না.গঞ্জে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, সচেতন হওয়ার আহ্বান
# এক দশকে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’
# বর্ষা নয়, শীত-গ্রীষ্মেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটছে
# শুরুতেই সচেতন হলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব
# সিটি কর্পোরেশনের কাজগুলো স্থবির হয়ে পড়ছে
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার কারণে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে অধিকাংশ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা না থাকায় মশা নিধন কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। এতে করে ধারণা করা হচ্ছে চলতি সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হতে পারে।
স্থানীয়দের দাবি, সিটি কর্পোরেশনের এখন এডিস মশা নিধনে সক্রিয় হওয়া জরুরি। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও ভাবতে হবে। হাসপাতালকেন্দ্রিক চিন্তা না করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত বর্ষা-পরবর্তী সময়, অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবর ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, এডিস মশার ঘনত্ব অনুযায়ী এই সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদ ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকে (২০১৪-২৩) সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয় পাঁচবার। অক্টোবরে তিনবার, আগস্ট ও নভেম্বরে একবার করে পিক সিজন হতে দেখা গেছে। একসময় ধারণা করা হতো, বর্ষাকাল মানেই ডেঙ্গুর মৌসুম। কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলে যাওয়ার সময় এসেছে। কারণ এখন শুধু বর্ষা নয়, শীত-গ্রীষ্মেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।
এদিকে, প্রতিদিনই জ্বর-শরীর ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আসছে অন্যান্য উপজেলা থেকেও। আশংকা ডেঙ্গুর, ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কিছু কিছু শনাক্ত হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ এক চিকিৎসক লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানায়, জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়টা থাকে বর্ষা–বৃষ্টি। এ সময় প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। বাড়ির আশপাশে, ছাদের টবে, চৌবাচ্চায় পানি জমে। এসব জমে থাকা পানিতে জন্মায় ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তার থাকে অনেক বেশি। এ সময়টাকে ডেঙ্গুর মৌসুমও বলা হয়। এ সময়ের তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। বর্ষাকালে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। যেকোনো জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সেরে যায়। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে সুস্থ হতে দুই-তিন সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। শুরুতেই সচেতন হলে মৃত্যুঝুঁকি ও অন্যান্য জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ি গত ২৪ ঘণ্টায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯২৮ জন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, নারায়ণগঞ্জে এই মুহুর্তে কিছু ডেঙ্গুর পজিটিভ টেস্ট পাওয়া যাচ্ছে, তবে সেটা খুবই সিমিত। যেহেতু বর্ষার সময় চলছে, আর আগস্ট-সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুর সব থেকে খারাপ সিজন যায়। এই অবস্থা কেনো যেনো মনে হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের কাজগুলো স্থবির হয়ে পড়ছে, এদিকে খুব সচেতন হওয়া দরকার। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে এখন ডেঙ্গুর তেমন কোন প্রকোপ নেই। আমাদের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত আছে। প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গুর যথেষ্ট পরিমান কিড আছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের এখান থেকেই সচেতন হতে হবে। দিনের বেলায় মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানো, ছাদের বাগানে পানি না জমানো, বাড়ির আঙ্গিনায় পানি জমে থাকা খেয়াল রাখতে হবে, যেসব বাথরুম ব্যবহার করা হয়না, সেগুলো অবশ্যই দুএকদিন পর পর ফ্লাস করতে হবে। কারণ বাথরুমের ওই পানিতেও এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে। যদি কারো গায়ে জ্বর থাকে তাহলে কেউ যাতে প্যারাসিটামল ছাড়া কোন ঔষধ না খায়। এবং নিকটস্থল ডাক্তারের পরামর্শ নেয়।