ডিসি’র উদ্যোগে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু ‘মান্তাহার’ পেল ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত নারায়ণগঞ্জের এক অসহায় শিশুর পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তাঁর মানবিক উদ্যোগে মান্তাহার মাহমুদ নামের নয় বছর বয়সী শিশুটি একটি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার উপহার পেয়েছে, যার মাধ্যমে তার প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ থাকা পড়াশোনা পুনরায় চালুর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মান্তাহার মাহমু নগরীর ইসদাইর এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক এনামুল হক ও মিতু বেগম দম্পতির সন্তান।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, একসময় একদম সুস্থ থাকা মান্তাহার হঠাৎ হাঁটাচলা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। চিকিৎসকেরা জানান, সে Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) নামের এক জটিল ও বিরল রোগে আক্রান্ত। এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়। দরিদ্র দম্পতি এনামুল হক মাসে মাত্র ১৬ হাজার ৫০০ টাকা আয় করে সংসার চালান, ফলে উন্নত চিকিৎসার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তারা হতাশ হয়ে পড়েন।
অসুস্থতার কারণে শিশুটির মাদ্রাসায় যাওয়া প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ ছিল। সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর অসহায় এই দম্পতি গত ২২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাৎকালে মা মিতু বেগমের কোলে অসুস্থ সন্তানের অসীম মমতা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত জেলা প্রশাসক। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি শিশুটির চলাচলের জন্য একটি ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক নিজ কার্যালয়ে মান্তাহার ও তার পরিবারকে ডেকে নেন এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজ হাতে অত্যাধুনিক হুইলচেয়ারটি উপহার দেন।
হুইলচেয়ারটি পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মান্তাহার। সে হাসিমুখে বলে, “আমি অনেক খুশি। ডিসি অফিসের নিচে রাস্তায় অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে চালিয়েছি। এখন আমি মাদ্রাসায় যেতে পারবো। সারাক্ষণ মায়ের কোলেও থাকতে হবে না।”
মান্তাহারের মা মিতু বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “ডিসি স্যার তাঁর কথা রেখেছেন। উনি সত্যিই খুব মানবিক মানুষ। আমরা অনেক খুশি। আমার সন্তানের চিকিৎসার জন্য সবাইকে পাশে আসার অনুরোধ করছি।”
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সরদার জেলা প্রশাসকের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি শুধু বলেন না, কাজ করে দেখান। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে তিনি ইতিমধ্যেই নানা স্মার্ট উদ্যোগ নিয়েছেন।”
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “শিশুটি দেখতে খুব সুন্দর। আজ যখন দেখলাম, সে হাসিমুখে হুইলচেয়ার চালাচ্ছে, তখন সত্যিই ভালো লেগেছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের বাইরের আলো-বাতাসে থাকার সুযোগ যেন আমরা কখনো বন্ধ না করি, এই আহ্বান জানাই।”
