বুধবার, নভেম্বর ২০, ২০২৪
Led01সদর

নগরীতে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

#‘মালিকপক্ষ মুখেই বলে দাবি মানবে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন দেখি না’
# নভেম্বর থেকে শ্রমিকদের দাবি কার্যকর হবে: এডিসি (সার্বিক)

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বেআইনিভাবে ছাটাই বন্ধ, স্ব বেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুরসহ ১২দফা দাবিতে নগরীতে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে। রবিবার (২০ অক্টোবর) চাষাড়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ফতুল্লা থানার কুতুবপুরের আইএফএস টেক্সওয়ার‘র শ্রমিকরা।

দুপুর আড়াইটার দিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এসময় নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ রুটে এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভের সময় গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ‘র সভাপতি দুলাল সাহা বলেন, শ্রমিকরা মালিকপক্ষের কাছে ১২ দফা দাবি করেছে। শ্রমিকদের বকেয়া ও অর্জিত ছুটির টাকা ফুল পরিশোধ করতে হবে। তাদের নাইট বিল ৬ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত ৯০ টাকা, ১২ টা পর্যন্ত ৬০ টাকা করতে হবে। কোন শ্রমিক রিজাইন দিলে শ্রম আইন অনুযায়ী প্রাপ্য পাওনা পরিশোধ করতে হবে। প্রত্যেক মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা শ্রম আইন অনুযায়ী স্ব-বেতনে ৪ মাস ছুটি দিতে হবে। কোন শ্রমিককে বেআইনিভাবে ছাটাই করা চলবে না। কোন শ্রমিক কারখানায় অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারখানায় ঢোকার সময় ১০ মিনিট ছাড় দিতে হবে। বহিরাগত জুট সন্ত্রাসী ও পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের হয়রানি করা চলবেনা। ৬ মাস চাকরির বয়স হলে বেসিকের হাফ, ১ বছর হলে ফুল বোনাস দিতে হবে। কোন শ্রমিককে গালাগালি ও গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। কোন শ্রমিকের নামে মিথ্যা মামলা নিয়ে হয়রানি করা যাবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণ করতে হবে। শ্রমিকরা কোন দাবি মালিকপক্ষকে জানালে তাদের উপর মারধর করে। তাদের কথামতো না চললে শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে। মালিকপক্ষ যখন তখন শ্রমিকদের ছাটাই করে। এমন বেআইনিভাবে ছাটাই চলবে না। কারখানায় শ্রমিকদের জন্য কোন চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় না। এ দাবিগুলো কার্যকর হলে কারখানায় শ্রমিকদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরী হবে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনী। তারা শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। এরই সাথে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ শুরু করেন।

এসময় শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, প্রায় ৬ মাস আগে কারখানায় বকেয়া ও অর্জিত ছুটির টাকা ফুল পরিশোধ, প্রতি মাসের ৭ তারিখে বেতন পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবি কারখানার মালিকপক্ষের কাছে পেশ করা হয়। ওই সময়ে তারা আমাদের দাবি পূরণে রাজি হলেও তা আর বাস্তবায়িত হয় নাই। মালিকপক্ষ মুখেই বলে দাবি মানবে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন দেখি না।

শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া পূরণে সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসন সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখবে বলে জানান মেজর আশরাফুল আলম অনিক। তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপানাদের দাবি-দাওয়া পূরণে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসুন। আপনাদের থেকে প্রতিনিধি জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি-দাওয়া পূরণে ব্যবস্থা নেবে। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী আপনাদের দাবি পূরণে কাজ করবে।

পরবর্তীতে শ্রমিকরা চাষাড়া সড়ক ছেড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায়। দুপুর সোয়া ৩টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শ্রমিকদের মধ্য থেকে ১০ জন প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বির সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন।

আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে শ্রমিদের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, আপনাদের দাবি দাওয়া নিয়ে কারখানার মালিক পক্ষের সাথে কথা হয়েছে। আপনাদের দাবি পূরণে আগে তারা রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারে নি। আমরা তাদের সাথে এ সপ্তাহে আলোচনায় বসবো। আগামী মাস অর্থাৎ, নভেম্বর মাস থেকে আপনাদের দাবি-দাওয়া কার্যকর হবে। আপনাদের কিছু সময় অপেক্ষা করুন। আমার সাথে আপনারা যেকোন সময় যোগাযোগ করতে পারবেন।

সবশেষ, বিকেল ৫টা ২৪ মিনিটে শ্রমিকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ত্যাগ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

RSS
Follow by Email