দেশি গরুর দাপটে আউয়ালের ঘাটের গরুর হাট: ইজারাদার রাশেদ’র নেতৃত্বে সুব্যবস্থা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: আর মাত্র ক’টা দিন পরেই ত্যাগের মহিমা নিয়ে হাজির হচ্ছে ঈদুল আযহা। এই পবিত্র উৎসবকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর যেন নতুন জীবন পেয়েছে। প্রথমবারের মতো এখানে বসেছে জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট, যা আউয়ালের ঘাট থেকে কাশীপুর খাল সংলগ্ন মাঠ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের নেপথ্যে আছেন অভিজ্ঞ ইজারাদার সাংবাদিক মো. রাশেদ এবং এর সার্বিক পরিচালনায় রয়েছেন শাখাওয়াত হোসেন বাবু। তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের হাট শুধু পশুর মেলাই নয়, যেন পরিণত হয়েছে উৎসব, নিরাপত্তা আর সুব্যবস্থার এক অনন্য প্রদর্শনীতে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের নির্বিঘ্নে কেনাবেচার সুযোগ করে দিতে হাট কর্তৃপক্ষ এবার নিরাপত্তার দিকে দিয়েছে বিশেষ নজর। ছিনতাই বা অন্য যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে হাটে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, সার্বক্ষণিক মাইকিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সতর্ক করা হচ্ছে, যা হাটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গরুর ব্যবসায়ীদের জন্য হাট কর্তৃপক্ষ নজিরবিহীন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। গরুর খাবারের পানি-পাত্র থেকে শুরু করে সব ধরণের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পশুদের যত্ন নিতে পারছেন এবং ক্রেতারাও স্বাস্থ্যবান পশু বেছে নিতে পারছেন।
এবারের হাটে ভারতীয় গরুর অনুপস্থিতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। তারা আশা করছেন, এতে দেশি গরুর চাহিদা বাড়বে এবং ভালো দাম পাওয়া যাবে। তবে, ক্রেতারা জানিয়েছেন যে, বর্তমানে গরুর দাম কিছুটা বেশি। সামনে এই দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। তবুও, হাটের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং নিরাপত্তায় তারা সন্তুষ্ট। এই হাটের আকর্ষণীয় গরু হলো ‘কালাচান’। ইতোমধ্যে গরুটির দাম উঠেছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
গরু ব্যবসায়ীরা জানায়, আমাদের গরু আমরা খুব যত্ন করে লালন পালন করেছি। ঘাসসহ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে এদের বড় করেছি। তাই এই গরুর নিসিন্দেহে মানুষ নিবে। হাটের পরিবেশ অনেক ভালো। আমরা এবার যে দাম প্রত্যাশা করছি তার কাছাকাছি দাম বলছে ক্রেতারা এটা বেশ ভালো লাগছে। অনেক শিল্পপতিরা গরুর খামার করে রাখতো কিন্তু ৫ আগস্টের পর সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমাদের এবার গরু কিছুটা সংকট। বাজার দেখে মনে হচ্ছে শেষে এবার গরু ঘাটতি হয়ে যাবে।
হাটে ঘুরতে আসা সিনহা আক্তার আনিশা নামে এক শিশু জানায়, বাবার সাথে ঘুরতে এসেছি, ভালোই লাগছে। অনেকগুলো গরু দেখেছি তার মধ্যে একটা বেশী ভালো লেগেছে, কিন্তু ওইটার দাম অনেক বেশী। গরুর হাটে দেখলাম গরু লাফালাফি করছে, শিং দিয়ে গুতো দিচ্ছে। আজকে চলে যাচ্ছি আবার আসবো কাল হাটে ঘুরতে।
বাবার হাত ধরে গরুর হাট ঘুরছে ৯ম শ্রেনীতে পড়া কিশোরী আফরিন। তিনি জানায়, বাবার সাথে আসছি গরুর হাটে। অনেকটা ভালো লাগছে। লাল, সাদা ও কালো কালারের গরু দেখলাম। আমার লাল গরু অনেক পছন্দ। তাই এবারও বাবাকে বলেছি লাল গরু কিনতে।
ক্রেতারা জানায়, গত বছরের তুলনায় এবার দাম একটু বেশী। কয়েকটা গরু দাম করে দেখলাম তুলনামূলক একটু বেশীই দাম চাচ্ছে। কয়েকদিন পর বুঝা যাবে দাম কেমন হবে আসলে। অনেক বড় হাট তাই সব গরুর দাম জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
দর্শনার্থীরা জানায়, বিশাল বড় গরুর হাট দেখতে আসলাম। মেয়েকে নিয়ে এসেছি সে গরুর হাট দেখতে চাইছে, তাই আসলাম। এছাড়া গরুর হাটের পরিবেশ দেখে বেশ ভালোই লাগছে।
ইজারাদার সাংবাদিক মো. রাশেদ বলেন, আমাদের এই হাট প্রায় ১ কিলোমিটারের মতো দীর্ঘ। এখানে ছোট-বড় ও মাঝারি সব ধরণের গরু পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে এই হাটে। এছাড়া আমরা আলাদা নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেছি ও একটি উপ কমিটি তৈরী করেছি। এখানে ১০ লাখ থেকে ৫০ হাজার টাকার গরু পাওয়া যাবে। এই হাটে সর্বনিন্ম হাসলির ব্যবস্থা করে রেখেছি। কেউ যদি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করতে চায় সেটার ব্যবস্থাও আমরা করেছি। আমাদের এই হাটে এতো পরিমান গরু আসছে আমরা চাপ সামলাতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এটা আসলে ব্যবসা না এটা আমরা সেবা হিসেবে গ্রহন করেছি। এখান থেকে যে টাকা আসবে সেটা আমরা এলাকার উন্নয়নে কাজ করবো। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার দাম কম। কারণ সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তাই ব্যবসায়ীরা বুজতে পারছে না আসলে আগের মতো বেচাকেনা হবে নাকি বেশী হবে। এছাড়া আমরা এবার ইন্ডিয়ান গরু হাটে তুলবো না, পাশাপাশি ক্রেতাদের দেশী গরু কেনায় উৎসাহীত করছি। আমাদের হাটে দুই ধরণের চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা রেখেছি। এখানে ব্যবসায়ীদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পাশাপাশি পশু ডাক্তারও রেখেছি।
কাশীপুর গরুর হাট এবারের ঈদে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্যই একটি আদর্শ কেনাবেচার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ফলে এই হাটে ঈদ কেনাকাটা নিঃসন্দেহে আরও আনন্দময় হবে।