জনসমাবেশে শক্তির প্রদর্শন করলো জেলা বিএনপি
# স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে তারা পায়ের তলার মাটি করতে চাচ্ছে: মির্জা আব্বাস
# সরকার সংস্কারের কথা বলে সময় নষ্ট করছে: আজাদ
# আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাবো না: মামুন মাহমুদ
# আপনারা জনসমর্থিত সরকার হতে পারেন, নির্বাচিত নন: গিয়াসউদ্দিন
# এখনো সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে: দিপু ভূঁইয়া
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার দাবিতে জনসমাবেশের আয়োজন করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নগরীর নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের উপর অস্থায়ী মঞ্চে এ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় জণসভায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীবের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহম্মেদ টিুট, কেন্দ্রীয় সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফ আহমেদ টুটুল, সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সোনারগাঁ বিএনপির সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, রেজাউল করিম, কাজী মনিরুজ্জামান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক, সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জণসভায় মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যারা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের এই চাওয়া উদ্দেশ্যমূলক। তাদের এই উদ্দেশ্য ষড়যন্ত্রমূলক। দেশে এখন অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আর এই ষড়যন্ত্র হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য। গ্রামে গঞ্জে অনেকের পায়ের তলার মাটি নেই, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে তারা পায়ের তলার মাটি করতে চাচ্ছে। আমরা আন্দোলন লড়াই করেছি গণতন্ত্র ও সংসদ নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য লড়াই করিনি। ঘোড়ার আগে গাড়িতে উঠতে হয় না। সরকার পতনের আগে ৩ আগস্ট শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করেছিলো। সেখানে অনেকেই বক্তব্য বলেছে, শেখ হাসিনার মরলেও নাকি তার সাথে আছে। অনেকে আবার বলেছে আমরা আপনার সাথে থাকতে চাই। সেই বক্তব্য দেওয়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এখনো ভাঙ্গা হয়নি। তাদের কেউকে গ্রেফতার করা হয়নি। যতদিন আপনারা সেই সবার বক্তব্য শুনে, তাদের সিন্ডিকেট না ভাঙ্গবেন তাদের গ্রেফতার না করেছেন ততদিন এই দ্রব্যমূল্য কমবে না। এই নারায়ণগঞ্জে অনেক কুলাঙ্গার আছে, যারা এখন ঘরে বসে আছে। আর ভারত থেকে নির্দেশ আসলে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ করে।ওরা বলে নির্বাচনের কথা যারা বলে তারা নাকি জাতির শত্রু। শেখ হাসিনা ১৫ বছর থেকেছিল, আপনারাও থাকেন, দেখেন পারেন কিনা। মানুষ স্বাধীন ভাবে কথা বলতে চায়। ’
নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার সংস্কারের কথা বলে সময় নষ্ট করছে, যা জনগণ আর মেনে নেবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিন বছর আগেই রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের জন্য ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। যারা সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের উচিত তারেক রহমানের দেওয়া সংস্কার পরিকল্পনা পড়ে দেখা। দেশের জনগণ একটি গণতান্ত্রিক সরকার চায়, যেখানে তারা ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের নেতাকে নির্বাচিত করতে পারবে। আপনাদের মান-সম্মান থাকতে থাকতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রূপরেখা দিন। বিগত ১৭ বছর ধরে বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে এসেছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল এই দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের চূড়ান্ত ধাপ। ‘শুধু দুই মাসের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন হয়নি, বরং ১৭ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এই স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে।’
অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, ‘আজ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ৫৭জন অফিসারসহ অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছিলেন। সেই হত্যা কান্ডের বিচারের দাবি করছি ও নিহত সেনা সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। গত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে আমাদের যে সকল নেতাকর্মীরা শাহাদাৎ বরণ করেছেন, গুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও ত্যাগের কথা স্বরণ করছি। আমরা গত ১৭ বছর তিনটি দাবিতে রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছি। সেই দাবির একটি ছিলো শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সেটি পূরণ হয়েছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিরোধের মুখে বিতারিত হয়েছে। আরও দুটি দাবি ছিলো, একটি ছিলো অর্ন্তবর্তী কালীন সরকারের মাধ্যমে একটি অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আরেকটি ছিলো আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। এখনো দুটি দাবি পূরণ হয়নি, সুতরাং আমরা আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না। তাই আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গিয়াসউদ্দিন সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা জনসমর্থিত সরকার হতে পারেন, কিন্তু নির্বাচিত সরকার নন। স্বৈরশাসনের সময় যারা অত্যাচার, লুটপাট ও অর্থ পাচার করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। এই বিচার নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে না। অল্প ১ মাসের আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন হয়নি। যখন আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় এবং সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নামে, তখনই স্বৈরাচার প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। অনেকদিন পর নারায়ণগঞ্জে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে জেলা বিএনপি সভার আয়োজন করেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতি যখন দিশেহারা ছিল, তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তবে এই বিজয়ের সাথে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের তুলনা হতে পারে না। বিএনপি সবসময় দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে এবং এখনও করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সরকার এই সংস্কারের কথা বলে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা আগে স্থানীয় নির্বাচন নাকি জাতীয় নির্বাচন দেবে।’
মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বলেন, ‘দেশের বাইরে গেলেও শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো দেশে সক্রিয়। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সরকারকে বলছি, অতি দ্রুত এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা সৃষ্টি করছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে দিচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়িত্ব হলো, এই অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা।’