ধর্ষণ মামলায় খালাস পেলেন মামুনুল হক
# মামলার বাদী শারীরিক পরীক্ষা করাতে রাজি হননি : আইনজীবী
# ৩ এপ্রিল মিডিয়াকর্মী যারা সম্পৃক্ত ছিলেন,জবাবদিহি করতে হবে: মামুনুল হক
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল’র সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম এই রায় ঘোষনা করেন। এ সময় মামুনুল হক আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের ভারপ্রাপ্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. রোমেল মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাঁকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এ কে এম ওমর ফারুক নয়ন জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছিল। আদালতকে তাঁরা বলেছিলেন যে পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক যোগসাজশে সংঘটিত হয়েছে। এই মামলার বাদী শারীরিক পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। কারণ, তিনি স্বীকার করেছেন, মামুনুল হক তাঁর বৈধ স্বামী। একই সঙ্গে বাদীর ছেলে সাক্ষ্য দিতে এসে বলেছিলেন, তাঁর মা মামুনুল হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের তুলে এনে আটকে রেখে বলপ্রয়োগ করে মামলা করানো হয়েছিল।
রায় ঘোষণার পর মামুনুল হক জানায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে বসেছিলো বিগত স্বৈরাচারী দুশ্চরিত্রা শেখ হাসিনা। একজন মানুষের চরিত্র হরণ করার চেষ্টা করা অবশ্যই কোন চরিত্রবান মানুষের কাজ হতে পারে না। তিনি আমার চরিত্র হরণ করার চেষ্টা করেছেন এবং গোটা রাষ্ট্র যন্ত্রকে তিনি ব্যবহার করেছেন। নির্মোহ বর্বরভাবে তিনি আমার পরিবারকে মিথ্যা মামলা ও হত্যার ভয় দেখিয়ে পুরো পরিবারকে ধ্বংস করার পায়তারা করেছেন। আল্লাহপাক আমাকে তার সেই ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত করেছেন। বিচার ব্যবস্থা তাদের সচ্ছতা রক্ষা করেছেন ও এই ধরণের মিথ্যা মামলা থেকে আমাকে খালাস দিয়েছে। এজন্য আমি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তারা আমার জন্য দোয়া করেছে। আইনজীবীরা আমার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিছু আওয়ামীপন্থী আইনজীবী বাদে বাকি সবাই আমাকে শান্তনা জুগিয়েছেন সাহস জুগিয়েছে।
তিনি আরও বলেন,মানুষের ভালোবাসায় আমি আপ্লুত, স্বৈরাচার চেয়েছিলো মানুষের কাছ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে। তাদের সেই ষড়যন্ত্রেই মানুষ আমাকে ভালোবাসছে, ভালোবাসতে আরম্ভ করেছে। মানুষের এই ভালোবাসা আমি যাতে দেশের স্বার্থে, ইসলামের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারি। সেই দোয়া আমি প্রত্যাশা করি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মামুনুল হক বলেন, মিডিয়ায় যারা কাজ করেছেন, তারা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফ্যাসিবাদি সরকারের ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র বাহক হলেও আমি আশা করবো। আগামী দিনে সকলে নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন, এবং যাতের মাধ্যমে ব্লাকমেইলিংয়ের কাজ হয়েছিলো সেগুলো ভবিষ্যতে করবেন না। আমার ৩ এপ্রিলের ঘটনা যে সকল মিডিয়াকর্মী নামক যে সকল সন্ত্রাসী যারা আমার উপর হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। অন্যান্যদের পাশাপাশি তাদেরকেও এই ঘটনায় জবাবদিহি করতে হবে। কাজেই আওয়ামী সন্ত্রাসী যুবলীগ, ছাত্রলীগের পাশাপাশি তাদের রেসপন্সারদের মিডিয়ার নাম ব্যবহার করে যারা মিডিয়ার সচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আমি তাদেরকে মিডিয়া অঙ্গন থেকে সকল মিডিয়া হাউজকে বহিষ্কার করার জন্য আহব্বান জানাবো।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। এ সময় পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রাখে। এরপর ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মামুনুলকে। পরে এ ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।
এদিকে চলতি বছরের ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে জামিন আবেদন করলে তৎকালীন বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর থেকে তিনি সোনারগাঁ থানার এই ধর্ষণ মামলায় জামিনে রয়েছেন।