না.গঞ্জে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পেতে ‘বিনা লাভের বাজার’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সাধারণ মানুষের দ্বারপ্রান্তে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে চালু করা হয়েছে ‘বিনা লাভের বাজার’। পেঁয়াজ, কাচামরিচ, আলু, ডিম ও বিভিন্ন সবজি মিলবে এ বাজারে। কলেজ রোডে সকাল ১০টা থেকে অস্থায়ীভাবে বসবে এই বাজার। সিন্ডিকেট ভাঙার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন সুলভ মূল্যে পণ্য সরবরাহ করবে শিক্ষার্থীরা।
২১ অক্টোবর থেকে কলেজ রোডে বিনা লাভের বাজার চালু করে শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পণ্য কেনা বেচা হবে এখানে। সকাল থেকে ভোক্তার আগ্রহে পণ্য সাম্রগী বিক্রি শুরু হলেও, দুপুর আড়াইটার মধ্যে স্টক ফুরিয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২য় দিনেও বাজারটিতে কেনাবেচা জমে উঠেছে। সেখানে দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১১৫ টাকা, ডিম প্রতি পিছ ১৩ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সড়কে যাতায়াতকারী, স্থানীয়রাসহ দূর-দূরান্ত থেকে ভোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী পছন্দমত পণ্য ক্রয় করছেন। বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য পাওয়ায় সন্তুষ্ট ক্রেতারা।
পেঁয়াজ কিনতে আসা রিয়াজ মিয়া লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, দ্বিগু বাবুর বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১২৫ টাকা চাইছিল। এখানে পেঁয়াজ ১১৫ টাকা কেজি দেখছি। দাম কই দেইখা নিছি। ছাত্রদের এ উদ্যোগ অনেক ভালো লাগছে। বাজারগুলো তো এখন আগুন। সবজি থিকা নিয়া, মাছ-মাংস সব কিছুর দাম বেশি। ছাত্ররা যে বিনা লাভের বাজার করলো, এটা আমাগো মত সাধারণ মানুষগো লেইগা ভালো।
ইসমাইল মিয়া নামে অপর এক ক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, রিকশা নিয়া এ রাস্তা দিয়া যাবার সময় ছাত্রদের এ বাজার চোখে পড়লো। আলু, পেঁয়াজের দাম দেখলাম কম রাখতেছে। বাজারে আলু ৫৪ টাকা দেইখা আসছি। ছাত্ররা এখানে ৫০ টাকা করে বিক্রি করতাছে। তাই আমি ২ কেজি আলু নিলাম। অল্প কয়টা টাকা বাঁচাইতে পারলেও ভালো।
বিনা লাভের বাজারের প্রতিনিধি নাজমুল ইসলাম লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, বার বার হাত বদলের পর ও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে খেটে খাওয়া মানুষ থেকে নিয়ে সকল শ্রেণীর মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীরা চিন্তা করেছি, কিভাবে বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙা যায়, সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের কাছে পণ্য সামগ্রী পৌছে দেয়া যায়; সে চিন্তা থেকেই আমরা শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে অস্থায়ীভাবে এ বাজার বসিয়েছি। কলেজ রোডে আমরা সবজি, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছি। ক্রয়মূল্য ও পরিবহন খরচ যোগে এক একটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। আমরা স্টকের জন্য আলু ও পেঁয়াজ ৬০ কেজি করে, পুইশাক ১৭ কেজি ও লাউ শাক ১০ কেজি, ডাটা শাক ১০ কেজি এনেছিলাম। প্রায় সব কিছুই স্টক আউট হয়েছে। ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা বেশি, আমরা সামনে আরও পণ্য আনার চেষ্টা করবো।
অপর প্রতিনিধি ফারদিন শেখ লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা সরাসরি উৎপাদক, কৃষক, কোল্ড স্টোরেজ থেকে পণ্য সামগ্রী আনার চেষ্টা করছি। গতকাল মুন্সিগঞ্জের সিপাহীপাড়া বাজার থেকে সবজি ও শাক এনেছিলাম। আজকে শহরে ইজিবাইক চালকদের অবরোধ ও অন্যান্য কারণে স্টকে অনেক পণ্য আনতে পারিনি। তবে আগামীকাল আরও বেশি পরিমাণে পণ্য আনবো। আমরা শিক্ষার্থীরা মিলে আরও কিছু পয়েন্টে সুলভ মূল্যে মানুষদের হাতে পণ্য পৌঁছুতে চাই। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার আগ পর্যন্ত আমরা কাজ করবো। সেই সাথে মানুষের সেবা করার ইচ্ছে আমাদের। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সকলের সহায়তা।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে সমর্থণ জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফারহানা মানিক মুনা। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদের পক্ষ থেকে ও আমার ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য হলো, বাজার থেকে মাফিয়াদের উৎখাত করতে হবে। বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে, পণ্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ মেয়াদী উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে কাজ করতে হবে। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে যে যে কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে সে জায়গাতে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা হচ্ছে একটি ডেমো, বাজারে পণ্য সামগ্রী নিয়ন্ত্রণ হলে এই সিস্টেম করা যায় যাতে ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাজারে দু-চার জন একসাথে হলে, বাজারে পণ্যের মূল্য তাদের নিয়ন্ত্রণে এসে পড়ে এ প্রবণতা থেকে সরে এসে কাজ করতে হবে। নতুন বাংলাদেশে বাজার সিন্ডিকেট বিলুপ্ত করে পণ্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রনে দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ নিতে হবে।