না.গঞ্জে ঢাকের বাদ্যে শুরু বাঙালির দুর্গাপূজা, মণ্ডপে মণ্ডপে উৎসবের ঢেউ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দেখতে দেখতে এসে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, শারদীয় দুর্গাপূজা! আপামর বাঙালি সারা বছর ধরে এই দিনটির জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। শুধু আনন্দ-উৎসবেই নয়, বরং একে অপরের প্রতি শুভেচ্ছা, সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বার্তা বিনিময়ের এই সময়টি যেন এক পবিত্র দায়িত্বও বটে। আজ সেই বহু প্রতীক্ষিত দিনের সূচনা।
আকাশে-বাতাসে এখন আগমনীর সুর, শিউলির গন্ধ আর কাশের শুভ্রতা এক অলৌকিক মাদকতা সৃষ্টি করেছে। পিতৃপক্ষের অবসানে, দেবীপক্ষের শুরুতেই ঢাকের বাদ্যি আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি মণ্ডপ। আজ, রবিবার, মহাপঞ্চমীর সন্ধ্যা শেষে শুরু হলো মহাষষ্ঠীর পুণ্যলগ্ন—যার মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
পুরাণ অনুযায়ী, অসুরশক্তির কাছে পরাভূত দেবতাদের রক্ষায় দেবতারা একত্রিত হয়ে যে মহাশক্তি, অসুরবিনাশী দেবী দুর্গাকে আবাহন করেছিলেন—আজকের এই দিনে সেই মহাদেবীরই আবাহন করা হচ্ছে। শ্বশুরবাড়ি কৈলাস (স্বর্গলোক) থেকে কন্যারূপে দেবী দুর্গা সপরিবারে বাপের বাড়ি অর্থাৎ মর্ত্যলোকে আসছেন।
আজ পূর্বাহ্ণে (সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের আগে) দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) হবে দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, যার মধ্য দিয়ে মা দুর্গাকে মণ্ডপে বরণ করে নেওয়া হবে। শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ২১ সেপ্টেম্বর, যার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ শুরু হয়।
এ বছর দেবী দুর্গা গজে (হাতি) করে আগমন করছেন। শাস্ত্রের বিধান অনুসারে, গজে দেবীর আগমন হলে মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ, সমৃদ্ধি এবং শান্তিতে। এর শুভ প্রভাবে পরিশ্রমের ফল মেলে এবং অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে পৃথিবী রক্ষা পায়।
তবে বিজয়া দশমীতে দেবীর বিদায় ঘটবে দোলায় (পালকি) চড়ে। শাস্ত্রমতে, দোলায় গমন মহামারী, ভূমিকম্প এবং অতিমৃত্যুর ইঙ্গিত দেয়, যা এই উৎসবের শুভ্রতাকে কিছুটা হলেও ম্লান করছে।
ষষ্ঠীর সূচনার পর থেকেই এখন উৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার পালা। পূজা কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার দেবীর নবপত্রিকা স্থাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে মহাসপ্তমী। এরপর, মঙ্গলবার উদযাপিত হবে মহাষ্টমীর বিশেষ তিথি, যা কুমারী পূজার জন্য পরিচিত। বুধবার মহানবমীর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে পূজার প্রধান পর্ব। এরপর, সকল আনন্দের শেষে বৃহস্পতিবার প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে পালিত হবে বিজয়া দশমী, যা দেবী দুর্গার কৈলাসে প্রত্যাবর্তনের দিন।
এ বছর নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট ২২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯টি, বন্দরে ২৯টি, সোনারগাঁয়ে ৩৫টি, আড়াইহাজারে ৩৬টি এবং রূপগঞ্জে ৪৪টি মণ্ডপ রয়েছে। বিপুল সংখ্যক এই মণ্ডপগুলোতে চলছে এখন উৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাচ্ছেন।
সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের দুর্গাপূজার দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে: মহালয়া ২১ সেপ্টেম্বর, ষষ্ঠী ২৮ সেপ্টেম্বর, সপ্তমী ২৯ সেপ্টেম্বর, অষ্টমী ৩০ সেপ্টেম্বর, নবমী ১ অক্টোবর এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী। দেবীর বিদায়ের পর লক্ষ্মীপূজা ৬ অক্টোবর এবং কালীপূজা ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।