নগরীর ফল বাজারে তরমুজের আধিপত্য, চড়া দামের অভিযোগ
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: পবিত্র মাহে রজমানেও চৈত্র মাসের তীব্র গরম ও প্রখর রোদ অনুভব করছে নগরবাসী। এই গরমেই সারাদিন রোজার পর ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার থেকে ফল খেতে বরাবরই উপদেশ দেন চিকিৎসকেরা। পবিত্র রমজানে সেই ফলের বাজারে ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে তরমুজের। চাহিদার সাথে সাথে ফলের দোকানে বাড়ছে তরমুজের বিক্রিও। রমজান মাসের ইফতারে পুষ্টির দিক মাথায় রেখে কিছু ফলের আইটেম রাখে রোজাদারা। তবে তাদের পছন্দের তালিকায়ও শীর্ষে থাকে রসালো মিষ্টি এই ফল। সারাদিন কমবেশি বিক্রি থাকলেও আছরের নামাজের পর হাতে হাতে তরমুজ কিনে নিয়ে যান মুসুল্লিরা।
সোমবার (২৪ মার্চ) নগরীর ২নং রেলগেট, ১নং রেল গেট, কালিরবাজার এলাকা ঘুড়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। বিকেল হতেই ভিড় বাড়ে ফলের দোকানগুলোতে। ক্রেতাদের চাহিদা বেশি লক্ষ করা যায় তরমুজের উপর। চাহিদা বেশি হওয়ায় চড়া দামের অভিযোগও করেছেন ক্রেতারা। বাজারে তরমুজ আকার ভেদে বিক্রি হলেও অনেক সময় কেজি দরেও বিক্রি হয়। একটি তরমুজ দেড় কেজি থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। আকার ভেদে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। আবার কেজি প্রতি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গতবারের তুলোনায় এবার তরমুজের বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা
।
এছাড়াও বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে আপেল ৩২০ খেকে ৪০০ টাকা, নাশপাতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, মালটা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, সাদা আঙ্গুর ৩০০ টাকা আবার কালো আঙ্গুর ৫০০ টাকা, আনার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ১২০০ টাকা, মাবরুম ১৫০০ টাকা, ফরিফা ৫০০ টাকা, জিহাদী ৩০০টাকা, বিদেশি আম বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি, ইন্ডিয়ান আম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, পিয়ার ফল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, পেঁপে ১৬০ টাকা,
হাই পেঁপে ১৮০, পেয়ারা ৮০ টাকা, বাঙ্গি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, বড়ই ১০০ টাকা, জাবেদা ২০০ টাকা, চিনাল ৮০ থেকে ১৫০ টাকা ও আনারস আকার ভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এদিকে সাগর কলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি, সবরি কলা ৬০ টাকা, বাংলা কলা ৪০ টাকা, চাপা কলা ২০ থেকে ৩০ টাকা হালি।
বাজারে ফলের দাম চড়া নিয়ে ক্ষুব্দ নুরুল হুদা, তিনি বলেন,‘ রমজানের আগে ২২০ টাকার আপেল এখন ৪০০ টাকা কেজি। তাই এখন যদি বিদেশি ফল কিনতে যাই, তাহলে সারা মাসের ফলের ব্যয় চলে যাবে সাত দিনে। আর যাঁদের পরিবারের সদস্য আমার মতন ১১ জনের, তাঁদের বিদেশি ফলের দিকে তাকানো যেন মুশকিল। এই অবস্থায় বাসার জন্য দুই কেজি বড়ই কিনেছি। সাথে কিছু পেয়ারা আর আনারস কিনে বাড়ি ফিরবো। তরমুজ নেওয়ার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু দাম চায় ৫৫০ টাকা। এই দামের তরমুজ আমার জন্য না।’
আরেক ক্রেতা সরোয়ার রিপন বলেন, ‘দামের কারণে বিদেশি ফল কেনা যাচ্ছে না। প্রথম রোজার দিকে তরমুজ নিয়েছিলাম, মাঝখানে আর নেওয়া হয়নি। এখনা যে দাম দেখছি তাতে নেওয়া হবে না। ইফতারের জন্য আনারস আর সেহরীর জন্য কলা নিয়েছি।’
ব্যাংক কর্মকর্তা আসলাম বলেন, ‘বাসার সবাই তরমুজ থেকে ভালো বাসে। ছোট ছেলের বয়স আট মাস, তার মা তাকে তরমুজের রস বের করে দিলে সে জুসের মতো খায়। যে গরম পরেছে, সে হিসেবে বাহিরের ভাজা পোড়া খাবারের থেকে তরমুজ, আনারস, ভাঙ্গির মতো ফল খাওয়া ভালো। তাই বাসায় তরমুজ নিয়ে যাচ্ছি।’
এসময় ফলের বিক্রেতা ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘যে ফল রোজার আগে বিক্রি করেছি ৮০ টাকা কেজি দরে, সেই ফল ২য় রমজানে এই আড়ৎ থেকে কিনেছি ১১০ টাকা দরে। ১১০ টাকা কেনা হলে আমরা ১০ টাকা লাভে ১২০ টাকায় বিক্রি করি। এটা শুধু আপেল-আনারসের জন্য না, সব ফলের একই অবস্থা। তবে গতবছরের মতো এবারও লাভ সীমিত হলেও ব্যবসা মোটমুটি ভালো যাচ্ছে।
আরেকজন ফলের বিক্রেতা মোহাম্মদ সাগর বলেন, ‘বিদেশি ফলের দাম বাড়াতে বিক্রি প্রথম রোজা থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে দিনে ৮০- থেকে ১০০ কেজি ফল বিক্রি করলেও এখন গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ কেজি। বিদেশি ফলের দাম বাড়ার কারণ আড়তদার বলছে ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও অতিরিক্ত শুল্ক আদায়। তবে এই কয়েকদিন বিদেশি ফলের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু আঙুরের দাম কমেনি। গতকালও আমাদের কেনা ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে। রমজানের আগেও এই ফল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় কেনা গেসে।’