জাল নোটের শিকার হচ্ছে নগরবাসী
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ঈদ উদযাপনে নানা পণ্য কেনাকাটায় মেতে থাকেন নগরবাসী। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করেন সকল পণ্যের ব্যবসায়িরা। এই ব্যস্ততাকে পুজি করে নিচ্ছে একটি চক্র। ভিরের মাঝে পণ্যের বদলে দিচ্ছেন জাল টাকা। এই জাল টাকার শিকার হচ্ছেন কখনো বিক্রেতা আবার কখনো ক্রেতা। আসল এবং জাল টাকার মধ্যে পার্থক্য ধরতে না পারায় প্রতারিত হচ্ছেন নগরবাসী।
মূলত এই চক্রটি যেসব মার্কেট বা দোকানে বেচাকেনার ভিড় জমে, সেখানেই এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। লেনদেনের সময় ব্যাংকে জাল নোট ধরা পরলেই হয় বিপত্তি। জাল নোট পাওয়া মাত্রই পুলিশকে অবগত করে ব্যাংক কর্মকর্তারা। এতে বিপাকে পরেন ভিকটিম গ্রাহকরা।
জাল টাকা প্রতিরোধ বিষয়ে গতবছরও আইনের খসড়া চুরান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেই খসড়া আইনে বলা হয়েছে, জাল টাকা সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। একই সঙ্গে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির দ্বিগুণ বা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত যেটি বেশি, সে পরিমাণ জরিমানা করা হবে। এ সম্পর্কিত গুজব ছড়ালে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ টানবাজার শাখার (নারায়ণগঞ্জ প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চ) ক্যাশ ইনচার্জ ইউসুফ আলম রারি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা সতর্ক আছি। আমাদের ব্যাংকের প্রতিটি ব্রাঞ্চে জাল নোট শনাক্তকরণ যন্ত্র আছে। আমরা গ্রাহকদের থেকে টাকা নিলে সেটা পরীক্ষা করে নেই। তা ছাড়া এখন ১ হাজার টাকার লাল নকল নোট গুলো বেশি হতে আসে অন্যান্য নোটের তুলোনায়। প্রতিবছরই জাল নোট কম-বেশি হাতে পরে। রমজান মাসের শেষের দিকে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমন কাউকে জাল নোটসহ পেলে পুলিশকে অবগত করতে হবে। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে আমরা যখন বুঝি যে এখানে গ্রাহক প্রতারক নয়, প্রতারিত হয়েছেন সেখানে আমরা জাল নোটটাকে পাঞ্চ বা নষ্ট করে ফেরত দেই। আমরা আমাদের গ্রাহকদের সেবা নিরাপত্তায় সর্বদা কাজ করছি।
একই ব্যাংকের আরেকজন কর্মকর্তা সেলিম মিয়া বলেন, আমরা দেখলেই বুঝতে পারি এটা জাল নোট কিনা। আগে নোটের দুপাশে দাগ স্পর্শ করলে বোঝা যেত। কিন্তু এখন সেটাও নকল হচ্ছে। আসল ও নকল নোট ধরার উপায় হিসেবে টাকার রং ও টাকার জন্য ব্যবহিত কাগজ দেখলে বুঝতে পারি। আর যদি কোন গ্রাহক প্রতারিত হয় তাহলে আমরা তার কাছেও জাল নোট শনাক্ত করার বৈশিষ্ট তুলে ধরি। এতে সেই গ্রাহকও পরবর্তিতে সতর্ক হয়।
নগরীর ১নং গেট এলাকার রিভার ভিউ মার্কেটের ব্যবসায়ি ও সালাম ফ্যাশনের মালিক সালাম সত্তার বলেন, জাল নোট মাঝে মাঝে ধরার উপায় থাকে না। গত দুদিন আগেও ছেলে ও এক কর্মীকে দোকানে বসিয়ে রেছে আমি গিয়েছিলাম এশার নামাজে। দোকানে এসে দেখি ক্যাশে একটা ৫০০ টাকার নোট। নোটটা দেখেই সন্দেহ হয়। পাশের দোকানের আসলাম ভাইরে দেখিয়ে নিশ্চিত হলাম যে এটা জাল নোট। নোটটা সাথে সাথে ছিড়ে ফেলেছি। এই নোট নিয়ে আমি ব্যাংকে গেলে আমারে পুলিশে দিতো। শুধু শুধু বিনা কারণে হয়রানির শিকার হতাম।
দীগু বাবুর বাজারের খায়ের স্টোরের মালিক আবুল খায়ের বলেন, সারাদিনের হিসাবে সন্ধার পরই কাস্টোমারের ভির বেশি থাকে। কয়েকদিন আগেই আমারে ২০০ টাকার একটা জাল নোট দিয়েছিলো আমারদের বাজারের এক লোক। আমি নেওয়ার সময় ভিরের কারণে খেয়াল করি নাই। রাতে হিসাব করার সময় সেই জাল নোটটা পেয়েছি। ভাগ্য ভালো আমার দোকানে সিসি টিভি ক্যামেরা ছিলো। সেটা দেখেই আমি ওই লোককে পরের দিন ধরতে পেরেছি। এখন যে লোক আমাকে এই টাকা দিয়ে দিয়েছে তাকে আমি বহু বছর ধরে চিনি, সে এই কাজ করবে না। কিন্তু লোকসান তো হলো। যদিও পরে সে নকল টাকা নষ্ট করে আমাকে পাওনা পরিশোধ করেছে তবুও লোকটার তো লোকসান হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাইলাউ মারমা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, যদিও জাল নোট চক্রের পরিধি দিন দিন কমে আসছে। তবুও ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা সব সময়ই বিশেষ নজরদারি রাখছি। জাল নোট বিষয়ে কোন তথ্য পেলেই সাথে সাথে সেটার তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্ত এবং আটক করছি। এই ঈদে কেউ যাতে প্রতারিত না হয় সেই বিষয়ে আমাদের পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নগবাসীর কাছে আবেদন থাকবে আপনারা কোন জাল নোট পেলে আমাদের জানান। আমরা আপনাদের সব সময় পাশে আছি। বিভিন্ন মার্কেটে বেচা কেনার সময় সতর্ক থাকবেন। এছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তারা কোন জাল নোট পেলেই সেই বিষয় তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করছেন। পুলিশের হাত থেকে অপরাধীরা পার পাবে না।