শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Led01রাজনীতিসদর

না.গঞ্জে জেলা প্রশাসকের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সভা

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সভা করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জামায়াতে ইসলামের মহানগর শাখার আমীর (সভাপতি) আব্দুল জব্বার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, হেফাজতে ইসলামের মহানগরের আমীর ফেরদাউসুর রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে ঠিক কতজন নিহত হয়েছে, এর তালিকা আমার কাছে এখনো নেই। আমি পুলিশকে অনুরোধ করবো, আমি সিভিল সার্জনকে বলে রেখেছি এবং সাংবাদিক ভাইয়েরা; আপনারা আমাদের এই তথ্য দিতে পারেন। আন্দোলনের বিভিন্ন মামলায় আজকে অনেকের জামিন কিন্তু হয়েছে। কারো যদি জামিন না হয়, তাহলে তাদের তালিকাটা আমার কাছে দেওয়ার জন্য বলবো। যাতে তারা ন্যায় বিচারটা পায়।

তিনি আরও বলেন, যারা রাজনীতি করেন, সুশিল সমাজের যারা রয়েছেন এর সাংবাদিক ভাইয়েরা; আপনাদের প্রত্যেকের ভুমিকা রাখার সময় হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে এখনো কিছু যায়গায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে। আপনারা যারা রাজনীতি করেন, আপনাদের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মী রয়েছে। আপনারা উদ্যোগ নিলে এগুলো ঠেকাতে পারবেন। সংখ্যালঘুরা আমাদের আমানত। এনাদের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এতদিনে নারায়ণগঞ্জে যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে, এগুলো মেরামত করতে যে টাকা লাগবে সেটি কিন্তু আপনার আমার পকেট থেকেই যাবে। আমি উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা আপনাদের কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন। যাতে এখান থেকে বের হওয়ার পর আর একটি ঘটনাও না ঘটে।

সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। ছাত্র-জনতা নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছে। এই কাঙ্ক্ষিত বিজয় আনতে গিয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছে তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। যতদিন এই বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বাংলার মানুষ এই ইতিহাস গৌরবের সাথে স্মরণ করবে। আন্দোলনের মাধ্যমে এই ছাত্র-জনতা যেভাবে বিজয়টা এনেছে, আমরা এই আন্দোরনে সেভাবে ভুমিকা রাখতে পারিনি। এই স্বৈরশাসক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, অবৈধ ভাবে ক্ষমতা ধরে রেখে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।

তিনি আরও বলেন, আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে আমাদের লজ্জা বোধ হয়। কোটা নিয়ে যখন আন্দোলন শুরু হয় তখন আমি বলেছি, মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। তারা কেনো তাদের সন্তানদের কাপুরুষ বানাবে। তারা কেন কোটা দিয়ে চাকরি নিবে। আমরা এর বিরুদ্ধে, সেদিন আমরা এটি স্পষ্ট করে বলেছি। অনেক সরকারি কর্মকর্তা সৎ হয়েও, সৎ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আপনারা সবাই আপনাদের মন-মস্তিস্কে পরিবর্তন আনবেন আমরা এটা আশা করি। আমি আমার দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত এই দেশের মানুষের পাশে থাকবো, প্রশাসনের পাশে থাকবো। নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনে কতজন শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন সরকারিভাবে তা তালিকা তৈরি করতে হবে। আন্দোলনের সহিংসতাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। মিথ্যা মামলার পরিবর্তে সত্যিকারের মামলা দিতে হবে।

নারায়ণগঞ্জেও স্বৈরাচারের বড় একটা আখরা ছিলো। এমন এক ব্যাক্তি ছিলেন, যাকে পুরো দেশ চিনে। তাদের সাথে যারা উঠা-বসা করেছেন এরকম অনেকেই আছেন। এখন আপনারা দয়া করে পর্দার আড়ালে থাকেন। সে হতে পারে রাজনীতিবিদ, হতে পারে সাংবাদিক, হতে পারেন শিক্ষক। আমরা কিন্তু সবাইকে চিনি, আমাদের কছে সকলের ছবি আছে। আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে না, আপনারাও সংশোধন হন সেটা আমরা চাই। আমরাও কিন্তু দীর্ঘদিন পর্দার আড়ালে ছিলাম।

এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হবে সরকারি সম্পত্তি আমাদের সবার। আমাদের অনেক রদবদল হবে কিন্তু এ প্রশাসন থাকবে। এ প্রশাসন দিয়ে আমাদের দেশ গঠন করতে হবে। সুতরাং সরকারি কোনো সম্পত্তিতে আঘাত করা যাবে না। আজ থেকে যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন যেন পরিচালিত হতে পারে তার জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো। যারা বিভিন্ন অনিয়ম করে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবে আমাদের ছাত্র জনতার অর্জনকে নষ্ট করতে চাই সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।

নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, আজকের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে এক মঞ্চে ডাকার জন্য আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। হামলাগুলো সব বিএনপি করছে বিষয়টা এমন না। আমরা এই বষয়ে গতকাল রাতে প্রতিটি থানা এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। দেখা গেলো যেই ব্যাক্তি দুইদিন আগেও আওয়ামী লীগ করেছে কিন্তু আজকে তারা বিএনপি হয়ে গেছে এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় হামলা করছে। আমাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নাই। কারণ বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা সবাই শক্ত ভাবে এই বিষয়গুলো দেখছি। এই সহিংসতা ঠেকাতে সব রকমের ব্যবস্থা আমাদের নিতে বলেছেন, দেশনায়ক তারেক রহমান। তিনি টিম হিসেবে ভাগ হয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান পাহাড়া দিতে বলেছেন। কারণ এগুলো আমাদের সম্পত্তি। বিএনপি মানুষের সম্পদ নষ্ট করার চর্চা করে না।

তিনি আরও বলেন, দেশের সম্পদ রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের পাশে থেকে আমাদের যা যা করা দরকার আমরা করবো। নারায়ণগঞ্জে এই কাজের জন্য আমাদের টিম তৈরি করা হয়েছে। সব স্থানে যে ঝামেলা হচ্ছে, বিএনপির লোক কিন্তু এগুলো করছে না। বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের সম্পূর্ণ বিপক্ষে অবস্থান করছে। বিএনপি আগুন সন্ত্রাস দমন করার জন্য কাজ করছে।

গোলাম ফারুক খোকন বলেন, বিএনপি সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান করছে এবং এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে না করা হয়েছে। যারা করবে তাদের দায়ভার আমরা নিবো না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, নারায়ণগঞ্জে যত সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এগুলো এই জেলার মানুষের। তাই এই জেলার সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আপনাদের সকলের সহযোগীতা নিয়ে রক্ষা করতে চাই। এই ক্ষেত্রে আমরা ডিসি ও এসপি সাহেবের সহযোগীতা করতে প্রস্তুত। গত ১৭ বছর আপরা যাদের দ্বারা বিভিন্ন ভাবে আক্রমনের শিকার হয়েছি, আপনারা তাদের বলে দিবেন; তারা যাতে ছাত্র-জনগনের সম্মুখিন না হয়। তারা সম্মুখিন হলে তাদের রক্ষা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আমরা আপনাদের সহযোগীত করবো, আপনারাও আমাদের সহযোগীতা করবেন।

এসময় ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ না করে, কোন রকমের সিদ্ধান্ত না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক এবং উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের অনুরোধ জানান; বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়ক ফারহানা মুনা।

RSS
Follow by Email