নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইয়ের ১০ স্পট, বাড়াতে হবে নজরদারী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের ভিডিও জার্নালিস্ট (ভিজে) আবু বক্কর সিদ্দিক। ২নং রেল গেইট থেকে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রিকশায় আরোহী হন। কিছু দূর এগোতেই ছিনতাইকারীরা তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বেশ কয়েকজন পথচারী বিষয়টি বুঝতে পারলে কৌশলে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
আবু বক্কর সিদ্দিক তখন দাবি করেছিলো, ‘কেউ এগিয়ে না এলে হয়তো খারাপ কিছুই আমার সাথে ঘটে যেত।’
নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনা এটি। জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মড়াসড়কে অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন চক্র এসব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করছে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ কিশোর-যুবক। তাদের মধ্যে আবার অধিকাংশ মাদকাশক্ত। তাদের কেউ কেউ ক্ষমতাশীন দলের রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিল।
সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে সোনারগাঁ থানা এলাকায়।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন ভাবে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত দু’ একজনকে আমরা গ্রেপ্তার করছি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ছিনতাই ঠেকাতে। এখন যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে।’
নারায়ণগঞ্জ ব্রিটিশ আমল থেকে ব্যবসা কেন্দ্র ও নদী বন্দর। গভীর রাত পর্যন্ত প্রধান সড়কগুলো দিয়ে মানুষের যাতায়াত রয়েছে। বিশেষ করে শহরের সড়ক গুলোর কয়েকটি জায়গায় সারা বছরই কমবেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরের শুধু সেপ্টেম্বর মাসে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছে স্বপন সরদার, সাইফুল ইসলাম বাপ্পি ও আক্কাস সিকদার নামের তিন ব্যক্তি। এদের ২ জন অটোরিকশা চালক ও একজন সবজি বিক্রেতা। বিভিন্ন সময় ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি পুলিশ, সাংবাদিকও। তবে, ছিনতাইয়ের বেশির ভাগ ঘটনাই পুলিশ পর্যন্ত যায় না।
স্থানীয়রা জানান, ‘যখন কোনো বড় ঘটনা ঘটে, তখনই প্রশাসন এবং স্থানীয়রা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়। তখন বেশ কিছুদিন সড়কগুলো নিরাপদ থাকে। সময়ের ব্যবধানে সবকিছু আগের মতোই হয়ে যায়। এক মাস ধরে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন কেউ না কেউ ছিনতাইকারী দ্বারা আক্রমণ হচ্ছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ছিনতাইয়ের জন্য সবচেয়ে স্পর্শকাতর কাঁচপুর ব্রীজ ও আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জ শহরের অক্টো অফিস, কাশিপুর, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ফতুল্লার পিয়ারাবাগান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল, দরিকান্দি, মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা স্ট্যান্ড, মেঘনা ব্রীজ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাবো।
মোগরাপাড়া চৌরাস্তা স্ট্যান্ড এলাকায় ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া ১০টায় ছিনতাইয়ের কবলে পরেন কুমিল্লার কোতয়ালী থানার আবদুল মতিনের ছেলে মো. সুমন।
তিনি জানান, র্যাব পরিচয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতা বিভিন্ন ব্রান্ডের ও মডেলের ২৮৩টি মোবাইল ফোন (যার মূল্য ৪০ লাখ ১০ হাজার টাকা) ছিনিয়ে যায়। পরে পুলিশ অভিযুক্ত সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খান সাজুকে গ্রেপ্তার করে।
নারায়ণগঞ্জে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং ছিনতাই প্রতিরোধে ধীরে ধীরে নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠছে। আগামী ১৪ অক্টোবর ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র আয়োজিত মানববন্ধনে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনায় খুনের বিষয়ে কথা তোলা হবে বলে জানা গেছে।
সংগঠনটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিন জানান, ‘মানুষের রাতের বেলা চলা ফেরা করার প্রয়োজন হয়, করেও। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে এমন অপমৃত্যু ঘটতো না। এ জন্য ছিনতাইকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, গত ৩ দিন যাবত নারায়ণগঞ্জ জুড়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশ ছিনতাই প্রতিরোধে যৌথভাবে কাজ করছে। গতকালও ৩টি দ্রুত বিচার আইনে মামলা নেওয়া হয়েছে। আনুমানিক ২০ জন ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে একাধিক চুরি, ছিনতাই, মাদক, ডাকাতির প্রস্তুতি, খুনসহ ডাকাতির মামলা ছিল। আমাদের এই অভিযান চলছি, আমরা অভিযানটি ৪-৫দিন অব্যাহত রাখলে ছিনতাই আরও সহনীয় পর্যায়ে আসবে। নিমূল না করতে পারলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।