নগরভবন যে ‘বিএনপি-জামাত’ জ্বালিয়েছে এটা মেয়র বিশ্বাস করতে পারছে না: খান মাসুদ
#প্রশাসনের কাছে অনুরোধ ‘সুষ্ঠু তদন্ত হোক, দোষীদের রিমান্ডের মাধ্যমে সত্য উন্মোচন হোক’
#‘আমাকে দোষারোপ করা মানে আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নগরভবনে ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় খান মাসুদের ২জন লোক জরিত ছিলো বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে মেয়র ড. সেলিনা হায়াৎ আইভী মন্তব্য প্রকাশের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। এদিকে ‘নগরভবনে বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা ভাংচুর করেছে এটা মেয়র আপা বিশ্বাস করতে পারছে না’ বলে মন্তব্য করেছে যুবলীগ নেতা খান মাসুদ। তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো আপাকে কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে।’
মেয়র আইভীর মন্তব্যের পর অবশেষে গণমাধ্যমের সাথে খান মাসুদ তার অবস্থান পরিস্কার করেন। নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের নামে যত হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে সেগুলো শুধু মাত্র বিএনপি জামাতের কর্মীরা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরও দাবি করেন, প্রশাসনকে সহযোগিতা করে বন্দরকে রক্ষায় আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে প্রহরীর মতো ছিলাম।
মেয়র আইভীর অভিযোগের বিষয়ে খান মাসুদ বলেন, ‘বিষয়টি শুনে আমি অনেক বিস্মিত হয়েছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার কর্মী ও এমপি শামীম ওসমানের সৈনিক। আমাদের এমপি শামীম ওসমান কখনো এমন নোংরা রাজনীতি করেন নাই, এবং আমাদের এই রাজনীতির শেখান নাই। সেদিন আমি বন্দর থেকে গিয়েছিলাম শহরে, কিন্তু আমাদের নেতা শামীম ওসমান ভাইয়ের মিছিল পাইনি। আমাদের যেতে দেরি হয়েছিল। আমরাও যখন মিছিল নিয়ে চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবে ছিলাম তখন শুনেছি বিএনপি-জামাত মন্ডলপাড়ায় তান্ডবলীলা চালাচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা তাদের ধাওয়া দেওয়ার জন্য আসি। সেদিন আমরা রাত আটটায় কর্মীদের নিয়ে বন্দর চলে আসি। নগর ভবন ভাঙচুরের ঘটনায় আইভি আপা যদি আমার নাম বলে থাকেন, তাহলে হয়তো তিনি ভুল করছেন। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করতে চাই, এই ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত হোক, এবং দোষীদের রিমান্ডের মাধ্যমে সত্য তথ্য উন্মোচন হোক। আমি আইভি আপাকে অনুরোধ করবো, আপনি সঠিক তদন্ত করে দেখেন, এটা বিএনপি-জামাত ছাড়া আর কারো কাজ হতে পারে না। আইভি আপা ‘আমি খান মাসুদকে’ আপনি ভুল বুইঝেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি খান মাসুদকে দোষারোপ করেন, তাহলে আপনি আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করলেন। আপনি খবর নেন, আমি বন্দর থানা পাহারা দিয়েছি, আমি বন্দরের মাঠে ছিলাম। বন্দরের মানুষের জান-মাল রক্ষার্থে আমি সর্বদা তাদের পাশে থেকেছি। আপনি জায়গায় জায়গার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ গুলো দেখেন, আমরা আটটার সময় বন্দর চলে এসেছি। আর আমরা যখন রাইফেল ক্লাবের সামনে, তখন শুনেছি শামীম ওসমান ভাই জামাত বিএনপিদের ধাওয়া দিয়েছে। সেদিন বন্দর থেকে আমির ও জোসেফ এর নেতৃত্বে অনেক ছেলে-পেলেই গিয়েছিল। আমি মেয়র আইভিকে এবং প্রশাসনকে অনুরোধ করতে চাই, আপনারা তদন্ত করেন। শুধু শুধু আমাকে দোষারোপ করে আওয়ামী লীগের ক্ষতি কইরেন না, এটা মেয়র মহাদয়ের কাছে আমার অনুরোধ।’
যুবলীগের এই নেতা বলেন, ‘সেদিন হামলায় মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়, ২নং গেট পুলিশ ফাঁড়ি, নগর ভবন, র্যাবের গাড়ি, পিআইবি অফিস, পাসপোর্ট অফিস সহ বিভিন্ন জায়গায় তারা ভাঙচুর চালিয়েছে। এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য এবং বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি অকার্য দেশ হিসেবে তুলে ধরার জন্য। সেদিন যদি শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান এবং আজমির ওসমান মাঠে না নামতেন তাহলে, হামলাকারীরা সারা নারায়ণগঞ্জকে জ্বালিয়ে দিতে।’
এক প্রশ্নের জবাবে খান মাসুদ আরও বলেন,‘ সারাদেশের মতো বন্দরে ও জামাত-বিএনপি জ্বালাও পড়াও তাণ্ডব করতে চেয়েছিল। প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তায় এবং আমরা জনতা ঐক্যে গড়ে রাজপথে ছিলাম । শামীম ওসমান ভাই আমাকে অনেক পছন্দ করেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। তাই হয়তো, আমার প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আমার নাম নেওয়া হচ্ছে। মেয়র আইভি হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না যে,‘ বিএনপি-জামাত’ নগর ভবন জ্বালিয়েছে। আপনি ভিডিও ফুটেজ দেখলে বুঝতে পারবেন এটা আসলেই বিএনপি জামাতের কর্মীরা নগর ভবনকে জ্বালিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জেও ১৯ জুলাই সন্ধায় দফায় দফায় সংর্ঘষ হয়। সংর্ঘষে নগরভবনের ভিতরে ব্যাপক ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। পরেরদিন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নগরভবন পরিদর্শন করেন। এছাড়ারও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুও পরবর্তিতে নগর ভবন পরিদর্শন করেন।