না.গঞ্জে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ‘নির্বাচনমুখী’, তৃণমূল ‘হতাশ’ কমিটিতে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর সম্মেলন হয়েছিল। আবারও সেই অক্টোবর মাস চলছে। কিন্তু এখনও সংগঠন গোছাতে পারেনি ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা। গত ১ বছরে সংগঠনটির নানা সভা-সমাবেশে শীর্ষ নেতারা সংগঠন গোছানোর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন।
তবে, আওয়ামী লীগের একটি অংশ দল গোছাতে জোড় দাবি জানিয়েছেন।
সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। বিভিন্ন আলোচনা সভায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনুসারীরাও নিজ বলয়ের নেতাদের নামের সাথে মনোনয়নের প্রস্তাব তুলেছেন। পাশাপাশি এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন টানাচ্ছেন। এমন অবস্থায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাছে ছুটছেন বর্তমান সংসদ সদস্যরাও।
নারায়ণগঞ্জে ৫টি সংসদীয় আসনের ৩টিতে আওয়ামী লীগ ও অন্য ২ টি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এই ৫ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের অন্তত অর্ধশত জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয় পার্টির আসন গুলোতে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘এখন দলকে সু-সংগঠিত করার সময় কিন্তু সু-সংগঠিত না করে বিভিন্ন সভায় মনোনয়ন চাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছে তারা। মাঠের আন্দোলন সংগ্রামে না দেখা গেলেও বড় বড় কথা বলে সভা গরম করছে।’ দলের এই সময়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনের আহ্বান জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশ দাবি, ‘দল ক্ষমতায় থাকার পরেও জাতীয় পার্টির আসন দু’টিতে অবহেলিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা তাদের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে আসন দু’টিতে নির্বাচন করতে চান।’ চলতি বছরের আগস্ট মাস জুড়েই ছিল দলটির নানা কর্মসূচি ছিল। সেখানে তারা আসন দু’টিতে প্রার্থী দিতে নানা ভাবেই বক্তব্য রেখেছেন। কেউ কেউ তাদের অনুসারীদের দিয়ে নাম তোলছেন প্রার্থীদের তালিকায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আদীনাথ বসু লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, ‘৫টি আসনেই নৌকার মনোয়ন আমিও চাই। তবে, আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন গুলো হালনাগাদ কমিটি জরুরী।’
তবে, আওয়ামী লীগ ছাড়াও বেশির ভাগ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের হালনাগাদ কমিটি না থাকায় হতাশা রয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। প্রতিষ্ঠা বাষির্কী ছাড়া অন্য কোন কর্মসূচিতে দেখা যায় না আওয়ামী মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের। এছাড়াও দুই দশকেও কমিটি পায়নি নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগ আর মহানগর চলছে শহর কমিটিতে। কমিটি হওয়ার অপেক্ষায় ২ বছর ধরে দিন গুনছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। আর কোর্টের নির্বাচন ছাড়া দেখা পাওয়া যায় না বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের পাশাপাশি কাগজে বন্দী নারায়ণগঞ্জ জেলা তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের কার্যক্রম।
এছাড়া ভাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে থাকলেও ছাত্রলীগ আছে সু-সংগঠিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আওয়ামী সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা জানান, কেউ এক যুগ, কেউ দুই যুগ ধরে রাজনীতি করেও কমিটি পায়নি। তাই অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেকে রাজনীতি ছেড়েও চলে গেছেন।
সংগঠনের এমন অবস্থায় সম্প্রতি এক সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে কারো চামরাই ঠিক থাকবে না। এটা মনে রেখে সংগঠনকে আরও ব্যাপক শক্তিশালী করুন। যারা রাগ করে দল ছেড়ে চলে গেছে, তাদের রাগ ভাঙ্গীয়ে ফিরিয়ে আনুন। সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হন। ঐক্যের কোন বিকল্প কোথাও নাই। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব। দেশে মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা আল্টিমেটাম দিয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক যোগে সকলের পিঠ চুলকানি উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। ঐক্যবদ্ধ ভাবে ওদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করতে হবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ঠিক থাকবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে।