাদের জায়গা। ছোটবেলায় সিনেমার বিভিন্ন পোস্টার দেখতাম লেখাটা থাকতো ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জে মুক্তি পাবে। সিনেমার মুক্তির ক্ষেত্রে সব সময় নারায়ণগঞ্জ লেখাটা বেশি দেখতাম। সেই শহরে আমার সিনেমা চলছে এর থেকে আমার কাছে সবথেকে বড় আনন্দের বিষয়। এই নারায়ণগঞ্জের মতো শহর আমার সিনেমা চলছে এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। এই নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখনো এত সিনেমা দেখে বা সিনেমা হল আসে এটা দেখে আমি খুব মুগ্ধ। সকালবেলা সাধারণত সিনেমা হলে মানুষের আনাগোনা থাকে না তবে আজকের সিনেমায় সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ দর্শক এসেছে তাতে আমি মন্ত্রমুগ্ধ। পটু সিনেমাতে আসলে সামাজিক কিছু বার্তা বা মেসেজ ছিল। একটা নিরু বিচ্ছিন্ন এলাকায় মানুষ যখন বসবাস করতে যায়, তারা আসলে নিজের সবকিছু নিয়েই সেখানে যায়। সে সময় তাদেরকে যদি সার্বিক দিক থেকে একটু সাপোর্ট করা হয় তাহলে তারা খুব সহজেই দাঁড়াতে পারে। সিনেমাতে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের একটি গল্প আছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী কাকে বিশ্বাস করা উচিত কাকে বিশ্বাস করা উচিত নয় সেটারও একটা বিষয় সিনেমার মেসেজের ছিল। আমার পটু নয়, বিভিন্ন সিনেমায় বিগত দুই বছর ধরে মানুষ দেখছে। জনগণ আবারও সিনেমা হলমুখী হচ্ছে। আর এটার অন্যতম একটি কারণ হলো সিনেমা হলগুলো নিজেকে আবার নতুন ভাবে সাজাচ্ছে, এর সাথে নতুন আঙ্গিকে গল্প সিনেমা তৈরি হচ্ছে। গতবার ও এইবারের রোজার ঈদে যে কয়টি সিনেমা রিলিজ হয়েছে প্রতিটি তেই আমরা দর্শকদের থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। একটা সিনেমা ভালো হোক বা খারাপ, দর্শক সেটা সিনেমা হলে গিয়ে দেখে তারপর সেই বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা করছে। আগে কিন্তু সেটা হতো না, মানুষ এক হিসেবে সিনেমা হল বিমুখী হয়ে পরেছিলো। পরিচালক হিসেবে আমার বিশ্বাস যারা পটু দেখবে তারা সিনেমা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটেও হল থেকে বের হতে পারবে না। জনগণকে হরমুখী করতে হলে বড় একটি বিষয় হচ্ছে মানসম্মত সিনেমা বানানো। যদি মানসম্মত সিনেমা হয় আর স্বাস্থ্যকর দেখার পরবেশ হয় তাহলে জনগণ অবশ্যই আসবে। এখনো আমাদের দেশে কিছু সিনেমা হল এমনও আছে, যেখানে একজন সুস্থ মানুষ গিয়ে একটি সিনেমা দেখতে পারবেন না । হলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। সবার প্রতি আমন্ত্রণ থাকবে আমার পটু সিনেমাটা দেখার। সিনেমাটা দেখে প্রশংসা করেন বা সমালোচনা করেন আমার অনুরোধ থাকবে সিনেমাটি দেখে করা আলোচনা বা সমালোচনা করা। যেকোনো সিনেমার একটি ট্রেলার দেখে গল্প অনুমান করা যায় না।

RSS
Follow by Email