শনিবার, আগস্ট ২, ২০২৫
Led01বিশেষ প্রতিবেদন

থামছে না মৃত্যুর মিছিল, না.গঞ্জে জুলাই মাসে ১২ লাশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পুরনো শত্রুতা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা, কোথাও আবার দোকান ভাড়া চাওয়াটাই হয়েছে মৃত্যুর কারণ। কোন ভাবেই যেন নারায়ণগঞ্জে থামছে না মৃত্যুর মিছিল। এ বছরের শুধু জুলাই মাসে জেলা বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১২টি লাশ। যার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন ও আত্মহত্যায় ২জন বাদে বাকি ঘটনায় রয়েছে হত্যার অভিযোগ। কোন ঘটনায় পরকীয়া সন্দেহে স্বামীর হাতে নিহত হয়েছে স্তী, কোন ঘটনায় আবার ছেলে হয়েছে বাবার মৃত্যুর কারণ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ঘটনা বিশ্লেষণে জুলাই মাসের ১২টি লাশ উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করা হলো।

বকেয়া ভাড়া চাওয়ায় দোকান মালিককে হত্যা:
৩০ জুলাই বুধবার, আড়াইহাজারে মাহমুদপুর ইউনিয়নে বিএনপির অফিস ভাড়া চাওয়ায় দোকান মালিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত দোকান মালিক হলেন ওই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া (৫৭)। নিহতের ছেলে ও স্থানীয়রা জানায়, দোকানের বকেয়া ভাড়া চাওয়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতারা জাহাঙ্গীরকে মারধর করে। এসময় তাকে উদ্ধার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের ও স্থানীয় বিএনপির ৫ নেতাকে সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সোনারগাঁয়ে গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার :
৩০ জুলাই বুধবার, সোনারগাঁয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সোনাখালী এলাকায় এক গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত গৃহবধু হলেন একই গ্রামের আলাউদ্দিনের মেয়ে শোভা আক্তার (১৯)। নিহতের মা মানছুরা বেগম জানায়, তার মেয়ের সাথে একই এলাকার রায়হানের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। মঙ্গলবার ও বুধবার দু’ দফায় তাদের ঝগড়া হয়। সকালে কাজের প্রয়োজনে বাড়ির লোকজন বাহিরে যায়, দুপুরে বাসায় আসলে মেয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। নিহতের মা দাবি করে, বালিশের চাপা দিয়ে তার মেয়েকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ।

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা:
২৫ জুলাই শুক্রবার, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকায় পরকীয়া সন্দেহে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। নিহত গৃহবধূ হলেন ইতি আক্তার (২৮)। এ ঘটনায় তার স্বামী ও পেশায় গাড়িচালক বিল্লালকে (৩৫) আটক করা হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, নিহত দম্পতি মিজমিজি এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। শুক্রবার রাতে তাদের ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ শুনা যায়। ইতির পরকীয়া প্রেমের সন্দেহ কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে বিল্লাল রুটি বানানোর বেলন দিয়ে ইতির মাথায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই ইতির মৃত্যু হয়।

সোনারগাঁয়ে ট্রাকচাপায় যুবক নিহত:
২২ জুলাই মঙ্গলবার, সোনারগাঁয়ে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় ড্রেজার শ্রমিক মহিদুল শেখ (২৪) নিহত হয়েছে। নিহত যুবক হলেন সোনারগাঁয়ের বস্তল এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত ৮টায় কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন মহিদুল। এসময় আড়াইহাজারগামী একটি মালবাহী ট্রাক তাকে চাপা দিলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর পথচারীরা সেই ট্রাকটিকে তালতলা এলাকায় আটক করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।

দুই দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের ২ আত্মহত্যা:
২১ জুলাই ও ১৯ জুলাই আড়াইহাজারের হাইজাদী ইউনিয়নের শালমদী গ্রামে একই পরিবারের দুই সদস্যের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, শালমদী গ্রামের আ. মালেকের ছেলে আলী হোসেন (২৭) ও মৃত মহিজউদ্দিনের ছেলে হারুণ (৫০)। পুলিশ ও স্থানীরা জানায়, সোমবার রাতে এক সন্তানের জনক আলী হোসেন (২৭) বিষাক্ত ট্যাবলেট সেবন করে আত্মহত্যা করেন। তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এর আগের দিন রবিবার একই বাড়িতে হারুণ বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এলাকাবাসীর ধারণা, দুটি আত্মহত্যার ঘটনাই পারিবারিক কলহের জেরে ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় দুটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লিফটের নিচে থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার:
১৮ জুলাই শুক্রবার, সিদ্ধিরগঞ্জের ৩নং ওয়ার্ডের নিমাইকাশারী এলাকায় এক নির্মাণাধীন ভবনে লিফটের গর্ত থেকে জনি (২২) নামের এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবক হলেন সিদ্ধিরগঞ্জের বাগমারা এলাকার শুকুর আলীর ছেলে। পুলিশ জানায়, নিহতরা ৫-৭ জন মিলে অত্র এলাকায় চুরি-ছিনতাই করতো। চুরির টাকার ভাগ নিয়ে দ্বন্দ হলে ওই গ্রুপের কয়েকজন মিলে জনিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এপর তাকে লিফটের গর্তে ফেলে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা।এরপর কয়েকটি শিশু নির্মাণাধীন ভবনে খেলতে গিয়ে মরদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার করে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

সিদ্ধিরগঞ্জে সৎ মাকে হত্যা, মুন্সিগঞ্জ থেকে দুই ভাই আটক:
১৪ জুলাই সোমবার, পুরনো বিরোধের জেরে সিদ্ধিরগঞ্জে সৎ মাকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ অভিযোগে ঘটনার একদিন পর মঙ্গলবার দুই ভাইকে মুন্সিগঞ্জ থেকে আটক করে র‌্যাব-১১। আটককৃতরা হলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের পশ্চিম কলাবাগ (সাইলো গেইট) এলাকার ইসমাইলের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার ভাই নজরুল ইসলাম (৩২)। র‌্যাব জানায়, পুরনো বিরোধের জের ধরে সৎ ভাইয়েরা অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। এসময় নিহত দিনু বেগম গালাগাল বন্ধ করতে বললে অভিযুক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি ও চরথাপ্পড় মারতে শুরু করেন। এসময় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শহীদ রিয়া গোপ স্টেডিয়ামের সামনে অজ্ঞাত যুবকের লাশ:
৬ জুলাই রবিবার, ফতুল্লার শহীদ রিয়া গোপ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের (২৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, নিহতের দুই হাতে ও গলায় বাঁধাধরার দাগ এবং ডান চোখ আঘাতের কারণে ফোলা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্য কোথাও যুবকটিকে হত্যা করে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। পরবর্তিতে ভোর ৬টায় পথচারীরা লাশ দেখতে পেলে পুলিশে খবর দেয়।

স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মসমর্পণ:
৪ জুলাই শুক্রবার, বন্দরের র‍্যালি আবাসিক এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর হাতে নিহত হয় গৃহবধূ বিজলী আমেনা (২৯)। ঘটনার পর অভিযুক্ত স্বামী মো. ইমরান (৪৫) নিজেই বন্দর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ জানায়, ঘাতক ইমরান একই এলাকার তপন চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি পূর্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং বিবাহিতও ছিলেন। প্রায় ৭-৮ মাস আগে বিজলী আমেনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর পর ইমরান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। শুক্রবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ইমরান মাছ কাটার বটি দিয়ে বিজলীকে কুপিয়ে আহত করে। নিহতের পরিবার ও স্থানীরা বিজলীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আড়াইহাজারে ছেলের হাতে বাবা খুন:
৪ জুলাই শুক্রবার, আড়াইহাজারে বিশ্বনন্দী পূর্বপাড়া এলাকায় বাবাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইয়াসিন (২২) নামের এক ছেলের বিরুদ্ধে। নিহত মাহবুল হক (৫৬) একই এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, শুক্রবার বাবার কাঝে ফোন কেনার জন্য টাকা চায় ইয়াসিন। বাবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইয়াসিন ক্ষিপ্ত হয়ে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মাহবুল হককে আড়াইহাজার স্বাস্থ্য ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে দীর্ঘদিন ধরে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং কোনোভাবে বাঁধন ছুটে যাওয়ায় সে তার বাবাকে আঘাত করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থেকে ইয়াসিনকে আটক করা হয়েছে।

কাভার্ডভ্যান-লরির মাঝে চাপা পড়ে শিশু নিহত:
৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় কাভার্ডভ্যান ও তেলের লরির মাঝে চাপা পড়ে এক স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশু হলো চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও আদমজী এলাকার বাসিন্দা আরাফাত (১২)। ঘটনার পর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎক শিশুকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত আরাফাতের বাবা জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে একটি বাসে করে বাবা-ছেলে চিটাগাং রোড এলাকায় নামেন। এসময় হঠাৎ আরাফাত হাত ছেড়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করলে ঘটনা ঘটে।

RSS
Follow by Email