দাবি মানার পরও শ্রমিকদের আন্দোলন, ফতুল্লায় রহিমআজিজ কারখানা বন্ধ ঘোষণা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নতুন শ্রমিকদের কাজে অসন্তুষ্টির কারণে বাছাই করে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেয় কারখানা কতৃপক্ষ। তাদের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় শ্রমিকরা। এক পর্যায় কারখানা ভাংচুর চালায় তারা। শ্রমিকদের ক্ষোভের প্রেক্ষিতে তাদের দাবি মেনে নেয় কতৃপক্ষ। তবে দাবি মেনে নেওয়ার পরও ৩য় দিনের মতো কারখানায় ভাংচুর, অন্য শ্রমিকদের কাজে বাধাসহ মারধরের ঘটনাও ঘটায় গুটি কয়েকজন শ্রমিক।
সোমবার (৩ মার্চ) সকালে ফতুল্লার ভোলেইল এলাকার রহিমআজিজ কারখানায় ওই ঘটনা ঘটে। এ সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে কারখানাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকদের দাবি, কারখানায় তিন মাসের কম সময় যারা কাজ করছে তাদের ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেয় ম্যানেজমেন্ট। এরপরই তারা অন্য শ্রমিকদের কাজ করতে বাধা দেয়, যদি কেউ কাজ শুরু করে তাহলে তাকে মারধর করে। এসময় ম্যানেজমেন্ট কথা বলতে আসলে তারা কর্মকর্তার ওপর হামলা করে ও তাদের ধাওয়া দেয়। মূলত ৩ মাসের কম যারা আছে তাদের ছাঁটাই করায় এমন ভাঙচুর করেছে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ২ জন এ হামলার প্রতিবাদ করায় ওদেরকে মারধর করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। তারপর সেনাবাহিনী এসে তাদের উদ্ধার করে।
কারখানার লাইনম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা আজকে নিয়মিত সময় কাজ করতে আসছি। এ সময় যাদের ছাঁটাই করা হইসে তারা এসে আমাদের কারখানা থেকে বের করে দিতেসে। আমাদের কেউকে কাজে বসা দেখলেই মারধর করে। সকালে সবাই কাজ শুরু করলে নতুনদের মধ্যে সুমন, হাসিব, মেহেদীসহ আরো বেশ কয়েক জন মিলে আমাদের ওপর এমন মারধর চালায়। মারধরের ভয়ে অনেকে পালিয়ে যায়। আমিও পালিয়ে যেতে চাইলে ওরা আমাকে দেয়ালের ওপর থেকে ধাক্কা দেয়, নিচে পড়ে আমার পা ভেঙে যায়। পরে আমাকে ধরে নিয়ে ভবনের পিছনে এর চিপায় নিয়ে আটকে রাখে। পরে সেনাবাহিনী এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওদের হামলায় প্রায় অন্য শ্রমিক ও কর্মকর্তাসহ ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছে।
কারখানার ম্যানেজার আফজাল উদ্দিন বলেন, আমাদের কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়। তারপরও তারা শ্রমিকদের কাজে বাধা দেয় ও আমাদের কর্মকর্তাদের ওপর ও হামলা করে। শ্রমিকদের সাথে আমরা যখন কথা বলতে আসি তখন আমাদের মারধর করে ও ধাওয়া দেয়। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আমরা মাইকিং করে তাদের শান্ত হওয়ার জন্য বলি। তারা আমাকে মারার উদ্দেশ্যে আবারও ধাওয়া দেওয়া আমরা পালিয়ে আসি। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় মামলা করা হয়েছে।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকদের কাজে কারখানা কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হওয়ায় প্রায় দেড়শত কর্মীকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এদের সবার কর্মবয়স ৩ মাসের কম। সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গুটি কয়েকজন শ্রমিক ম্যানেজমেন্টের এর সাথে খারাপ ব্যবহার ও মারধর করে। ১ই মার্চ এই ঘটনার পর ২ তারিখ কর্মীরা কাজ করতে আসলে আবারও কিছু শ্রমিক বাধা দেয়। সেখানেও শ্রমিকদের কাজ করতে নিরুৎসাহিত করে। তারা ভাঙচুর করে এবং শ্রমিকদের জন্য রাখা বেতন লুটপাট করে। সে দিন দুই জন ম্যাজিস্ট্রেট এসে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে, এবং তাদের দাবি মানা হবে বলে আশ্বস্ত করে। আজ আবারও সাধারণ শ্রমিকরা কাজে আসলে সেই কয়েকজন বাধা দেয়, এসময় প্রতিবাদ করায় ২ জন সাধারণ শ্রমিকদের মারাত্মক মারধর করে গুম করে ফেলে। সাথে তারা আজও কারখানার ভাঙচুর শুরু করে। এঘটনায় কারখানার ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি যৌথ অভিযান করে আহত ২ জনকে উদ্ধার করে। এমন অবস্থায় কারখানার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এঘটনায় এখনো কেউকে আটক করা হয়নি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।