সোমবার, মে ১২, ২০২৫
Led01জেলাজুড়ে

নগর ভবনে রণক্ষেত্র: দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অটোচালকদের নজিরবিহীন হামলা

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে অটোরিকশা চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপের প্রতিক্রিয়ায় হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবার (১২ মে) দুপুরে এক অপ্রত্যাশিত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহরে অটোরিকশা চলাচলের দাবিতে আন্দোলনরত চালকদের হামলায় সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী ও যানজট নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত অন্তত ১৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জনের আঘাত গুরুতর। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভকারীরা নগর ভবন অবরোধ করে রাখলে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বিজিবি সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অটোরিকশা চালকরা বেলা বাড়ার সাথে সাথে নগর ভবনের সামনে জড়ো হয়ে তাদের দাবি জানাতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে, উত্তেজিত চালকরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে কর্তব্যরত কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বাধা দিতে গেলে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের মারধর করা হয়।

হামলায় গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের যানজট নিরসন সুপারভাইজার সম্রাট ইসলাম, কর্মী শাওন, লিটন, পলাশ ও শিমলাসহ আরও অনেকে। আহত সম্রাট ইসলাম অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে অবৈধ অটোরিকশার প্রবেশে বাধা দেওয়ায় এবং সম্প্রতি একটি অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করায় চালকরা ক্ষুব্ধ ছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, উচ্ছেদের পর চালকরা একত্রিত হয়ে নগর ভবন ঘেরাও করার হুমকি দেয় এবং আজ পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তিনি হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

আহত শিক্ষার্থী সিয়াম সরকার জানান, প্রথমে চালকরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করলেও সুপারভাইজার সম্রাট ইসলামকে অফিসে প্রবেশ করতে দেখে তারা উত্তেজিত হয়ে হামলা চালায়। সম্রাটকে বাঁচাতে গেলে তাদের ওপরও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করা হয়। দীর্ঘক্ষণ তারা নগর ভবনের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন এবং প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

আহত শিক্ষার্থী শিমলা বলেন, একজন নারী কর্মী মারধরের শিকার হচ্ছেন দেখে এগিয়ে গেলে তিনিও হামলার শিকার হন। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

তবে, আন্দোলনরত চালকদের ভাষ্য ভিন্ন। তারা জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বানে সিটি কর্পোরেশন সাড়া না দেওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামেন। তাদের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী সম্রাট ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন এবং যারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করত তাদের হয়রানি করতেন। তারা মিশুকের জন্য নির্ধারিত রুটের মতো তাদের বড় অটোগুলোর জন্যও একটি নির্দিষ্ট রুটের দাবি জানান। এক আহত চালক অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা তাদের সাথেও মারমূখি আচরণ করেছে। অটোচালকদের উপরও হামলা করা হয়। তাদের অভিযোগ ছাত্রলীগের কর্মীদের দিয়ে তাদের উপর হামলা করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, অফিসে আসার সময় তিনি চালকদের মানববন্ধন করতে দেখেন এবং তাদের সাথে প্রাথমিক আলোচনাও করেন। তিনি জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করার কথা জানালে তারা চলে যান। তবে দুপুরে অতর্কিতভাবে চালকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে তাদের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের আহত করে এবং দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখে। তিনি এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জামাল উদ্দিন প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে সিটি কর্পোরেশনের কর্মী ও অটোচালকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, উভয় পক্ষের আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং যুবদল নেতা জোসেফ মীমাংসার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, কোনো পক্ষ অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

RSS
Follow by Email