শনিবার, জুলাই ২৬, ২০২৫
Led02রাজনীতি

দেশ চালাতে হলে অনেক নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত বলিষ্ঠ ভাবে নিতে হবে: সাইফুল ইসলাম

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়াকর্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, আপনি কি রাজনৈতিক দলগুলোকে এভাবেই ছেড়ে দিচ্ছেন? একটি দেশ চালাতে হলে অনেক নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত বলিষ্ঠ ভাবে নিতে হবে। আপনি যেভাবে মবের ওপর নির্ভর করছেন সেটাই সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার পেশাদারী ভাবে তৎপর থাকলে, গোয়েন্দা রিপোর্ট থাকলে গোপালগঞ্জের ঘটনা সংঘটিত হতো না। এতোজন মানুষকে হতাকান্ডের শিকার হতে হতো না।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণঅভ্যুন্থানের বর্ষপূর্তী উপলক্ষে ‎শহীদ স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিপ্লবী ওয়াকর্স পার্টির আয়োজেন এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

এসময় তিনি আরও বলেন, ৩০ লক্ষ ৪৫ হাজার মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে গেছে। কর্মসংস্থান কমেছে, বেকারত্ব বেড়েছে। সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে, কিন্তু লড়াইটা হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বৈষম্য দূর করার বিরুদ্ধে তারা কোন সংস্কার কমিশন করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সরকার ধারণ করতে পারেনি। তারা বলেছিল রাজনীতি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করবে, কিন্তু সে বৈষম্যের চেতনা তারা ধারণ করতে পারেনি। বাংলাদেশের গত ৫৩ বছরের ইতিহাসে এত জনসমর্থন নিয়ে অন্য কোন সরকার ক্ষমতায় আসেনি। সকল রাজনৈতিক দল, সকল শ্রেণী পেশার মানুষ সমর্থন যুগিয়েই এই সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। কিন্তু আফসোস হচ্ছে, ডক্টর ইউনেসের সরকারের সেই সমর্থনকে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবের নাম দিয়ে তারা সারাদেশে একটি মব সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই নারায়ণগঞ্জে যারা গণঅভ্যুত্থান করেছে তারা এই এক বছরে ভালো নাই। যারা দেশ থেকে লক্ষ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের টাকা ফেরত আনার কোন কার্যকর ভূমিকা এই সরকারের কাছে থেখে দেখেনি। ইস্ট ইন্ডিয়া ব্যাংকের মত এ দেশকে যারা লুটপাট করেছে সেই সন্ত্রাসদের ধরার কোন পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। শুধু দুদক নামের এক প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য কয়েকটি ব্যবসায়ীদের নামে নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে ।

ওয়াকর্স পার্টির কেন্দ্রীয় এই নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো হাইকোর্টের বিচারপতিকে আটক করা হয়নি। এই প্রথম কোন প্রধান সাবেক বিচারপতিকে আটক করা হলো। এই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর তাকে আটক করা হয়েছে। আটকের কারণ হলো বিচারপতি তার শাসনামলে এমন কিছু রায় দিয়েছেন যা বিতর্কিত। সে রায়গুলো শেখ হাসিনার দুঃশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য বা সাংবিধানিকভাবে জায়েজ করার জন্য সহযোগিতা করেছে। সে বিচারকদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছেন। বিচারকরা যে কাজগুলো করেছে সেই হিসাবে তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে কিন্তু সাবেক প্রধান বিচারপতির নামে মামলা হয়েছে খুনের মামলা। অনেক সাবেক আমলা ও সাংবাদিকদের খুনের মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। সরকার যে দলকে কোলে পিঠে করে তৈরি করছে, সেই তরুণদের দলে এখন দাবি করছে এই সরকারের মধ্যে ব্যক্তিগত কারণে কিছু উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যারা দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। সরকারি দলের দাবি করার পরও সেই উপদেষ্টারা কিভাবে দায়িত্বে থাকে? রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র কখনো প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াই এক বছর সেই কথাটি চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করেছে। আমরা যত সংস্কারের বিষয়গুলোতে সবগুলো রাজনৈতিক দল একমত হয়েছি। আমি আশা করব জুলাইয়ের পর ৫ই আগস্ট যেদিন শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছিলো ছিল সেই দিন জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে। গত পরশু আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেছে। আমরা বলেছি আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে কমান্ডারকে পরিবর্তন করতে চাই না কিন্তু আপনাকে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা সরকারকে বলেছি আপনাদের উপদেষ্টার মধ্যে যারা গত এক বছরের ন্যূনতম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি, তাদেরকে অব্যাহতি দিন বা বরখাস্ত করুন। সকল রাজনৈতিক দল সরকারের কাছ থেকে সমান সম্মান পাবে। কিন্তু আপনারা যদি কোন বৃহত্তর দলের মদত নিতে চান তাহলে আপনাদের দ্বারা জাতীয় নির্বাচন করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য উঠে এসেছে যে এই গোপালগঞ্জের ঘটনার সামাল দিতে সরকারকে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এছাড়াও ওই দলকে এদিক সেদিক নিয়ে যাওয়ার জন্য সাময়িকভাবেও প্রোটেকশন দেওয়া হচ্ছে। যাতে কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এই টাকাগুলো জণগনের টাকা। আপনি যেভাবে একটি দলকে গড়ে তুলছেন, সেখানে সাময়িক প্রটেকশন দিয়ে নিয়ে আসা যাওয়াটা কোন রাজনৈতিক চর্চা না। দুঃশাসন একটি দল এবং একটি জাতিকে কতটা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে পারে সেটা প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনা, কারণ হাইকোর্টের বিচারপতি থেকে বায়তুল মোকাররমের খতিব পর্যন্ত পালিয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়গুলোর মধ্যে একমত সেগুলো আলাপ আলোচনা করে তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করুন। আজকের এই সভা থেকে হয়তো আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উত্থাপন করছি না, কিন্তু দেশ চালাতে যদি আপনার ব্যর্থ হন এবং আপনাদের কার্যক্রম যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উত্থাপন করতে পারে।

RSS
Follow by Email