ত্যাগ ও শোক নিয়ে ৬৩ বছরে খোকন সাহা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ১১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা এড. খোকন সাহার শুভ জন্মদিন। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি এত গুরুত্বপুর্ন একটি পদের দায়িত্ব এতদিন যাবৎ পালন করে যাচ্ছেন। তবে ১৫ বছর বয়স থেকেই জন্মদিন পালন করা বন্ধ করে দিয়েছেন প্রবীন এই আওয়ামী লীগ নেতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা তাকে শুভেচ্ছা জানালেও এই দিনটিতে এড. খোকন সাহার কোন উদযাপন নাই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই থেকে আগস্ট মাসটি শোকের মাস হিসেবে মাসব্যাপী শোক পালন করা হয়। আর তাই ১৯৭৫ পরবর্তী ১৯৭৬ সাল থেকে শোকাবহ আগস্ট মাসে নিজের জন্ম হলেও সেই জন্মদিন উদযাপন করেন না খোকন সাহা।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালের ১১ আগষ্ট নগরীর ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের পাশে অবস্থিত মাতৃসদন হাসপাতালে জন্মগ্রহন করেনে এড. খোকন সাহা। নগরীর গলাচিপা ডি.এন রোড এলাকায় কাটে তার শৈসব, কৈশোর এবং যৌবন ও পৌড়ত্ব। ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন দুরন্ত এবং মেধাবী। গলাচিপা সরকারি প্রাইমারি স্কুল দিয়ে শুরু হয় এড. খোকন সাহার শিক্ষা প্রাপ্তি। পরে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় পাশ করে ভর্তি হন নারায়লগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে। তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করা শুরু করে এম. কম (ব্যবস্থাপনা) শেষ করেন। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ আইন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আইনজীবী পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯০ সালের ৭ই অক্টোবর এড. খোকন সাহা আইনজীবী হিসেবে শুরু করেন তার পেশা জীবন। ২০০৩ সালে সনদ প্রাপ্ত হন হাই কোর্ট ডিভিশনের। সাধারণত পায়জামা পাঞ্জাবি পরতেই সাচ্ছন্দ বোধ করেন তিনি। ব্যক্তিগত কোন জীবন বলে তার কিছু নেই, সব সময় যা ছিলো তা হলো শুধুই রাজনীতিতে।
তার রাজনৈতিক তথ্য মতে, ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু খোকন সাহার রাজনীতি। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরে রাজনীতিতে আসেন খোকন সাহা। নগরীর গলাচিপা গোয়ালপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে শিকাড় হন পুলিশি নির্যাতনের। দমে যাননি তিনি।
১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরি মধ্যে ১৯৮০ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ বানিজ্য শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। পরবর্তীতে শহর ছাত্রলীগের সদস্য হন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার যখন মার্শাল ‘ল’ জারি করে তখন ওইদিন সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে এরশাদ বিরোধী সর্বপ্রথম যে ১২ জন মিলে মিছিল বের করেছিল সেই মিছিলে খোকন সাহাও ছিলেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারনে তৎকালীন এরশাদ সরকার খোকন সাহার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। যার মধ্যে একটি হত্যা মামলা ও একটি বিস্ফোরক মামলা হয়। এসব রাজনৈতিক মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
জানা গেছে, খোকন সাহা এরশাদের আমলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৯২ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে ১৭ বছর তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গণভবনে সারাদেশের আওয়ামীলীগের নেতাদের নিয়ে সভা হয়। ওই সভাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও খোকন সাহাকে সেক্রেটারি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে এড. খোকন সাহা জানান, ১৯৭৫ সালে যেই সময় বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলো, সে বছর আমি আমার শেষ জন্মদিন পালন করছি, কারন এই মাসটা হলো বাঙ্গালী জাতির হৃদয়ে রক্ত ক্ষরনের মাস এ মাসে আমি কোন জন্মবার্ষিকী পালন করি না। ওই দিন যদি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা না করতো তাহলে আমি মনে হয় রাজনীতিও করতাম না। বঙ্গবন্ধুর হত্যার কারণ খুজঁতে গিয়েই আমি ছাত্রলীগে যোগদান করি। আমি যে দিন থেকে রাজনীতিতে যোগ দিসি ,ওই দিন থেকে আমি ভেবে নিছি ,যে আর কোন দিন আমি আমার জন্মদিন পালন করবো না।
স্মৃতিচরণ করে তিনি বলেন, আমার মনে পরে, আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ঘুম থেকে উঠে রেডিওতে মেজর ডালিমের কণ্ঠে ‘স্বৈরাচার শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’ শুনতে পেলাম। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড আমি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি নাই। আমি তখন নগন্য কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগে যোগদান করি। ১৯৭৬ সালে আমি খোকন সাহা, হান্নান আহমেদ দুলাল, ভজন দাস বর্তমানে এস এম পারভেজ, খাজা রহমান, শংকর সাহা, জামাল হোসেন কালা, ইকবাল বুচা, অনাথ দাস (বর্তমানে মৃত), মাসুম আহমেদ, নসরু, ইউসুফ আহমেদ ননী, মৃতুঞ্জয় রায় (বর্তমানে ভারত প্রবাসি), শহীদ নজরুল ইসলাম বাচ্চু, হোসেন ভান্ডারি (বর্তমানে মৃত), শুক্কুর মিয়া এই ১৪ জন মিলে জব্বার মৌলভী হুজুরকে ডেকে মালেক ভাইয়ের দোকান গোল্ডেন মাইক থেকে মাইক ভাড়া করে, বঙ্গবন্ধুর প্রথম মিলাদ মাহফিল নারায়ণগঞ্জের গোয়াল পাড়ায় আয়োজন করি। তৎকালীন সময়ে পুলিশি টহলের মধ্যেও আমরা মিলাদ মাহফিলটি শেষ করি। পরে পুলিশ আমাদের খোজ করতে এসে, এলাকাবাসীর কাছে জানতে চায় কার মিঁলাদ মাহফিল করছে। তখন এলাকাবাসী আমাদেরকে বাচাঁনোর জন্য বলে, ‘এখানে কি হয়েছে আমরা তা জানি না’।
তিনি আরও বলেন, এখন রাজনীতি অনেকটা বাণিজ্যিক। লোভ ত্যাগ করে মানুষের জন্য রাজনীতি করতে হবে। যারা ছাত্রলীগ করে তাদের প্রতি আমার ম্যাসেজ: সততা ও নিষ্ঠার সাথে থাকো। নেতা হওয়ার জন্য না, মানুষের জন্য কাজ করো।’ ‘আমি কোর্ট যা টাকা কামাইছি। একটা ছোট অংশ পরিবারের জন্য রাইখা বাকী সব নেতাকর্মী ও দলের জন্য খরচ করছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে রাজনীতিতে ঢুকেছি। খুনিদের বিচার হইছে, আমাদের টার্গেট কিন্তু শেষ হইছে। যেদিন নেত্রী বলবেন সেদিন থেকে অবসরে চলে যাবো।’ দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র জন্য সবাই দোয়া করবেন, নেত্রী যেন দীর্ঘায়ু লাভ করে। আমার জন্মদিনে আমি আমার ঈশ্বরের কাছে সকল সময় এই প্রার্থনা করি।