টাইফয়েডকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত না.গঞ্জ: ১২ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পেইন শুরু
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবার কোমর বেঁধে নেমেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধে একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ১৮ দিনব্যাপী ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’। জেলার ৫টি উপজেলায় (সিটি কর্পোরেশন এলাকা বাদে) ৫ লাখ ৮৭ হাজারের বেশি শিশুকে এই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ক্যাম্পেইনের বিস্তারিত পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহাম্মদ মুশিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ১২ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১৮ দিন এই ক্যাম্পেইন চলবে।
টিকা প্রদানের প্রক্রিয়াকে দুটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে, প্রথম ১০ দিন (১২-২১ অক্টোবর): প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৪ লাখ ৮৫৮ জন শিক্ষার্থীকে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ১ ডোজ টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তী ৮ দিন (২২-২৯ অক্টোবর): স্কুল-বহির্ভূত ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৭ জন শিশুকে কমিউনিটি পর্যায়ে (আউটরিচ ইপিআই কেন্দ্রে) টিকা প্রদান করা হবে।
সিভিল সার্জন নিশ্চিত করেন, কোনো শিশু যদি কোনো কারণে বাদ পড়ে, তবে তারা পরবর্তীতে উপজেলা হাসপাতালের স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে টিকা নিতে পারবে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সফল করতে জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মোট ২,১৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ১,০৫৬টি অস্থায়ী ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ২ জন টিকাদান কর্মী ও ৩ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি কমিউনিটি কেন্দ্রে ১ জন টিকাদান কর্মী ও ২ জন স্বেচ্ছাসেবকসহ ৩ জনের দল কাজ করবে।
কর্মসূচি শুরুর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যেই মাইকিং, প্রচারপত্র বিতরণ ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করেছে। টিকা নিয়ে যেন কোনো ভুল তথ্য না ছড়ায়, সেজন্য জেলা প্রশাসক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং জেলা তথ্য অফিসসহ সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয় তৈরি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে একাধিক সমন্বয় সভা সম্পন্ন হয়েছে।
বিশেষ করে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেলার সব ইমামকে জুমার খুতবার আগে জনগণকে টিকা বিষয়ে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৮ অক্টোবর ওলামা-মাশায়েখ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে একটি সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক প্রধান অতিথি ছিলেন। এছাড়া জাতীয় পর্যায়েও টেলিভিশন, সংবাদপত্র, মোবাইল মেসেজ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।
ক্যাম্পেইন চলাকালে যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল এবং প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান দৃঢ়তার সাথে বলেন, “টাইফয়েড একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সঠিক সময়ে টিকা নিলে শিশুরা এ রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে। আমরা আশা করি, সবার সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ জেলাকে শতভাগ টিকা কাভারেজের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. শিউলি আক্তার, ডা. আফরোজা আক্তার পলি, ডা. জাহানারা আক্তার, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল হক প্রমুখ। প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ডা. খোরশেদুল ইসলাম খান এবং সঞ্চালনা করেন জেলা ইপিআই সুপারিনটেনডেন্ট মো. লুৎফর রহমান।