না.গঞ্জে প্রতিমা তৈরীতে মৃৎশিল্পীরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন
# গতবছরের চেয়ে এবার স্বল্প পরিসরে পূজার আয়োজন করা হয়েছে: পুরোহিত দীপঙ্কর চক্রবর্তী
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে শেষ মূহুর্তে চলছে পূজার প্রস্তুতি ও প্রতিমা তৈরীর কাজ। প্রতিমা তৈরীর কাজে দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পী ও কারগিররা। কাদামাটি, খড়, বাঁশ, সুতলি দিয়ে নিজ হাতে প্রতিমায় আকৃতি দিচ্ছেন শিল্পীরা। মাটি দিয়ে প্রতিমার গঠন সাজানো হলেই দু থেকে একদিন শুকানো হয়। এরপর রং-তুলির ছোঁয়ায় সুন্দর করে সাজানো হয় প্রতিমা। এভাবেই মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গতবছরের তুলনায় এবার অনেকটা চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা।
নগরীর দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, সাহাপাড়া, নয়ামাটি, উকিলপাড়া, আমলাপাড়া, নিতাইগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মন্দির ও মন্ডপ প্রাঙ্গনে দূর্গা পূজা উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেওভোগ আখড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দূর্গা, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক, অসুরের প্রতিমা তৈরীতে মৃৎশিল্পীরা ধ্যানমগ্ন রয়েছেন। তাদের সাথে কথা হলে জানান, প্রতিমা তৈরীর কাজে দিন রাত কাজ করতে হচ্ছে। এমনকি খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের সময়টাও থাকছে না তাদের হাতে। ৯ অক্টোবর দূর্গা পূজা শুরু হবে বলে যেভাবেই হোক ৮ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।
বিশ্বজিৎ বিশ্বাস নামে এক শিল্পী লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলে, আমি ও আমার ভাই মিলে এবার পূজা উপলক্ষে ৭ টি প্রতিমার তৈরীর কাজ করছি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক জায়গায় দূর্গা পূজার আয়োজন হবে না বলে আমাদের জানানো হয়েছিল। তবে তিন দিন আগে সেসকল জায়গায় পূজা উদযাপন হবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখন সেখান থেকে আমাদের প্রতিমা তৈরীর কাজ দেয়া হয়। তাই হঠাৎ করে কাজ বেড়ে গেছে। এছাড়াও বৈরী আবহাওয়ায় আমাদের কাজে সমস্যা হয়েছে। তবে আশা করছি যথাসময়ে প্রতিমা তৈরী করতে পারবো।
মিঠুন চক্রবর্তী নামে এক কারিগর বলেন, প্রতিমা তৈরীতে অনেক কাজ বাকি। বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন দেরী হয়েছে। তাই এখন ঘুমের পরিসর কমিয়ে রাত ও দিন মিলিয়ে কাজ করছি। ৯ তারিখের আগে প্রতিমাগুলো সুন্দর করে তৈরী করতে হবে।
সঞ্জয় কুমার আচার্য নামে অপর এক শিল্পী লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, গত সপ্তাহের বৈরী আবহাওয়ায় কাজ অনেকটা পিছিয়ে গেছে। একটা প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ করতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। যেখানে, খড়, বাঁশ, সুতলি দিয়ে কাঠামো তৈরী করে মাটি দিতে হয়। এরপরই একে শুখানোর জন্য সময় দিতে হয়। এর পর রঙ দিয়ে সুন্দর করে প্রতিমা রাঙাতে হয়। এভাবে সব মিলিয়ে সপ্তাহ খানেকের মত লাগে এক একেটি প্রতিমা তৈরীতে। আশা রাখছি, কষ্ট হলেও পূজার আগেই প্রতিমাগুলো সম্পূর্ণ হবে।
এদিকে, গত বছরের তুলনায় স্বল্প পরিসরে দূর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রী শ্রী রাজা লক্ষীনারায়ন জিউর বিগ্রহ মন্দিরের পুরোহিত দীপঙ্কর চক্রবর্তী। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, এবার অল্প পরিসরে দূর্গা পূজা উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। কিছুদিন আগে দেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে, এতে আমাদের দেশের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অল্প পরিসরে আমরা পূজার আয়োজন করেছি। মায়ের পূজা তো করতেই হবে। আমরা মায়ের কাছে প্রার্থণা করি, দেশ ও জাতির মঙ্গল হোক। দেশের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় মা আসবেন।
তিনি আরও জানান, এবার ২ অক্টোবর মহালয়া এর মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা শুরু হবে। ৯ অক্টোবর বুধবার মহাষ্ষ্ঠী পূজা উদযাপনের মাধ্যমে দূর্গাপূজা শুরু হবে। এর পর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী হয়ে দশমীর দিন মাকে বিসর্জন দিয়ে আনন্দের সাথে আমরা সকলে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি ঘটবে। সকলের মঙ্গল কামনায় আমরা মা‘র কাছে প্রার্থণা করবো।