না.গঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিন: অভিযানে দায় সারছে প্রশাসন, বাজারে বিকল্প ব্যাগের দেখা নেই
# ‘বাজার,পাড়া-মহল্লার দোকানে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হতে দেখছি’
# ‘সরকারের উচিত পাট-কাপড়ের ব্যাগের ব্যবস্থা করা’
# বিকল্প ব্যাগ বাজারে আনার চেষ্টা চলছে: অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশ জুড়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে পলিথিন ব্যাগ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে, প্রতিনিয়িত কাঁচাবাজারের ব্যবহার রোধ থেকে পলিথিন উৎপাদনকারী পর্যন্ত প্রায় সকল পর্যায়ে চলছে অভিযান। এ সকল অভিযানে পলিথিন ব্যাগ জব্দসহ ব্যবসায়ী কিংবা উৎপাদকের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে আইনী কঠোর ব্যবস্থা। পলিথিন বন্ধে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চলছে নিয়মিত অভিযান। তবে কোথাও পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। কিন্তু সাধারণ মানুষের দাবি ‘কাঁচাবাজার, ভাসমান বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার চলছেই। এসবের বিকল্প হিসেবে যদি পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা যায় তাহলে পরিবেশ দূষণ থেকে প্রতিকার পাওয়া যাবে।’
রবিবার সরেজমিন নগরীর কালির বাজার, দ্বিগুবাবুর বাজারে গিয়ে লক্ষ্য করা যায়, সবজি ও শাক কিনতে কাঁচাবাজারে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। লাউ, কুমড়া, টমেটা, আলু, গাজর, পেঁয়াজ, সীম, ধুন্দুল, লাল শাক, মূলা শাকসহ বিভিন্ন সবজি ক্রয় করে তা পলিথিন ব্যাগে বহন করছেন সকলে। মাছ, মাংস ও ডিমের দোকানেও একই চিত্র দেখা যায়। চাল, ডাল ও বিভিন্ন মসলার দোকানে দেখা যায়, কাগজের ঠোঙায় করে পণ্য সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। তবে একাধিক পণ্য বহন করতে শেষমেষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে বাজারে কোথাও পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ পাওয়া যায় নি। দশ, পনের কি বিশ টাকায় প্লাস্টিক জাতের ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে। পাট, কাপড়ের কোন ব্যাগ দেখা যায় নি। এইসকল ব্যাগ বাজারে যাতে পাওয়া যায় প্রশাসনকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিক্রেতারা জানান, বাজারে অভিযান চালানো হলে পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব না। পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে করে বাজার পলিথিনের সরবরাহ বন্ধ হবে।
সেলিম নামে এক ক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হইছে তা শুনছি। কিন্তু বাজার থেকে এগুলো উঠে নাই এখনও। এর উপরে পাটের ব্যাগ বা কাপড়ের ব্যাগ যাই বলেন, এরকম কোন ব্যাগ বাজারে পাই নাই। মানুষে সবজি, মাছ, মাংস নিতে কি ব্যবহার করবো। পলিথিন ছাড়া কোন ব্যাগ নাই। পাট-কাপড়ের ব্যাগ সহজলভ্য হলে আমরা তা ব্যবহার করবো। সরকারের উচিত, পলিথিন বন্ধের সাথে কাপড়-পাটের ব্যাগের ব্যবস্থা করা।
নুসরাত জাহান নামে অপর এক ক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, যখন ছোট ছিলাম, আমার বাবা ডুলায় কইরা বাজার করছে। এখন এগুলো আর দেখি না। মাছ, মাংস, সবজি সবকিছুই দোকানদারেরা পলিথিনে কইরা দেয়। কাঁচাবাজার, ফলের দোকান, পাড়া-মহল্লার দোকানেও পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার দেখছি। কোথাও পাট, কাপড়ের কোন ব্যাগ দেখি নাই। পলিথিনের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়. পরিবেশেরও ক্ষতি হয়। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ বুঝি কম। সরকারের উচিত পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করতে এক দিকে পলিথিনের কারখানা বন্ধ করা, তার সাথে বিকল্প ব্যাগের ব্যবস্থা করা।
আকরাম নামে এক সবজি বিক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, দ্বিগুবাবুর বাজারে গত সপ্তাহে পলিথিনের অভিযান দেখছি। বাজারে অভিযান কইরা পলিথিন বন্ধ হইবে না। যারা সাপ্লাই দেয়, যারা পলিথিন বানায় তাদেরকে ধরতে হবে। আমরা বাজারে কেজিতে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় পলিথিন ব্যাগ পাওয়া যায়। অন্য কোন ব্যাগ নাই। ক্রেতারা যদি ব্যাগ নিয়া আসে, তাতেই সবজি দিই। ক্রেতারা নিজেরা ব্যাগ আনলে ভালো। আমাদের পলিথিন কেনার লাগবে না।
পলিথিন বন্ধে নারায়ণগঞ্জে ৩ নভেম্বর থেকেই চলছে বিভিন্ন অভিযান। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে দ্বিগুবাবুর বাজার, কালির বাজারসহ নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসময় পলিথিন জব্দসহ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারে বিকল্প ব্যাগ সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় নি।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হুসাইন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, পলিথিন বন্ধে নারায়ণগঞ্জে নিয়মিত অভিযান চলছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে প্রচার-প্রচারণাও চলছে। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড়ের যে সকল ব্যাগ রয়েছে তা ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। এই ধরণের ব্যাগগুলো বাজারে এখনও আসে নি। যাতে দোকানগুলোতে বিকল্প ব্যাগ পৌঁছে যায়, সেই জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা-বার্তা চলছে। উৎপাদনকারী থেকে বাজারের দোকানে বিকল্প ব্যাগ সহজে আসতে পারে তার জন্য চেষ্টা করছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ’র উপ-পরিচালক এএইচএম রাসেদের সাথে লাইভ নারায়ণগঞ্জ‘র কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারব না। মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্য পেতে পারবেন।