না.গঞ্জ কালচার অফিসার রুনা লায়লার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে জেলা কালচার অফিসার রুনা লায়লার বিরুদ্ধে। পতিত শেখ হাসিনার সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব খাটিয়ে করেছেন হকারদের থেকে মোটা অঙ্কের চাদাবাজিঁও। শিল্পকলা ভবনের সামনে হকার বসিয়ে চাঁদা আদায়, হলরুম ভাড়া প্রদানে অনিয়ম, শিল্পকলার স্টাফদের দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজ করানো, অনুসারি গুটি কয়েক শিল্পীকে প্রাধান্য দেয়া, বাকী শিল্পীদের অবমূল্যায়ন করাসহ ভুয়া বিল ভাউচার করাও অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতির মহারাণী নামে আক্ষা পাওয়া রুনা লায়লার বিরুদ্ধে। এই রুনা লায়লার বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাটে।
সম্প্রতি এ সকল অভিযোগ ছাপা হয়েছে বিভিন্ন স্থানীয় দৈনিক প্রত্রিকায়। পত্রিকার প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে সকল অনিয়ম- দূর্নীতিসহ রুনা লায়লার নিয়োগ পরীক্ষাকালীন সময়ের ‘সাদা খাতা’ প্রসঙ্গ। ৫ আগস্টের শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছে রুনা লায়লার অনিয়মের শিকার ভুক্তভোগীরা। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের অভিযোগগুলো তুলো ধরা হলো..
কালচার অফিসার নিয়োগ পরীক্ষায় ‘সাদা খাতা’ প্রসঙ্গ:
অভিযোগ উঠে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার পদে আবেদনের সময় লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন রুনা লায়লা। পরিক্ষার হল থেকে বের হয়ে খুব দম্ভের সঙ্গে রুনা লায়লা বলেছিলেন, ‘সাদা খাতা জমা দিয়ে এলাম, দেখি নিয়োগ ঠেকায় কে’ ?, এরপর নারায়ণগঞ্জের কালচার অফিসার পদে নিয়োগও পান তিনি। অথচ এ পদের জন্য নির্ধারিত অভিজ্ঞতাই ছিল না তার। নিয়ম অনুযায়ী, কালচারাল অফিসার পদে নিয়োগ পেতে অনার্স পাসের ক্ষেত্রে ন্যুনতম ১০ বছর এবং মাস্টার্স পাসের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের একাডেমিক অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। রুনা লায়লার এমন কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। এ নিয়ে ওই সময় জাতীয় দৈনিকে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।
সুত্র জানায়, তিনি দেশ টিভির অভ্যর্থনা ডেক্সে কর্মরত থাকার সময় সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের নজরে পড়েন। এর পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হয়ে যান কালচালার অফিসার। আসাদুজ্জামান নূরের বান্ধবী হওয়ায় রুনা লায়লা কাউকে পরোয়া করতেন না। কালচালার অফিসার পদে নিয়োগের শুরু থেকেই বেপরোয়া ছিলেন রুনা লায়লা।
দুদকের মামলায় আসামী রুনা লায়লা:
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে একটানা ১৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন লিয়াকত আলী। সে সময় তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। দীর্ঘ আড়াই বছর অনুসন্ধান শেষে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলা করে দূনীর্তি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় রুনা লায়লাসহ আরও ২৩জনকে আসামী করা হয়।
হকার বসিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়:
কালচার অফিসার পদে যোগদানের পর থেকেই নগরীর শিল্পকলা একাডেমী ভবনের সামনে ৩০ জন হকার বসিয়েছেন রুনা লায়লা। অভিযোগ করা হয়, গত ৫ বছরে এই হকারদের থেকে অর্ধকোটি টাকার চাঁদা আদায় করেছেন তিনি। হকাররা জানায়, দোকান বসানোর জন্য হকারদের কাছ থেকে সালামি বাবদ ৩০ লাখ টাকা এবং ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসেবে গত ৫ বছর ২ মাসে আরও প্রায় ২০ লাখ টাকা নেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হকাররা জানায়, ‘আমরা গরীব মানুষ, আমাদেরকে টাকা দিতে বলেছে আমরা টাকা দিয়েছি। দোকান প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেয়া হতো, সেই টাকা যে উত্তোলন করতো সে নিতো ৫ হাজার এবং বাকী ২৫ হাজার টাকা রুনা লায়লা আপা নিতো। তবে, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন আর কেউ সে টাকা নেয় না।’
জেলা শিল্পকলায় অনুসারী শিল্পীদেরকে প্রাধান্য:
জেলার বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে রুনা লায়লা তার অনুগত-অনুসারী শিল্পীদেরকে পরিবেশনা করাতে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এ নিয়ে অন্যান্য শিল্পীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শিল্পীরা বলেন, ‘শিল্পকলার মতো একটি প্রতিষ্ঠানে রুনা লায়লার এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ শোভনীয় নয়। সকল শিল্পীকে তার সমান ভাবে দেখা উচিত।’ সুবিধা বঞ্চিত শিল্পীরা আরও অভিযোগ করেন, করোনাকালীন সময়ে দুঃস্থ ও অসহায় শিল্পীদের মাঝে সরকারের দেওয়া অনুদানের তালিকায় বারবার নিজ অনুসারীদের নাম প্রদান করেছেন। এছাড়াও তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীকে নিজের ব্যক্তিগত বাড়ী বানিয়ে রাখা ও শিল্পকলার স্টাফদের দিয়ে তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ করানো অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিল্পকলার অফিসিয়াল সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের নিয়ে এসে শিল্পকলাতে আতিথেয়তা করানো হতো এবং এর খরচ শিল্পকলার ভাউচারে তুলে দিয়ে সরকারি অর্থ নষ্ট করেন বলেও জানা গেছে।