না.গঞ্জে তীব্র গ্যাস সংকটে অতিষ্ঠ নগরজীবন
# গ্যাস না থাকায় বাধ্য হয়েপেসেঞ্জারকে ছেড়ে দিতে হলো: গাড়ি চালক
# প্রতিদিন ভোরে উঠতে উঠতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি: গৃহীনি
# ডায়েবেটিসের রোগী, নাস্তা বানায় খাইতে পারিনা: ভুক্তভোগী
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘ভোর ৫টা বাজে উইঠা দেখি যে একটু পানিও গরম করতে পারি না। সারাদিন তো গ্যাস আসেই না। সকাল বেলা নাস্তা বানাইতে পারি না ছেলে অফিসে যায়। আমি নিজেও ডায়েবেটিসের রোগী, নাস্তা বানায় খাইতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়,’ নগরীর গলাচিপায় একজন গৃহিনী গ্যাস সংকটের কারণে কষ্টের কথাগুলো এভাবেই বর্ণনা করেন।
রান্নার গ্যাস ছাড়াও সিএনজি, শিল্পকারখানা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে নারায়ণগঞ্জে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট।
কিছুদিন পরপরই নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট চরম আকার ধারণ করে। এতে শিল্প-কারখানার উৎপাদনে ধস নামে এবং স্থানীয়দেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় দেশব্যাপী তীব্র গ্যাস সংকট বিরাজ করছে। সেই সংকটের তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ। বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন ও শিল্প-কারখানায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে; জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। নগরীর ফিলিং স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত এলএনজি টার্মিনালটি কবে চালু হবে, সংশ্লিষ্টরা তা জানাতে পারছেন না।
জানা যায়, গ্যাস সঞ্চালন লাইন থেকে দূরবর্তী শিল্প-কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ থাকে না। বিশেষ করে ফতুল্লা বিসিকে শিল্পাঞ্চল এলাকায় গ্যাসের চাপ অনেক কমে গেছে। শিল্প-মালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকটে প্রতিদিন তাদের বিপুল অঙ্কের অর্থ লোকসান গুনতে হচ্ছে।
কাজল বেগম নামে এক গৃহিনী বলেন, দুই তিনদিন যাবত সকাল থেকে একেবারেই গ্যাস থাকে না। সকালে স্বামী-সন্তানকে নাস্তাসহ দুপুরের খাবার তৈরি করতে পারিনি। সকালে হোটেল থেকে কিনে এনে সময় পাড় করলেও দুপুর আর রাতের খাবার তৈরি করতে পারিনি।
শহরের গলাচিপা এলাকার অধিবাসী ছকিনা (ছদ্মনাম) বলেন, সকাল দুপুর থেকেই গ্যাসের সংকট শুরু হয়েছে। বিকেলের পর তো সংকট প্রকট রূপ নিয়েছে। গ্যাসের সমস্যার কারণে রান্না করতে পারছি না। খুব ভোরে উঠেও রান্না করতে পারিনা। প্রতিদিন ভোরে উঠতে উঠতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
ভাড়ায় হাইস গাড়ি চালায় মনির মিয়া। তিনি এ প্রদিবেদককে জানান, একদিন গাড়ি না চালালে সংসারে চলা মুশকিল হয়ে যাবে। আজকে একটা ক্ষেপ পাইছি নারায়ণগঞ্জ থেকে ইয়াপোর্ট নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সাইবোর্ডে গ্যাস নেয়ার জন্য পাম্পে ঢুকলাম। সেখানে দেখি আগে থেকেই অনেক গাড়ি সিরিয়াল দিয়ে আছে। আমার গাড়িতে গ্যাস দিতে বললাম, তারা আমাকে বলে যে গ্যাস নাই। গ্যাস দেয়া যাবে না। বাধ্য হয়ে আমার পেসেঞ্জারকে ছেড়ে দিতে হলো।
এছাড়া এলাকা ভিত্তিক জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা, নিতাইগঞ্জ, ডনচেম্বার, বাবুরাইল, পাইকপাড়া, শহীদনগর, নলুয়াপাড়া, ফতুল্লার কাশিপুর, হরিহরপাড়া, ভূঁইয়ারবাগ, দেওভোগ, চাঁদমারী, ইসদাইর, মাসদাইর, পশ্চিম মাসদাইর, জামতলা, দাতা সড়ক প্রভৃতি এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে করে অনেক আবাসিক বাসা বাড়িতে রান্নার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাসের উপমহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলাম ও উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মুকবুল আহম্মদ এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের সরকারি সাইটে দেয়া মুঠোফোনের নাম্বার গুলো বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো।
নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাসের হট লাইলে ফোন করা হলে এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানায়, আমাদের গ্যাসের প্রেশার অনেক কম। আমরা মানুষের চাহিদা চেষ্টা করছি, কিন্তু সম্ভব হয়ে উঠছে না। কবে নাগাদ এই সমস্যা সমাধান হবে তা কেবল উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবে।