নানা আয়োজেন নারায়ণগঞ্জে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নানা আয়োজনে নারায়ণগঞ্জে পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বুধবার (২৫ জুন) জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্দ্যেগে এ আয়োজেন করা হয়।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে এক র্যালি বের হয়। এরপর কোরআন তিলোয়াত, শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা ও পুরষ্কার বিতরন দিয়ে আয়োজন শুরু করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিথিদের বক্তব্য দিয়ে আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এবার ‘প্লাস্কিক দূষন আর নয়, বন্ধ করা এখনি সময়’ স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়।
এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। অনুষ্ঠানের পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক এ. এইচ. এম. রাসেদের সভাপতিত্বে আরু উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন ডাঃ এ. এফ. এম. মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আলমগীর হুসাইনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকরা।
সভায় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা ১২০ ট্রাক ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ করেছি। আবারও করতে হবে। আমরা যারা এই ব্যানারগুলো লাগাচ্ছি, আমরা কি সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেনি? আমরা কি প্রমাণ করতে চাচ্ছি। কেন আমাকে দুদিন পর পর ট্রাকে ট্রাকে ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ করতে হবে। আমি কাল ডিএনডি খাল এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে না দেখে বুঝতে পারতাম না, এই শহরের পাশে এমন একটি এলাকা আছে। আমাকে একজন বলল এমন অনেকে আছেন যারা এই জলাবদ্ধতার মধ্যেই তার জন্ম এবং এখানেই মৃত্যু হয়েছে। এগুলো আমাদের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা ভালো কথা বলতে ভালোবাসি কিন্তু সেটি ধারণ বা লালন করি না। আরেকজনের ঘাড়ে কাজ দিতে পছন্দ করি, নিজের কাধে নিতে চাই না। আমরা খালে দেখেছি সেখানে টিভি ফ্রিজ, বাসন-কোসন ফেলা আছে। এই খালে এই টিভি-ফ্রীজকে ফেলল, সে কি নাগরিক না? সে কি অশিক্ষিত? না, সে বুঝে শুনেই এই কাজ করেছে। সে দেশ প্রেম ও নাগরিক দায়িত্বের কাছে পরাজিত হয়ে স্বার্থকে জয় করেছে। আমরা সকলে জানি প্লাস্টিক সারা পৃথিবীতে কি ধরনের উৎপাদন হচ্ছে এবং এতে করে আমাদের সমাজে পরিবেশে কি ধরনের ইম্প্যাক্ট পড়ছে। পরিবেশ দূষণ ভিন্ন গ্রহের কোন প্রাণী করছে না, আমরাই করছি। এই শীতলক্ষা ছিল নারায়ণগঞ্জের প্রাণ, কিন্তু আজ শীতলক্ষা কোন জীববৈচিত্র নেই, ভালো পানি বা মাছ নেই। সাকার মাছ নামের এক ধরনের মাছের সেখানে প্রাদুর্ভাব ভাব হয়েছে। আমাদের এই ইট পাথরের শহরে শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। শিল্পের বিকাশের জন্য যতগুলো উপাদান দরকার সবগুলো নারায়ণগঞ্জ আছে। এই ব্যবসাটা শিল্পের বিকাশ বা প্রসার কিন্তু হঠাৎ করেই হয় নি। আমাদের এই নগরীর যে ইতিহাস আছে সেগুলো আমরা এই নারায়ণগঞ্জকে প্রস্তুত রাখতে পারেনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রীন এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা নারায়ণগঞ্জ সবুজে ঢাকতে চেয়েছি, নারায়ণগঞ্জকে বিশ্বসেরা করতে চেয়েছি। আমরা একলাখ গাছ লাগাবো, এই কাজ আমরা বিভাগীয় কমিশনারের হাতে উদ্বোধন করিয়েছি। অনেকে এসেছেন আমাদের এই কার্যক্রমকে অনুপ্রাণিত উৎসাহিত করেছেন। পরিবেশ উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি আমাদেরকে দশ হাজার বৃক্ষ উপহার দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমরা ৩১ হাজার গাছ এই শহরে লাগিয়েছি। এই মাসের মধ্যেই আমরা এক লক্ষ গাছ লাগাবো। গাছ সংগ্রহ করাটা চ্যালেঞ্জ ছিল না, কিন্তু এই ইট পাথরের শহরে গাছটা কোথায় লাগাবে এবং কিভাবে বড় করে তুলবো সেটা চ্যালেঞ্জ ছিলো। আমরা গাছ লাগিয়েছি কিন্তু সবগুলো গাছের বেড়া দিতে পারব কিনা জানিনা, আমাদের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আগামীকাল বিআইডব্লিউটিএর নদীর তীরে দুই হাজার গাছ রোপন করব। কিছু গাছ যেগুলো ঝুকিঁ মধ্যে রয়ে গিয়েছে সেগুলো আমাদের অবশ্যই বেড়া দিতে হবে। আমি অনুরোধ করবো কিছু গাছের দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। না হলে যেমন ভাবে শীতলক্ষ্যা নষ্ট হয়ে গেছে, তেমনভাবে আমাদের শহরকেও বসবাসর অযোগ্য হয়ে পড়বে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি দোকানদারকে নিয়ে বসবো, দোকানের সামনে দোকানদারকে পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের অত জনবল নেই। ৮০০০ ইন্ডাস্ট্রি জন্য ৮ জন কর্মকর্তা রয়েছে। কেন আমার একটা ইন্ডাস্ট্রিকে গিয়ে তালা মারতে হবে, তার কি বিবেক-বুদ্ধি নেই। বিদেশে গেলে দেখা যাবে মাইলের পর মাইল ড্রাইভ করলেও একজন পুলিশ দেখা যায় না। কিন্তু সেখানে কেউ ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করে না। তারা না করলে আমরা কেন করি, কেন আমাদের এত পুলিশ লাগবে। কেন আমাদের এত তালা মারতে হবে বা সিংগালা করতে হবে। এত বৈষম্য এত রক্তের পরও কেন আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে না, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। সুইটিস এক রিসার্চে বলা হয়েছে যদি আমরা ১০০ বছর আগের পৃথিবীতে ফিরে পেতে চাই তাহলে এক লক্ষ কোটি গাছ রোপণ করতে হবে। তার মানে আমরা এই ১০০ বছরে এক লক্ষ কোটি গাছ নষ্ট করেছি। এগুলো আমরা এবং আমাদের মত সভ্য সমাজের মানুষরা করেছে। এলিয়েনরা এসে করেনি। বাংলাদেশের গবেষণায় বলছে পরিবেশ দূষণের কারণে প্রতিটি মানুষের গড় আয়ু বাইশ মাস কমে যাচ্ছে। আমার কেন মনে হল গাছ লাগাতে হবে, আমি দুই মাস ১০ দিন রাজবাড়ী জেলায় ছিলাম। এরপর যখন নারায়ণগঞ্জ জয়েন করি, তখন দেখেছি ওইখানের তাপমাত্রার এখানে তাপমাত্রার অনেক পার্থক্য। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে দশ বছর পর এই শহর বসবাসর অযোগ্য হয়ে পড়বে। তাই আমার মনে হয়েছে আমার গাছ লাগাতে হবে। তুরস্ক একটি বিষ রেকর্ড করেছে। তারা এক ঘন্টায় তিন লক্ষ ৩ হাজার ১৫০ টি গাছ লাগিয়েছে। আমরা বিভিন্ন অফিসকে দালালমুক্ত করতে চেয়েছি। পাসপোর্ট অফিসে গেলে এখন কেউ প্রতারিত হচ্ছে না।