না.গঞ্জে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘সব পুড়িয়ে দিয়েছে, এদের আক্রোশ পুলিশ ও আ.লীগে’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘আপনারা সকলে ধ্বংসের লিলা খেলা দেখেছেন। জামায়াত-বিএনপি-জঙ্গি যারা স্বাধীনতা চায় নি, তারা সন্ত্রাসের উত্থান ঘটিয়ে দেশেকে অকার্যকর করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস, আওয়ামী লীগের যত স্থাপনা ছিল সব পুড়িয়ে দিয়েছে। এদের আক্রোশটাই ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রতি। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি বাহিনী এদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। যখন তারা আর পারছিলেন না, তখন প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে সেনাবাহীনির কাছে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য সাহায্য নেওয়া হয়। ছাত্রদের মিসগাইড করে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। যারা মৃত্যবরণ করেছেন তাদের অনেকেই সাধারণ মানুষ। সেই সাথে পুলিশসহ আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের অনেকেই শাহাদাত বরণ করেছেন। আমাদের দেশে খুব শিঘ্রই শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
শনিবার (২৭ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ দিন কোটা আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের ধ্বংসপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা পরিদর্শনে আসেন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাইনবোর্ডে পুলিশ বক্স, ডাচ বাংলা ব্যাংক ভবন ও ক্ষতিগ্রস্থ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখান থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পিবিআই কার্যালয় হয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে চাষাড়া, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশদের উপর হামলা করা হয়েছে। পিবিআই এরই মধ্যে তদন্ত কাজে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। সেই পিবিআই অফিস ভাঙচুর, ৫টি গাড়িসহ অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আটকে পড়া ১২ জন পিবিআই সদস্যকে বিজিবি উদ্ধার করেছেস, যে জন্য তারা বেঁচে বেরিয়েছেন। পাসপোর্ট অফিসে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে। ডাটা নষ্ট করে দিয়ে যা ছিল সব শেষ করে দিয়েছে। ২নং রেল গেইট অফিসে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় আক্রমণের চেষ্টাও করেছিল তারা।
কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে হেফাজতে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে একজন তার বাবাকে ফোন করে বলেছে, ‘আমি আত্মগোপণে আছি। আপনারা আমি কোথায় আছি জানাবেন না।’ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আমরা তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করছি যে কারা তাদের উপর আক্রমণ করতে চাইছে। এসব জিজ্ঞাসা করে পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, ২০ জুলাই শিমড়াইল পুলিশ ক্যাম্প আক্রমণ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সেখানে থাকা মা হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করেছে ওরা। একটা হাসপাতালে ওরা কিভাবে অগ্নিসংযোগ করে। সেখানে আমাদের পুলিশের ব্যারাক ছিল। তাদেরকে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতালে আগুন দিল। সেখানে গর্ভবর্তী মায়েরা ছিলেন। চারদিক থেকে এমন ভাবে আগুন দেওয়া হয়েছিল, হাসপাতালের সবকিছু পুড়ে ছাই হওয়ার সাথে মায়েরাও মারা যেতেন। পুলিশ বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা সাহায্যে মায়েরা রক্ষা পেয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ২ জন নবজাতক, ৭ জন গর্ভবতী মাসহ ১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। একজন নারী সাংবাদিককে কিভাবে নাযেহাল করা হয়েছে। এরা মানুষের শত্রু, এরা জনগণের শত্রু, দেশের শত্রু। ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ৪৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরা পদ্মা সেতুর ডেটা প্ল্যান ওরা পুড়িয়ে দিয়েছে। ডিসেস্টার ম্যানেজমেন্টের ত্রাণ ভবন ওরা বিনষ্ট করেছে। আমাদের ইন্টারনেট সংযোগের স্থাপনা ওরা পুড়িয়ে দিয়েছে। বিটিভি ভবন বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধরে রেখেছিল। শতবর্ষের বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশের অনন্য দিকগুলো আর্কাইভ করা ছিল। ওরা এগুলো ধ্বংস করেছে। মেট্রোরেল, এলেভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সুফল জনগণ পাচ্ছিল, সেগুলোকে তারা পুরিয়ে দিয়েছে।
পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ পরিদর্শন শেষে ২নং রেল গেইট এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে আসেন। এসময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।