না.গঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা, নিশ্চুপ শীর্ষ নেতা ও দলীয় জনপ্রতিনিধিরা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বর্তমানের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর বৃহত্তর এই দলটির সুতিকাগার হিসেবে বিবেচনা করা নারায়ণগঞ্জ জেলাকে। স্বাধীনতার যুদ্ধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে, এই জেলায় আওয়ামী লীগের প্রবীন এক নেতা খুন হওয়ার পরেও অনেকটা নিশ্চুপ অবস্থানে রয়েছেন শীর্ষ নেতা ও দলীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই ঘটনায় তাদের নেই কোন উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
জানা গেছে, গত ২৭জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়ির সামনে সুরুজ মিয়া (৬৭) নামের এক ব্যাক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত সুরুজ মিয়া কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও আলীপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। এই ঘটনায় আহত হয় তার দুই সন্তানসহ ৪জন।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, ঘটনার ১০-১৫ দিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী হীরা ও তার ভাই সালু এলাকার একটি নির্মানাধীন ভবনে গিয়ে ভবনের মালিকের নিকট চাঁদা দাবি করে। ওই ভবনের মালিক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে ভিকটিম সুরুজ মিয়ার কাছে বিচার দেন। ভিকটিম গ্রেফতারকৃত আসামী হীরা ও সালুর বাবাকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং হীরা ও সালুকে চাঁদাবাজী থেকে বিরত থাকতে বলেন।
পরবর্তীতে ২৭ জুন সুরুজ মিয়া আলী পাড়া জামে মসজিদে থাকাকালীন আলাউদ্দিন ওরফে হীরা এর নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন প্রত্যেকের হাতে রামদা, বগিদা, ছোরা লোহার রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলী পাড়া জামে মসজিদের দান বক্সের সামনে রাস্তায় ভিকটিমের বড় ছেলে রাজু (৪৩) এবং ছোট ছেলে জনি (৪১) এর পথরোধ করে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে হীরার হাতে থাকা রামদা দিয়ে রাজু’র মাথায় কোপ দিতে গেলে রাজু হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে তার হাতের কনুয়ের উপর আঘাত লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এছাড়াও অন্যান্যরা রাজু এবং জনি কে এলোপাতাড়ী আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে মুমূর্ষ অবস্থায় ফেলে রাখে। এমন সময় যোহরের নামাজ শেষে ভিকটিম মসজিদ থেকে বেরিয়ে উক্ত ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছালে ভিকটিমকেও আঘাত করার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলে হাতাহাতির এক পর্যায়ে ভিকটিম আত্নরক্ষার্থে আক্রমণকারীদের একজনের হাত থেকে রামদা ছিনিয়ে নিয়ে আত্নরক্ষার চেষ্ঠা করাকালীন অভিযুক্তরা ভিকটিমের মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরুজ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, এই হত্যাকান্ডের পর আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশ জুড়ে। শুধু তাই নয়, এই হত্যাকান্ডে অভিযুক্তরাও পরক্ষভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেই জড়িত ছিলেন বলে স্থানীরা জানান।
স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই হত্যার পেছনে আছে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজি, ইট, বালু, সিমেন্ট মহলের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডটি ঘটে। এই হত্যাকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উত্তেজনা এবং বিভাজন আরো তীব্র হচ্ছে।
তবে, এত কিছুর পরেও ভ্রূক্ষেপ নেই নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের। এক্ষেত্রে জনমনে জন্ম হচ্ছে নানান প্রশ্ন।
ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তবে, সেটা যেহেতু গণমাধ্যমে ওরকম ভাবে আসেনি তাই আমরা খুব শীঘ্রই সবার সাথে আলোচনা করে একটি তীব্র প্রতিবাদ জানাবো। যেহেতু সুরুজ মিয়া আওয়ামী লীগের একজন প্রবিন নেতা, তাকে এভাবে হত্যা করা আমরা কোন ভাবেই মানতে পারছি না। তার সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের পথচলা। ২০০১ পর যতগুলো আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে সবগুলোতে তিনি আমাদের সাথে থেকে আন্দোলন করেছেন। খুব তারাতারি আমরা একটি প্রতিবাদ জানাবো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদ (ভিপি বাদল) বলেন, আমরা কোন শোক প্রকাশ করি নাই কিনবা প্রতিবাদ জানাইনি, এই কথাটা আসলে ঠিক না। আমরা ওইদিন সেখানে যাওয়ার পর আসামীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলাম। যেই নিষ্ঠুরতার সাথে তারা হত্যাটি করেছে, তাদের তো ক্রস ফায়ার দেওয়া দরকার। এই বিষয়ে আগে শোক কিনবা প্রতিবাদ জানাবে থানা। এছাড়া ওই এলাকার এমপিও রয়েছে। এখন জেলা আওয়ামী লীগ অফিসিয়ালি কোন শোক কিনবা প্রতিবাদ জানানো হয়েছে কিনা সেটা সভাপতি সাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করুন। সে ভালো বলতে পারবে।
যদিও এই বিষয়ে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, নির্মম এই হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার পরের দিন (২৮ জুন) এক শোক বার্তায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী ও সাধারণ সম্পাদক এমএ সাত্তার এবং ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক রেহান শরীফ বিন্দুর স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এই শোক ও প্রতিবাদ জানানো হয়।