বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
Led01বিশেষ প্রতিবেদন

দূষিত নারায়ণগঞ্জের বাতাস, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

# বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা : সিভিল সার্জন
# কল-কারখথানার মালিকরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে: রফিউর রাব্বি
# বায়ু দূষণে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে যাবে: তরিকুল সুজন
# দূষণ রোধে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা একশন নিচ্ছি: পরিবেশ অধিদপ্তর

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় অন্যতম নাম ঢাকা। আর এই শহরের পাশ্ববর্তী জেলা ‘প্রাচ্যের ডান্ডি’হিসেবে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ। নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে এই অঞ্চলে মানুষের জীবনযাত্রার মানে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ঘনবসতিপূর্ণ এই জেলায় কর্মসংস্থানের জন্য দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসে বসবাস করেন। অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে নারায়ণগঞ্জের অবদান অপরিসীম। অথচ বায়ু দূষণে ক্রমেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘রিয়াল টাইম একিউআই’র তথ্যমতে, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর বা বায়ুর মান ১৮০। বায়ুর এই মানকে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর একদিন আগে বায়ুর মান ছিল ২৪৩। ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, বায়ু দূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।

সচেতন মহল বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই বায়ু দূষণে ভুগছে নারায়ণগঞ্জ। ইট-ভাটা, পরিবেশ দূষণ করে এমন ক্ষতিকারক পদার্থ সৃষ্টিকারী কল-কারখানা, সড়কে চলাচলরত গাড়ির সংখ্যা বাড়ার সাথে দূষণ আরও বাড়ছে। যার ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রশাসনকে শক্ত অবস্থানে থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বচ্ছতার সাথে আইন প্রয়োগ করে এবং জনসচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।

এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে ইট-ভাটা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। এর উপর সড়কে মেয়াদ উত্তীর্ণ অনেক গাড়ি চলাচল করছে। এই গাড়ি থেকে প্রতিনিয়ত কালো ধোয়া বের হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট থেকে ইট-ভাটা বন্ধের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জে ইট-ভাটা বন্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো রয়েছে, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন জায়গায় টাকা পয়সা দিয়ে কার্য-কালাপ চালিয়ে যাচ্ছে। মেয়দউত্তীর্ণ যেসকল গাড়ি চলছে, তারা বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন, পুলিশকে ম্যানাজ করে সড়কে চলাচল করছে। এইখানে প্রশাসনের সততা ও স্বচ্ছতা না থাকে তাহলে পরিবর্তন আনা সম্ভব না। জনগণকেও এই বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। জনগণ যদি এই সকল বিষয়ে জোড়ে-সোড়ে আওয়াজ তুলে তাহলে দূষণের মাত্রা কমে আসবে।

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা‘র সমন্বয়ক তরিকুল সুজন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ। এই অঞ্চলে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। স্বাভাবিক বা মডারেট বায়ুর মান যখন প্রায় দ্বিগুণের অধিক চলে যায়, সেটা নারায়ণগঞ্জের নাগরিকদের জন্য অনেক ভয়াবহ। জেলার নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছেন শ্রমজীবীরা। নারায়ণগঞ্জের অর্থনীতির মূল ভিত্তি শ্রমজীবী মানুষ। তারা বায়ু দূষণ জনিত রোগে আক্রান্ত হয়, তবে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে যাবে। বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ শহরে যে পরিমাণ গাছ-গাছালি থাকার কথা সেই পরিমাণ নেই। সড়কের তুলনায় অধিক পরিমাণে পরিবহন চলছে। যার ফলে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ক্রমেই এই নগরী বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে উঠছে।

সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে সড়ে আসা সম্ভব। নারায়ণগঞ্জের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির দায়-দায়িত্ব তাদের। নারায়ণগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তর যথাযথ কোন উদ্যোগ নেয় নি। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সাথে বসা, সমাজের মানুষদের মাঝে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, দূষিত বায়ু শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এইক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের কিছু নিয়ম মানা উচিত। প্রথমত,অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। দ্বিতীয়ত, ঘর থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং ধুলাবালি যুক্ত এলাকা ও ঘিঞ্জি এলাকায় চলাচল পরিহার করতে হবে। শীতের সময়ে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে, এর উপর বায়ু দূষণের কারণে এর মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের একিউআই বা বায়ুমান স্ট্যান্ডার্ড মানের চেয়ে অনেক বেশি। এই অবস্থা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি,পরিবেশ দূষণের দায়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা একশন নিচ্ছি। বায়ু দূষণকারী কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা নারায়ণগঞ্জে মনিটরিং করছি। কারখানা কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছি। বায়ু দূষণ ও পরিবেশন দূষণ রোধে আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করছি।

RSS
Follow by Email