না.গঞ্জে বড়দিন উপলক্ষে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি তারিখ পার হলেই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিন। এই উৎসবকে ঘিড়ে জেলার গির্জাগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। উৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে এখনই। শহরের গির্জাগুলোকে রাঙানোর জন্য চলছে আলোকসজ্জা এবং নতুন করে রং করার কাজ। খুব ব্যস্ততার মধ্যেই চলছে শেষ মূহুর্তের তোড়জোড়।
রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) সরেজমিনে কিছুটা এমন দৃশ্য দেখা যায় শহরের চাষাঢ়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশের সাধু পৌলের গির্জা ও কালীরবাজার এলাকায় নারায়ণগঞ্জ ব্যাপ্টিস্ট চার্চে। ভিতরে ও বাইরে চলছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ। রঙ মিস্ত্রী ভবনের দেওয়ালে নতুন রঙ করছেন। চলছে চারিদিকের আলোকসজ্জার কাজ। এছাড়াও গির্জার ভেতরে রঙিন কাগজ, ফুল ও নানান রংঙের বাহারি আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। খড়কুটো বিছানো গোশালা করা হচ্ছে। যেখানে শিশু যিশুর মূর্তির সঙ্গে থাকবে আরও কিছু মূর্তি।
নারায়ণগঞ্জ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ কমিটির সহ-সভাপতি রনি বিশ্বাস লাইভ নারায়ণগঞ্জ বলেন, বড়দিন হচ্ছে বিশ্বের সমগ্র মানব জাতির পাপমুক্তির দিন। এদিনে প্রভু যিশু স্বর্গধাম থেকে ধরাধামে এসেছিলেন। মানবজাতির মুক্তির জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এজন্যই আমরা বড়দিন উদযাপন করি। বড়দিন উপলক্ষে আমরা বিশেষ প্রার্থনা, বাচ্চাদের নিয়ে কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উজ্জাপন করে থাকি। ইতোমধ্যে আমরা বড়দিন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করছি আগামীকাল আমাদের উজ্জাপন খুব সুন্দর এবং শান্তিপূর্ন হবে। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো। বড়দিন উপলকক্ষে পুলিশ দেওয়া হবে জানিয়েছে প্রশাসন। এছাড়াও সার্বিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন তারা। সিটি করপোরেশন পক্ষ থেকে আলোকসজ্জা সহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন বলেন, বড়দিন উপলক্ষে আজ বিকেল ৪টা থেকে কাল সারাদিন সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। বড়দিনকে ঘিরে কোন হুমকি বা শঙ্কা নেই। তবুও আমরা অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সবসময় জেলাজুড়ে সচেষ্ট রয়েছে। আমাদের শহরের দুটি গির্জায় আজ বিকেল থেকে বিশেষ নিরাপত্তা নিয়োজিত থাকবে। কঠোর নিরাপত্তার উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
মূলত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী দুটি গোত্রের (ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্ট) জন্য নারায়ণগঞ্জ শহরে দুটি গির্জা রয়েছে। ক্যাথলিকদের জন্য শহরের ১৩৫ বঙ্গবন্ধু সড়কে সাধু পৌলের গির্জা ও ব্যাপ্টিস্টদের জন্য সিরাজউদ্দৌলা সড়কে ব্যাপ্টিস্ট চার্চ। ব্যাপ্টিস্ট চার্চটি ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। চার্চ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রেভারেন্ড রামচরণ ঘোষের নাম বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য। এ চার্চে ধর্মীয় আচার ছাড়াও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজকর্মও হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে চিকিৎসা সেবা, মাতৃসদন, শিক্ষাদান উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে সাধু পৌলের গির্জা ১৯৪৯ সালে ইতালিয়ান ফাদার জন সে ক্যাথলিক গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গির্জার নাম দেন সাধু পৌলের গির্জা।
জানা যায়, শহরের এই গীর্জা ছাড়াও ফতুল্লার সস্তাপুর, পাগলা, দেলপাড়া, বন্দরের লক্ষ্মণখোলা, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড, সদর থানার গোগনগর এলাকায় খ্রিস্টানদের বসবাস আছে। তাদের বেশির ভাগই চাকরিজীবী। বিশেষ করে গার্মেন্টস, বায়িং হাউস, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও বিউটি পার্লারে কর্মরত। নারায়ণগঞ্জে ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্ট ছাড়াও খ্রিস্টানদের কয়েকটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের লোকও রয়েছে। তাদের জন্য নারায়ণগঞ্জে কোনো চার্চ নেই। তারা বাসায় কিংবা অফিসে অথবা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বড়দিন উপলক্ষে অস্থায়ী গির্জা তৈরি ও ক্রিসমাস-ট্রি সাজিয়ে থাকেন।