সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
Led01নারী ও শিশুবিশেষ প্রতিবেদন

না.গঞ্জে চালু হওয়ার প্রথম মাসেই বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা

#মানুষ যাতে সচেতন হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে: নূরউদ্দিন
#রেল ক্রোসিং আছে কিন্তু নিরাপত্তা নেই: রফিউর রাব্বি
# দুর্ঘটনা এড়াতে সন্তানের মা-বাবা ও মানুষের সচেতনতা খুব জরুরী: স্টেশন মাস্টার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ৪ ডিসেম্বর থেকে সাময়িকভাবে তিন মাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে, প্রায় ৮ মাস পর পহেলা আগস্ট থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে এই আট মাসে অন্যান্য যানবাহনে চলাচল করে ট্রেনের অভ্যাস কমে গিয়েছে সাধারণ মানুষের। এই সময়ে রেললাইনে পাশে থাকা বাড়ি, দোকান, মার্কেট ও স্থলপথ দিয়ে নির্দ্বিধায় চলাফেরা করতে পারতেন। তবে সময়ের ব্যবধানে ট্রেন চালু হওয়ার পর প্রধম দিন থেকেই জেলায় বেড়েছে দুর্ঘটনার মতো ঘটনা। এতে কেউ কেউ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে। আবার কারো ধর্না দিতে হচ্ছে মৃত্যুর কাছে। সচেতন মহলের মতে, দীর্ঘদিন ট্রেন চলাচল না করায় মানুষের মধ্যে অসাবধানতা বেড়েছে, তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

এদিকে, পহেলা আগস্ট থেকে ট্রেন চালু হওয়ার পর এই পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ৫টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩জন নিহত হয়েছে, একজন ট্রেনের চাকায় পা কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে চিকিৎসাধীন হাসপাতালে আছে। আরেকটি ঘটনায় প্রাণে বেচেঁ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেণ্ডারিয়া অংশে তিনটি আলাদা রেললাইনের নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সব ট্রেন গত ৪ ডিসেম্বর থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। দীর্ঘ ৮মাস পরে পহেলা আগস্ট থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চালু হওয়ার পর থেকে দিনে দিনে বাড়তে শুরু করেছে ট্রেন দুর্ঘটনা।

‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিন আহম্মেদে লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দুর্ঘটনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা আসলেই খুব দুঃখজনক। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ট্রেন চালু করে এখন এটা বিপদজনক হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি এসব দুর্ঘটনা এড়াতে হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সর্ব প্রথম সর্তকতা হয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষ যাতে সচেতন হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এক সময় নারায়ণগঞ্জে ট্রেনের রাস্তার দুইপাশে নিরাপদ দূরত্ব রেখে দেয়াল মতো বেস্টুনি দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। এটা থাকলে হয়তো অনেকাংশে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী জোর দাবি জানায়, ঢাকা থেকে চাষাঢ়া অব্দি রেল সংযোগ করা হোক। নারায়ণগঞ্জ স্টেশন ভেঙ্গে বঙ্গবন্ধু সড়কসহ প্রধান প্রধান সড়ক গুলো প্রসস্ত করা হোক।

নারায়ণগঞ্জে সাংস্কুতিক ব্যক্তিত্ব ও যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে নারায়ণগঞ্জ শহরে ঢোকার পথে মোট ৬টি স্পট আছে যেখানে রেল ক্রোসিং আছে কিন্তু নিরাপত্তা নেই, মানুষও থাকে না। আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার এই বিষয়ে আওয়াজ তুলেছি কিন্তু কেউ এর মূল্যয়ণ করেনি। নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে যে দুর্ঘটনা গুলো ঘটছে। আমি বললো এগুলো রেল কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণেই ঘটছে। এর দ্বায় রেলওয়েকেই নিতে হবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ে’র নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, মানুষ সচেতন না। কারণ ট্রেনের রাস্তা দিয়ে যখন একটা আসে স্বাভাবিক ভাবেই সবাই বুঝতে পারে ট্রেন আসছে। এছাড়া ট্রেন হর্ণও দিচ্ছে, তবুও মানুষ সচেতন হয় না। তাছাড়া দুর্ঘটনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষেরও ক্ষতি সাধন হচ্ছে। বিশেষ করে চাষাঢ়ার পরে, ফতুল্লা, পাগলা, গেন্ডারিয়ার এলাকা ছোট বাচ্চারা বড় বড় পাথর মেরে ট্রেনের কাচঁ ভেঙ্গে দিচ্ছে। আমার মনে হয় দুর্ঘটনা এড়াতে সন্তানের মা-বাবা ও মানুষের সচেতনতা খুব জরুরী।

প্রকাশিত স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ আগস্ট ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল রুটে বিকালে ফতুল্লার ফতুল্লার শাজাহান রোলিং মিল এলাকায় ট্রেনের সাথে সিমেন্টবাহী নসিমন গাড়ির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নসিমন গাড়ি চালকের এক পা কাটা গেছে। পাশাপাশি এসময় ভটভটির আঘাতে ট্রেনের সামনে ও তেলের ট্যাংকিতে ফুটো হয়ে যায়।

২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে রেললাইন দিয়ে হেঁটে পারাপারের সময় নারায়ণগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকাগামী ট্রেনের নিচে পড়ে এক যুবকের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুক্রবার সকালে শহরের বালুরমাঠ এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১৪ আগষ্ট বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের ফতুল্লার বটতলা এলাকায় ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে অজ্ঞাত এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত যুবকের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ঢাকার কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা নারায়ণগঞ্জগামী ট্রেনের ছাদে অবস্থান করছিলো সেই যুবক। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়। এ সময় তাঁর হাত, পাসহ শরীর কয়েক টুকরা হয়ে যায়। সাথে সাথে মৃত্যু হয় তাঁর।

১৩ আগস্ট বিকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের চাষাঢ়ায় থামিয়ে রাখা মাইক্রোবাস চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় কোন হতাহত না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাইক্রোবাসটি।

১ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে পশ্চিম নন্দলালপুর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তির ৬৩ বছর বয়সী মো. নিহার আলী মেহের আলী। সে গেন্ডারিয়ার মীর হাজির বাগ এলাকার মৃত তোফাজ্জল হোসেন সরদারের ছেলে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে নন্দলালপুর মেডিকেল গলির নাসিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পেশায় ব্যাটারী চালিত রিকশা চালক ছিলেন।

RSS
Follow by Email