সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
Led03অর্থনীতিজেলাজুড়েবিশেষ প্রতিবেদন

দুর্নীতি মুক্ত না.গঞ্জ গড়তে দুদকের কাছে সচেতন মহলের যে প্রত্যাশা

#একা দুর্নীতি দূর করা সম্ভব না, প্রয়োজন সবার সহযোগিতা: দুদক উপপরিচালক

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দেশের অর্থনীতিতে নারায়ণগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এ জেলাতেই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জুনের ৬ তারিখ দুদকের আয়োজনে এক গণশুনানিতে ২৮ টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৫১ টি অভিযোগ উঠে আসে। তিতাশ গ্যাস, ডিপিডিপি, বিভিন্ন উপজেলা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ যাচাইয়ের দায়িত্ব নিয়েছে দুদক। প্রতিটি অভিযোগের জন্য ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দুদক। সচেতন মহলের প্রত্যাশা, দুদকের মাধ্যমেই এই জেলা থেকে দুর্নীতি এবং অনিয়মকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব।

একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দুর্নীতি দমন করতে দুদকের উপর আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু। তিনি বলেন, মাত্র কিছুদিন আগেই দুদক এই জেলায় তাদের কার্যালয় খুলেছে। তারা ইতিমধ্যেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের কাজ শুরু করেছেন। তাদেরকে একটু সময় দিতে হবে। দুদকের যদি পর্যাপ্ত সময় পায় তাহলেই তারা আশানুরূপ ভাবেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারবে। এ জেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলমান দুর্নীতি এবং অনিয়ম রোধ করতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা করছি। দুদক মূলত দুর্নীতি দমন এবং প্রতিরোধ করে। যদি দেশ থেকে দূর্নীতি ও অনিয়ম কমে আসে তাহলে এমনিতেই অপরাধ কমে আসবে। তবে শুধু দুদক নয় এখানে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, দুদককে দূর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স পলিসি নিয়ে কাজ করতে হবে। দুর্নীতি কে করলো সেটা কখনো যেন তদন্তে উপর প্রভাব না ফেলে। সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। ক্ষমতাসীন দলে কেউ বা সাধারণ জনগণ সবার ক্ষেত্রে সমান ভাবেই তদন্ত করতে হবে। এর সাথে জনগণকে সাহসী হতে হবে যাতে দূনীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে। আমি যখন গণশুনানির দিন ভুতুরে বিল নিয়ে অভিযোগ দিলাম তখন একজন সাংবাদিক এবং প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হয়েও আমাকে ২ বার হয়ে ভাবতে হয়েছে। সাধারন মানুষ তো সরকারি কোন দপ্তর বা কর্মকর্তার বিষয়ে অভিযোগ যানাতে চায় না। তাই জনসাধারণকেও সাহসী হতে হবে।

জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, জেলার দুর্নীতি ও অনিয়মমহ নানা বিষয়ে দুদক কাজ করছে। এই জেলায় একসময় ছিল দুদকের কার্যালয় ছিলো কিন্তু কোন কারণবসত সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার চালু করা হয়েছে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের হিসেবে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার দুদকে কাছে প্রত্যাশা এই জেলা থেকে দূর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধ করতে হবে। বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তার দূনীতির কারণে জনগণ তাদের হাতে জনগণ তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পরে। তবে দুদক যদি সেই জায়গাগুলোতে কাজ করে তাহলেই এই নারায়ণগঞ্জকে দূনীতি মুক্ত করা সম্ভব। এখানে দুদকের সাথে প্রশাসনকেও কাজ করতে হবে।

জেলা কমিউনিস্ট পাটি (সিপিবি) সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, দুদক সাধরণত দুর্নীতির দমনের কাজ করে। কিন্তু সরকারি কাজে নিয়োজিত যারা আছে তারো দূনীতি করলে সেটা দুদকের তালিকায় কম আসে। এটা শুধু জেলা নয় সারা দেশের চিত্র। কিছু দিন আগেও পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার দুর্নীতি বিষয়ে দুদক প্রশাসন কাজ করছে। কিন্তু এই দুর্নীতি করে তারা সম্পদের পাহার করেছে চাকরি করা অবস্থায়। আমাদের নারায়ণগঞ্জেও এমন ক্ষমতাসীন অনেক লোক আছে যারা জীবনে ব্যবসা করে নাই না। কিন্তু ক্ষমতায় আছে বলে তাদের দিন দিন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। দুদককে তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। একজন নাগরিক হিসেবে দুদকের কাছে আমি আশা করবো যে দুর্নীতি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, এতে সে সরকারি চাকরিজীবি হোক বা ক্ষমতাসীন দলের কেউ।

দুর্নীতি দমন কমিশনের লক্ষ এবং অগ্রগতি বিষয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাঈনুল হাসান রওশনী বলেন, দূনীতি দমন করা আমাদের ভিশন এবং মিশন। দুদক প্রধানত দুর্নীতি দমন এবং প্রতিরোধ করে। তবে এখানে একা দুদক কাজ করে সম্পূর্ণ দূর্নীতি মুক্ত করা যাবে না। এখানে সবাইকেই নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। দুদকের সাথে এখানে সচেতন মহল, সাংবাদিক, প্রশাসন সবাইকেই কাজ করতে হবে। আমরা মানুষদের মাঝে সচেতনতাও সৃষ্টি করছি। আমরা নতুন প্রজন্মের মাঝে সততা এবং নিষ্ঠা প্রচার করতে বিভিন্ন স্কুলে সততা স্টোর কার্যক্রম পালন করি। এ কার্যক্রমে স্কুলের একটি দোকান স্থাপন করা হয় কিন্তু কোন দোকানদার রাখা হয় না। ছাত্ররা তাদের সততার পরিচয় দিয়েই কিন্তু তার পণ্যটি কিনে একটি নির্ধারিত জায়গায় মুল্যটি রেখে যায়। আমাদের এই কার্যক্রমের মাধ্যমেই তারা সততার চর্চা করছে। আবার যে সাংবাদিকরা বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সংবাদ করছে তাদেরকেও আমরা বিভিন্ন সময় পুরষ্কার দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ভিশন এবং মিশন হলো এই জেলা থেকে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ করা। গণশুনানির দিন প্রায় ২৮ প্রতিষ্ঠান এবং একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। আমরা মোট অভিযোগ পেয়েছি ৫১ টা। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা বিভিন্ন তদন্ত এবং ফলোআপ করছি। গণশুনানীর অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তিতাস গ্যাস কতৃপক্ষ দালালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গতকাল ও তিতাস গ্যাস, আমরা এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এক অভিযান পরিচালনা করেছি যেখানে ৪ টি কারখানার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জরিমানা করা হয়েছে। আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়েও কাজ করছি। যে সেবা গ্রহীতারা অভিযোগ করেছেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও আমরা বিশেষ নজরদারি রাখছি। গণশুনানিতে যতোগুলো অভিযোগ এসেছে আমরা আশাবাদি এই মাসের মধ্যেই সকল অভিযোগের কাজ শেষ করতে পারবো।

RSS
Follow by Email