নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের মানববন্ধন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারী নির্যাতন বন্ধ, নারীর সমঅধিকার ও মর্যদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনের সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মিমি পূজা দাস। সেই সাথে মানববন্ধনের সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার। এসময় নারীর সমঅধিকার ও মর্যদা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাসদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্য সেলিম মাহমুদ, মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুইটি বেগম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি মুন্নি সরদার, ছাত্র ফ্রন্ট জেলার সদস্য সচিব নাসিমা সর্দার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সমাজে নারীর মৌলিক মানবিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শক্তিশালী করে শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদ এর নারী সংগঠন হিসেবে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের আত্বপ্রকাশ করে। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম মনে করে, নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। অথচ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও দেশের নারীরা আইনগত ভাবেই বৈষম্যের শিকার। সম্পত্তিতে সমঅধিকার না থাকায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীরা প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। একদিকে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে ধনী—গরীব বৈষম্য অপরদিকে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে নারী হিসেবে দ্বৈত শোষণের শিকার হতে হয়। পেশাজীবি, শ্রমজীবি নারীদের অবস্থা আরও করুণ। মজুরি বৈষম্য, নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব, মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সরকারি—বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বৈষম্য ও টালবাহানা এবং পর্যাপ্ত ডে—কেয়ার সেন্টার না থাকা নারীদের কর্মজীবনকে দুঃসহ করে তুলছে। প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে নারী—শিশু নির্যাতন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিচার বা শাস্তি হয় না বললেই চলে। দেশে ভোটাধিকার ভূলুণ্ঠিত, নির্বাচনের নামে জনগণের সাথে প্রহসন করা হয়, গায়ের জোরে আমি আর ডামি প্রার্থী দিয়ে পাতানো নির্বাচন করা হয়েছে তখন নারীর উপর নিপীড়নও ভয়াবহ রূপ নেয়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, তাই গণতন্ত্র ও সভ্যতার স্বার্থে, উন্নত রুচিবোধ ও সংস্কৃতি চেতনার আলোকে নারী—পুরুষের সৌন্দর্য্য মন্ডিত জীবন ও যৌথ কর্মপ্রয়াসের বিকল্প নেই। সমাজের অগ্রগতি ও প্রগতির স্বার্থে, সুস্থ নিরাপদ জীবন যাপন ও পরবর্তী প্রজন্মের মনুষ্যত্ব নিয়ে বেড়ে উঠার স্বার্থে নারী—পরুষের মধ্যকার অসাম্য—বৈষম্য বিলোপ আজ সময়ের দাবি। সেই দাবি পূরণের লক্ষ্যে সকল প্রকার অসুস্থ মানসিকতা, প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যান—ধারণা, ভোগবাদী প্রবণতা দূর করার জন্য একটি শক্তিশালী নারী সংগঠন, নারী মুক্তি আন্দোলন ও নারী—পুরুষের মিলিতভাবে সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রাম বেগবান করা অনিবার্য। শুধু অধিকারের কথা বলাই যথেষ্ট না; সমাজ সচেতনতার বিকাশ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সংগ্রামের পথেই সত্যিকারের মর্যাদা ও অধিকার আদায় সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি সমাজের আমূল পরিবর্তনের বিপ্লবী পথে সার্বিক মুক্তি একদিন অর্জিত হবেই।
নেতৃবৃন্দ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামকে সর্বদিক থেকে সহযোগিতা দিয়ে ও অংশগ্রহণ করে শক্তিশালী করুন। দেশে নারী নির্যাতন নারীর প্রতি বৈষম্যসহ সকল অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সমাজে ও পরিবারে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন।